এ যেন বীজ ও সারের অনন্য এক জাদুঘর

আব্দুল্লাহ আল-মামুন
আব্দুল্লাহ আল-মামুন আব্দুল্লাহ আল-মামুন ফেনী
প্রকাশিত: ০৬:০০ পিএম, ২৮ অক্টোবর ২০২৩

কৃষির মূল উপকরণ হচ্ছে বীজ। বীজ উদ্ভিদ জগতের ধারক ও বাহক। বীজই ফসল উৎপাদনে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। আবহাওয়া ও জলবায়ুর উপযুক্ততার কারণে বাংলাদেশ নানা জীববৈচিত্র্যে ভরপুর। তবে পরিবেশের পরিবর্তনের কারণে হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে জীববৈচিত্র্য। তাই ক্রমেই এই জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের দাবি জোরদার হচ্ছে।

এরই ধারাবাহিকতায় ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার পূর্ব চন্দ্রপুর মডেল ইউনিয়ন পরিষদে অবস্থিত ন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল টেকনোলজি প্রোগ্রাম ফেজ-২ এর সহযোগিতায় কৃষক তথ্য ও পরামর্শ কেন্দ্রে (ফিয়াক) গড়ে উঠেছে সিড ও সার মিউজিয়াম। এলাকায় চাষ করা হয় এমন কিছু বৈচিত্র্যময় ফসলের সঙ্গে কৃষক ও শিক্ষার্থীদের পরিচয়ের জন্যই এই প্রয়াস নেওয়া হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের একটি কক্ষজুড়ে এমন সব বিচিত্র ধান, পাট, সরিষা, বিভিন্ন রকমের ডাল ফসল, দানাদার ফসল ও তৈল জাতীয় ফসলসহ হরেক রকম শাক-সবজির বীজ ও সার নিয়ে তৈরি হয়েছে সিড ও সার মিউজিয়াম।

কক্ষের প্রবেশদ্বারের পাশের দেয়ালজুড়ে শেলফ। সেখানে থরে থরে সাজানো বীজ ও সারের বয়াম। বয়ামের গায়ে ট্যাগে লেখা বীজের বৈশিষ্ট্য। কোনটি উচ্চ ফলনশীল, কোনটি জিংক সমৃদ্ধ, কোনটি লবণাক্ত, খরা ও বন্যা সহিষ্ণু জাত, কোনটির ফলন কত আর জীবনকাল কতদিন। এর মধ্যে কোনোটি বিপন্ন, কোনোটি বিরল আবার কোনোটি বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির বীজ। সারের নাম ও উপাদান উদ্ভিদের কী কাজ করে সব মিলিয়ে এ যেন অনন্য এক বীজ ও সারের জাদুঘর।

এ কাজে নিয়োজিত আছেন পূর্ব চন্দ্রপুর ইউনিয়নের নয়নপুর ব্লকে কর্মরত উপ-সহকারী কৃষি অফিসার মো. আবদুল্লাহ আল মারুফ ও সহযোগী হিসেবে কাজ করেন উপসহকারী কৃষি অফিসার মো. আবদুল মান্নান।

আবদুল্লাহ আল মারুফ জানান, সিড মিউজিয়ামে রয়েছে ধানের জাতের মধ্যে বিআর ১০ (প্রগতি), বিআর ১১ (মুক্তা), বিআর ১৬ (শাহীবালাম), বিআর ২২ (কিরণ), বিআর ২৩ (দিশারি), বিআর ২৬ ( শ্রাবণী), ব্রি ধান ২৭, ২৮, ২৯, ৩০, ৩৪, ৪০, ৪১, ৪২, ৪৪, ৪৬, ৪৭, ৪৯, ৫০, ৫১, ৫২, ৫৮, ৬২, ৬৭, ৭১, ৭২, ৭৪, ৭৫, ৮০, ৮১, ৮৪, ৮৭, ৮৯, ৯২, ৯৩, ৯৪, ৯৫, ৯৬, ৯৮, বঙ্গবন্ধু ধান ১০০, ব্রি ধান ১০২, ১০৩, বিনা ধান ১০, ১৭ ও ২৫ সহ বিভিন্ন রকমের হাইব্রিড ও স্থানীয় ধানের জাত এবং বারি সরিষা ১৪, ১৭, ১৮ বিনা সরিষা ৯।

শাকসবজির মধ্যে রয়েছে লালশাক, পালংশাক, ডাঁটা শাক, পুঁইশাক, গীমা কলমি, পাটশাক, মূলা, বেগুন, ঢেঁড়শ, লাউ, মিষ্টিকুমড়া, চাল কুমড়া, শসা, করলা, শিম, বরবটি, খিরা, ধুন্দুল, চিচিঙ্গা, টমেটো, মরিচ, পেঁপেসহ বিভিন্ন ফসলের প্রায় ২০০ ধরনের বীজ ও সার নিয়ে গঠিত হয়েছে সিড ও সার মিউজিয়াম। যা কৃষক ও আগত শিক্ষার্থীদেরকে বিভিন্ন ফসলের বীজ ও সার চিনতে সহায়তা করবে।

নয়নপুর গ্রামের কৃষক আকবর হোসেন বলেন, এই সংগ্রহশালা কৃষকদের জন্য বড় ধরনের আশীর্বাদ। এতে কৃষকরা যেমন উপকৃত হচ্ছেন, পাশাপাশি নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা সংগ্রহশালাটি পরিদর্শন করে বিভিন্ন রকমের বীজ ও সার সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করতে পারবে।

পূর্ব চন্দ্রপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাসুদ রায়হান বলেন, সিড ও সার মিউজিয়ামটির সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য কোনো সহযোগিতার প্রয়োজন হলে অবশ্যই করা হবে।

পূর্ব চন্দ্রপুর ইউনিয়নের সন্তান ও নোয়াখালীর সুবর্ণচর বিএডিসির বীজ বর্ধন খামারের প্রকল্প পরিচালক কৃষিবিদ মো. আজিম উদ্দিন বলেন, সিড ও সার মিউজিয়ামের গুরুত্ব অনেক। এগুলো কৃষকদের প্রধান আকর্ষণ। এই সংগ্রহশালা কৃষকের উৎপাদনে সহায়তা করবে। আমি নিজে মিউজিয়ামটি পরিদর্শন করেছি।

দাগনভূঞা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিবেদিতা চাকমা জানান, তিনি মিউজিয়ামটি পরিদর্শন করেছেন। শিক্ষার্থী ও কৃষকের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

এফএ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।