খুলনা

আলু-পেঁয়াজের দামের লাগাম টানতে পারছে না কেউ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক খুলনা
প্রকাশিত: ০১:৪৭ পিএম, ২৮ অক্টোবর ২০২৩

খুলনায় আলু-পেঁয়াজের সরবরাহে কোনো ঘাটতি না থাকলেও প্রতিনিয়তই বেড়ে চলছে দাম। প্রশাসনের অভিযান চলমান থাকার পরও বিক্রি হচ্ছে না সরকার নির্ধারিত দামে। এদিকে নতুন আলু-পেঁয়াজ বাজারে আসার আগ পর্যন্ত দাম কমবে না বলেও ক্রেতাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়াচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

অন্যদিকে বাজার ভেদে ব্যপক ব্যবধানে বিক্রি হচ্ছে সবজি। ভ্যানের থেকে দোকানে ১০-২০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে সবজি। এ নিয়ে ক্রেতাদের মধ্যেও দেখা দিচ্ছে ক্ষোভ। সবজি বিক্রেতারা বলছেন, শীতের সবজির আমদানি বাড়ায় আগের চেয়ে কম দামে মিলছে ফুলকপি, বাঁধাকপি, বিটকপি আর মুলা। প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ না হলে ক্রমাগতভাবে কমবে এই সবজিগুলোর দাম।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (২৮ অক্টোবর) খুলনার বিভিন্ন বাজারঘুরে আলু-পেঁয়াজ আর অন্যান্য সবজির দামের এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

আলু-পেঁয়াজের দামের লাগাম টানতে পারছে না কেউ

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন: ‘আমাদের এখন না খেয়ে থাকা ছাড়া কোনো উপায় নেই’

নগরীর মিস্ত্রিপাড়া বাজারের মসলা বিক্রেতা রেজাউল করিম বলেন, বর্তমানে খুলনার বাজারগুলোতে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা কেজি দরে। আগামীকাল থেকে দাম আরও বাড়বে। কারণ শুক্রবার বাজারে পেঁয়াজ কেনার সময় বড় ব্যবসায়ীরা বলেছেন, মোকামে দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। পাইকারি ১০০ টাকার ওপরে কিনতে হবে পেঁয়াজ। এতে করে খুচরা বাজারে ১১০ টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে দাম।

নিরালা বাজারের সবজি বিক্রেতা রাবেয়া খাতুন বলেন, পেঁয়াজ আর আলুর দাম শুধু বেড়েই চলেছে। খদ্দেরের কাছে বাড়তি দাম বললেই তারা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। অনেকের সঙ্গে ঝগড়াও লেগে যাচ্ছে বিক্রেতাদের। বর্তমানে আলু ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু কেন যে দাম বাড়ছে তা জানি না।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

আলু আর পেঁয়াজের দাম বাড়ার বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে নগরীর ময়লাপোতা বাজারের ক্রেতা হিমেল আহমেদ বলেন, গত সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজ কিনেছি ৯০ টাকা দরে। আজ বাজারে এসে দেখি ১০০ টাকা। দোকানি বলছে আগামীকাল আরও বাড়তে পারে। গত মাসে প্রশাসনের কিছু অভিযান হয়েছিল। কিন্তু এখন আর তাদের দেখা মিলছে না। ব্যবসায়ীরা নিজেদের ইচ্ছা মতো দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে।

আরও পড়ুন: বেড়েছে আলু-পেঁয়াজ-কাঁচামরিচের দাম, অপরিবর্তিত ডিম-চাল-ডাল-মুরগি

টুটপাড়া জোড়াকল বাজারের সবজি বিক্রেতা রানা ও রবিউল বলেন, খুলনার বাজারগুলোতে এখন শীতের সবজির আমদানি বেড়েছে। তবে পরিপুষ্ট না হওয়ায় অনেক ক্রেতা শীতের সবজি কিনতে চাইছেন না। আরও কিছুদিন গেলে শীতের সবজি বিক্রি বেড়ে যাবে।

বিজ্ঞাপন

আলু-পেঁয়াজের দামের লাগাম টানতে পারছে না কেউ

এই বাজারের আরেক সবজি বিক্রেতা মেরাজ মেম্বর বলেন, বর্তমানে শীতের সবজির দাম একটু কমেছ। তবে ভালো সবজি এলেই দাম আবারও বাড়তে পারে। গত সপ্তাহেও বাজারে শীতকালের সবজির মতই চড়া দামে বিক্রি হয়েছে বেগুন। তবে এখন ৯০ টাকার বেগুন ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দাম বাড়েনি শুধু পেঁপের। ২৫ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে পেঁপে। এছাড়া বিটকপি ৮০ টাকা, বাঁধাকপি ৩০ টাকা থেকে ৪০ টাকা, মূলা ৩০ থেকে ৫০ টাকা, করলা ৬০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৩০ টাকা, বরবটি ১০ টাকা বেড়ে ৪০ টাকা, পটল ৬০ টাকা, কচুর মুখি ৮০ টাকা, কুশি ৩০ টাকা, ঝিঙে ১০ টাকা বেড়ে ৫০ টাকা, উচ্ছে ৬০ টাকা, টমেটো ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এই ব্যবসায়ীরা আরও জানান, শাকের মধ্যে সবচেয়ে দাম বেড়েছে লাউ শাকের। এক কেজি লাউ শাক এখন ৬০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া লাল শাক ৪০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন: সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ১৫ টাকা বেড়েছে সবজির দাম

এদিকে মাছের বাজার এখনও মোটামুটি স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানিয়েছেন রূপসা বাজারের ব্যবসায়ীরা। তবে দোকানদারদের চেয়ে প্রায় সব পণ্যেই ১০/১৫ টাকা কমে সবজি বিক্রি করছেন ভ্যানের বিক্রেতারা।

এ বিষয়ে মিস্ত্রিপাড়া বাজারের সবজি বিক্রেতা গোলাম হোসেন বলেন, ভ্যানে করে যারা সবজি বিক্রি করে তারা কম দিতে পারে অনেক কারণে। তাদের কোনো খাজনা দিতে হয় না। নিজেদের ভ্যানে করে পাইকারি বাজার থেকে সবজি কিনে আনায় পরিবহন খরচ লাগে না। দোকান ভাড়াও দিতে হয় না। ফলে তারা কম দামে সবজি বিক্রি করতে পারে। কিন্তু আমাদের তো খাজনা, দোকান ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল দেওয়া লাগে। তাই দাম কমানো সম্ভব হয় না।

বিজ্ঞাপন

রূপসা বাজারের মাছ বিক্রেতা জাহাঙ্গীর মোল্লা জানান, বাজারে তেলাপিয়া মাছের দাম কমে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া পাঙাশ ২০০ টাকা, রুই ১৮০ থেকে ২৫০ টাকা, সিং মাছ ৪০০ টাকা, কৈ মাছ ২৫০ থেকে ৭০০ টাকা, শোল মাছ ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা, কাতলা ও মৃগেল ২০০ টাকা থেকে ২৫০টাকা, ভেটকি মাছ ৫০০, ৬০০ ও ৭০০ টাকা, টেংরা মাছ ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, পার্শে মাছ ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে সাধারণ চিংড়ি মাছে আগের মতই ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

আরও পড়ুন: রংপুরে বেড়েছে আলু-পেঁয়াজের দাম, কমেনি সবজির

তবে আলু আর পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. সেলিম বলেন, আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। দাম বৃদ্ধির খবর পেলেই অভিযান চালানো হয়। অভিযানের সময় আমাদের ব্যবসায়ীরা জানান, তারা সরকার নির্ধারিত দামেই আলু আর পেঁয়াজ বিক্রি করেন। কিন্তু পরবর্তীতে ক্রেতারা অভিযোগ করেন, তারা সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে অনেক বেশি দামে আলু আর পেঁয়াজ কিনছেন। ব্যবসায়ীরা চাতুরতার আশ্রয় নেন।

বিজ্ঞাপন

আলমগীর হান্নান/জেএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।