‘চোখ বন্ধ করলেই ভেসে আসছে ক্ষতবিক্ষত লাশ আর আহাজারি’
হঠাৎ বিকট শব্দে কিশোরগঞ্জের ভৈরব স্টেশনে অপেক্ষমাণ যাত্রীসহ পাশের এলাকার বাসিন্দারা চমকে ওঠেন। তার পরই শুরু হয় মানুষের ছোটাছুটি। শব্দ শুনে কেউ কেউ ছুটে যান ঘটনাস্থলে। সেখানে গিয়ে দেখেন দুই ট্রেনের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
ঘটনাস্থলের পাশের এলাকার একটি মাদরাসার শিক্ষক শরীফুল ইসলাম। তিনি বিকেলে মাদরাসায় বসেছিলাম। হঠাৎ বিকট শব্দ শুনে মাদরাসা থেকে বেরিয়ে শব্দের কারণ খুঁজতে গিয়ে জানতে পারেন ভৈরব রেলওয়ে স্টেশনের আউটার সিগন্যালের কাছে দুই ট্রেনের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। পরে দ্রুত দুর্ঘটনাস্থলে ছুটে যান।
আরও পড়ুন: মৃত্যুর খুব কাছ থেকে ফিরে এসেছি: বেঁচে যাওয়া দুই বোন
শরীফুল ইসলাম বলেন, সেখানে গিয়ে দেখি এক হৃদয়বিদারক ঘটনা। ট্রেনের দুই বগি উল্টে রেললাইনের পাশে পড়ে রয়েছে। পড়ে থাকা বগির ভেতর থেকে কান্না আর আহাজারি শুনতে পাই। তারা জীবন বাঁচানোর জন্য আর্তনাদ করছেন। এর মধ্য ট্রেনের অন্য বগিতে থাকা যাত্রীরা দ্রুত নেমে নিরাপদ জায়গায় চলে যান। এছাড়া যারা আহত হয়েছেন তারা রেললাইনের পাশে পড়েছিলেন। তখনো কেউ কাউকে উদ্ধার করেনি। ঘটনার আধাঘণ্টা পর উদ্ধারকারী দল ও প্রশাসন এসে মরদেহ ও আহতদের উদ্ধার করেন।
স্টেশনের পাশের এলাকার বাসিন্দা শিক্ষার্থী নাইমা বিনতে মাহবুব ভূঁইয়া বলেন, ট্রেন দুর্ঘটনায় অনেক পরিচিত মুখ হারিয়েছি। মর্মান্তিক ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতদের দেখে সারারাত দুই চোখের পাতা বন্ধ করতে পারিনি। চোখ বন্ধ করলেই ভেসে আসছে ক্ষতবিক্ষত লাশ আর আহাজারি। আর চারপাশ থেকে কানে ভেসে আসছে বাঁচাও বাঁচাও আর্তনাত ও অ্যাম্বুলেন্সের আওয়াজ। এমন মর্মান্তিক ঘটনা আর কখনো আমরা ভৈরববাসী দেখিনি। এই ঘটনাটির শোক সারাজীবন কালো স্মৃতি হিসেবে থাকবে।
স্থানীয় রেডক্রিসেন্ট কর্মী নাজমুল বলেন, এই ঘটনাটি ভৈরবের জন্য একটি কালো অধ্যায় হিসেবে লিপিবদ্ধ হয়ে থাকবে। এই দুর্ঘটনায় উল্টে যাওয়া ট্রেনের বগির নিচে অনেক মরদেহ চাপা পড়েছিল। এছাড়া অনেক মরদেহের বিচ্ছিন্ন অঙ্গ রেললাইনে পড়ে ছিল। সেসব মরদেহ উদ্ধারের জন্য ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের সহযোগিতা করেছি। এমন নির্মম ঘটনার সম্মুখীন আগে হইনি।
আরও পড়ুন: ভৈরবে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় তিনজনকে বরখাস্ত
ভৈরবের নাট্য ব্যক্তিত্ব মতিউর রহমান সাগর বলেন, এই ট্রেন দুর্ঘটনায় অনেক পরিবার হারিয়েছেন তাদের পরিবারের উপার্জন একমাত্র অবলম্বনকে। কত পরিবারের স্বপ্ন এক মুহূর্তেই শেষ হয়ে গেছে। তারা তাদের স্বজনদের হারিয়ে শোকে কাতর হয়ে পড়েছেন। এত বড় মর্মান্তিক দুর্ঘটনা আর কখনো দেখেনি ভৈরববাসী। ভৈরববাসী এই ঘটনায় নিহতদের করুণ পরিণতি দেখে বাকহীন হয়ে পড়েছে।
সোমবার (২৩ অক্টোবর) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ভৈরব রেলস্টেশনের আউটার পয়েন্টে এ দুর্ঘটনা ঘটে। পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, মালবাহী ট্রেনটি ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের দিকে যাচ্ছিল। একইসময় ভৈরব থেকে ঢাকায় যাচ্ছিল যাত্রীবাহী ট্রেন এগারো সিন্ধুর। ভৈরব রেলস্টেশনের আউটার পয়েন্টে ক্রসিংয়ে যাত্রীবাহী ট্রেনের শেষ দুই বগিতে ধাক্কা দেয় মালবাহী ট্রেনটি। এতে যাত্রীবাহী ট্রেনের কয়েকটি বগি দুমড়ে-মুচড়ে গিয়ে ১৭ জনের প্রাণহানি ঘটে।
রাজীবুল হাসান/এমআরআর/জেআইএম