ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’

ঝালকাঠিতে দেখা মেলেনি সূর্যের, বাড়ছে বাতাসের তীব্রতা

মো. আতিকুর রহমান মো. আতিকুর রহমান ঝালকাঠি
প্রকাশিত: ০৫:৪১ পিএম, ২৪ অক্টোবর ২০২৩

ঝালকাঠিতে ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’র প্রভাবে ভোর থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পড়েছে। সারাদিনেও সূর্যের দেখা মেলেনি। বাড়ছে বাতাসের তীব্রতা। এরই মধ্যে সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে জেলার নদ-নদীতে নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় জরুরি সভা করেছে জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসক ফারাহ গুল নিঝুমের সভাপতিত্বে ডিসি অফিসের সুগন্ধা হলরুমে বিকেলে এ সভা হয়।

আরও পড়ুন: ভোলার সব রুটের লঞ্চ চলাচল বন্ধ

এ সময় বলা হয়েছে, প্রাথমিকভাবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৬২টি আশ্রয়কেন্দ্র ও পুলিশ বাহিনী এবং মেডিকেল টিম। এছাড়া স্কাউট, রেড ক্রিসেন্টের সমন্বয়ে তরুণ-তরুণীর স্বেচ্ছাসেবকের টিম তৈরি করা হয়েছে। জেলার সব উপজেলায় খোলা হয়েছে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে তিনটি অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রাখা আছে। যেগুলো ঝালকাঠি সদরসহ তিন উপজেলার যেকোনো প্রান্তে চিকিৎসা সহায়তা দেবে।

আশ্রয়কেন্দ্রে সরবরাহ করা হবে শুকনো খাবারসহ পানি বিশুদ্ধিকরণ ট্যাবলেট, স্যানিটারি ন্যাপকিন, প্লাস্টিকের বালতি, অস্থায়ী ল্যাট্রিন, ছোট বড় পানির ট্যাংক।

জানা গেছে, রাজাপুর ও কাঁঠালিয়া ইউনিয়নের মঠবাড়ী, আমুয়া, শৌলজালিয়া ইউনিয়নে বিষখালী নদীর স্থায়ী বেড়িবাঁধ না থাকায় ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী সময়ে অতিরিক্ত পানিতে প্লাবিত হওয়ার ঝুঁকি আছে।

আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’ মোকাবিলায় কন্ট্রোলরুম-হটলাইন নম্বর চালু

কাঁঠালিয়া উপজেলার বাসিন্দা সাকিবুজ্জামান সবুর বলেন, আমাদের এখানে স্থায়ী বেড়িবাঁধ না থাকায় অনেক সময় অতি জোয়ারে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। এখন আসন্ন ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে এলাকাবাসীদের আশ্রয়কেন্দ্রে নিতে জোরালো প্রচেষ্টা প্রয়োজন। মঙ্গলবার বিকেলে কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্র ঘুরে জনশূন্য দেখা গেছে। সাধারণ লোকজন এখনো সেখানে আসেননি। এ নিয়ে তাদের মধ্যে এখন পর্যন্ত কোনো উদ্বেগও লক্ষ্য করা যায়নি।

আশরাফুল ইসলাম নামে আরেক বাসিন্দা বলেন, আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ঘূর্ণিঝড় স্থলভাগে আসতে এখনো একদিন সময় লাগতে পারে। তাই হয়তো এখনো কেউ আশ্রয়কেন্দ্রমুখী হয়নি। যদি পরিস্থিতি খারাপের দিকে যায় তাহলে নিম্নআয়ের লোকজন আশ্রয়কেন্দ্রে যাবেন।

মগড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও আশ্রয়কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত মোসা. শাহনাজ আক্তার বলেন, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের সময় এখানে কিছু মানুষ আশ্রয় নিয়েছিলেন। এরপর আর কোনো ঝড়ের আগে কেউ আর আসেননি। মূলত লোকজন তাদের গৃহপালিত পশুপাখি রেখে আসতে চান না। তবে আমাদের আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত আছে, তারা চাইলে যেকোনো সময় এখানে চলে আসতে পারবেন।

আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় হামুন: খুলনায় প্রস্তুত ৬০৪ আশ্রয়কেন্দ্র

অপরদিকে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখার বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন বিআইডব্লিউটিএর উপ-পরিচালক ও বরিশাল নদী বন্দরের কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক।

তিনি বলেন, বরিশাল বিভাগের বরিশাল ও ভোলায় ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব পড়বে বেশি। তাই বরিশাল-ঝালকাঠি-ভোলাসহ বিভাগে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

বিআইডব্লিউটিএর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিদর্শক কবির হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, পায়রা সমুদ্র বন্দরে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত ও বরিশাল নদী বন্দরে ২ নম্বর সতর্ক সংকেত আছে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বরিশাল নদী বন্দর থেকে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আবহাওয়া পরিস্থিতির উন্নতি না হলে এ নির্দেশনার কোনো পরিবর্তন ঘটবে না।

আরও পড়ুন: বরিশালে প্রস্তুত ৫৪১ আশ্রয়কেন্দ্র, ৬১ মেডিকেল টিম

বরিশাল আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ বশির আহম্মেদ হাওলাদার জাগো নিউজকে বলেন, বিভাগে এখনো হামুনের তেমন প্রভাব নেই। তবে রাত ৩টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে। বুধবার সকাল ৯টা থেকে আবহাওয়া আরও খারাপ হতে পারে।

ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ফারাহ গুল নিঝুম জাগো নিউজকে বলেন, সরকারি দপ্তরের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে কর্মস্থলে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তারা সাধারণ মানুষকে সচেতন করবেন, যাতে তারা আশ্রয়কেন্দ্রে আসেন এবং জানমালের ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো যায়।

জেএস/এসজে/এএসএম

টাইমলাইন  

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।