ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’

জলোচ্ছ্বাসের শঙ্কায় সাতক্ষীরার উপকূলবাসী

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি সাতক্ষীরা
প্রকাশিত: ১২:৪৯ পিএম, ২৪ অক্টোবর ২০২৩

আবহাওয়া অধিদপ্তরের সবশেষ পূর্বাভাস অনুযায়ী ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’ সরাসরি সাতক্ষীরা উপকূলে আঘাত না হানলেও এর প্রভাবে ৩-৪ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। এতে দুর্বল উপকূল রক্ষা বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন উপকূলবাসী।

তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের দাবি, বেশিরভাগ স্থানে ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধগুলো মেরামত করা হয়েছে। দুর্যোগকালীন কোথাও বাঁধ ভেঙে গেলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সেটি মেরামত করার জন্য সবধরনের প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। পাশাপাশি সব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মস্থলে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

সাতক্ষীরার ভাঙনকবলিত শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা, বুড়গোয়ালিনী, পদ্মপুকুর মুন্সিগঞ্জ, আশাশুনির প্রতাপনগর, খাজরা, আনুলিয়া ও আশাশুনি সদর ইউনিয়নে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কিছুদিন আগে টানা ছয়দিনের বৃষ্টিতে উপকূলীয় এলাকার অনেক স্থানে বেড়িবাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে। সেগুলো এখনো মেরামত করা হয়নি। এ অবস্থায় ঘূর্ণিঝড় হলে জোয়ারের পানির চাপ বাড়বে। এতে বাঁধ ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

জলোচ্ছ্বাসের শঙ্কায় সাতক্ষীরার উপকূলবাসী

গাবুরা ইউনিয়নের সোরা গ্রামের বাসিন্দা রবিউল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের ইউনিয়নের চকবারা, লেবুবুনিয়া, হরিষখালীসহ কয়েকটি এলাকার বেড়িবাঁধের আটটি পয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। বর্তমানে বেড়িবাঁধের বিভিন্ন স্থানে মেগা প্রকল্পের কাজ চললেও বেশকিছু স্থান এখনো মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। যা জোয়ারের চাপ মোকাবিলায় সক্ষম না।’

আরও পড়ুন: বুধবার দুপুর নাগাদ বাংলাদেশে আঘাত হানতে পারে ‘হামুন’

জলোচ্ছ্বাসের শঙ্কায় সাতক্ষীরার উপকূলবাসী

বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের বাসিন্দা দাতিনাখালী গ্রামের মোহাম্মদ বাচ্চু জাগো নিউজকে বলেন, বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের দুর্গাবাটির তিনটি পয়েন্ট ও দাতিনাখালীর একটি পয়েন্ট মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে এসব এলাকার বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হতে পারে।

আশাশুনির উপজেলার বিছট গ্রামের রুহুল কুদ্দুস বলেন, ‘আমাদের গ্রামের বেড়িবাঁধ সবসময় ঝুকিপূর্ণ। কিছুদিন আগে যেনতেনভাবে এ বাঁধের কিছু অংশ সংস্কার করা হয়েছে। তবে নকশা অনুযায়ী কাজ করা হয়নি। জোয়ারের পানির চাপ বাড়লে বাঁধ ভেঙে যেতে পারে।’

ঘূর্ণিঝড় হামুনের প্রভাবে মোংলা বন্দরে বর্তমানে পাঁচ নম্বর বিপৎসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী।

জলোচ্ছ্বাসের শঙ্কায় সাতক্ষীরার উপকূলবাসী

তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘সাতক্ষীরা উপকূলে ঘূর্ণিঝড় হামুন সরাসরি আঘাত হানার সম্ভাবনা কম। তবে এর প্রভাবে উপকূলীয় এলাকায় ৩-৪ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনাও রয়েছে।’

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সালাউদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের বিভাগের আওতাধীন ৩৮০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে তিন কিলোমিটার অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এরইমধ্যে বাঁধের সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে। বড় ধরনের দুর্যোগ না এলে বাঁধ ভাঙার সম্ভাবনা নেই।

জলোচ্ছ্বাসের শঙ্কায় সাতক্ষীরার উপকূলবাসী

শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আক্তার হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় হামুন মোকাবিলায় শ্যামনগর উপজেলার ১৬৩টি সাইক্লোন সেন্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া পর্যাপ্ত শুকনা খাবার, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, মেডিকেল টিম, স্বেচ্ছাসেবক টিমকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। উপজেলার ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধগুলো সংস্কারের কাজ চলমান।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবীর জাগো নিউজকে বলেন, আবহাওয়া অধিদপ্তরের যে পূর্বাভাস তাতে সাতক্ষীরার উপকূলে ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’ আঘাত হানার সম্ভাবনা কম। তারপরও সম্ভাব্য আঘাত মোকাবিলায় উপকূলবর্তী শ্যামনগর, আশাশুনি ও কালিগঞ্জ উপজেলার আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। মানুষকে উদ্ধার করে নিরাপদ আশ্রয়ে নিতে প্রস্তুত রয়েছে নৌযান।

আহসানুর রহমান রাজীব/এসআর/জেআইএম

টাইমলাইন  

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।