ফেনী
বিদ্যালয়ের পাশে ক্রাশিং মিল, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশেই চলছে পাঠদান
ফেনীর এক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে ক্রাশিং মিল (মসলা গুঁড়া করার কারখানা)। সারাদিন চলে এ কারখানার কাজ, আর মসলার তীব্র ঝাঁঝের মধ্যেই চালানো হয় পাঠদান। এতে প্রতিনিয়তই হাঁচি-কাশিসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে কোমলমতি শিশুরা। এক প্রকার বাধ্য হয়েই সন্তানদের স্কুলে পাঠাচ্ছেন অভিভাবকরা।
জানা গেছে, ১৯৪৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ফেনী পৌর এলাকার তাকিয়া বাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। ১৯৭৩ সালে এটি জাতীয়করণ করা হয়। বর্তমানে বিদ্যালয়ের দেড় শতাধিক শিক্ষার্থীকে পাঠদান করছেন ছয়জন শিক্ষক। বিদ্যালয়ের আশপাশের বিভিন্ন মসলা প্রক্রিয়াজাতকরণে ব্যবহৃত ক্রাশিং মেশিন এবং মসলা গুঁড়ার গন্ধে নাজেহাল শিক্ষার্থী-শিক্ষকরা। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশেই চলছে শিক্ষা কার্যক্রম।
বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী ফাতেমা আক্তার বলেন, বিদ্যালয়ে আসলেই শুধু এই অবস্থা হয় এমন নয়, যাতায়াতেও ভোগান্তির শিকার হতে হয়। মুখে মাস্ক পড়েও এর কোনো সমাধান পাইনি।
আবুল কালাম নামে এক অভিভাবক বলেন, আর্থিক সামর্থ্য না থাকার কারণে ছেলেকে সরকারি স্কুলে ভর্তি করেছিলাম। কিন্তু এখানে ভর্তির পর থেকে ছেলের হাঁচি-কাশিসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। এ কারণে বেশিরভাগ সময় তাকে জোর করে স্কুলে পাঠাতে হচ্ছে।
আরও পড়ুন: বন্যায় ডুবেছে তিস্তাপাড়ের হাজারো কৃষকের স্বপ্ন
কোহিনুর বেগম নামে আরেক অভিভাবক বলেন, এ বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত বেশিরভাগ শিক্ষার্থী দরিদ্র পরিবারের সন্তান। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে না দেখে, তাহলে আমাদের ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনা বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় দেখছি না।
এ বিষয়ে নজরুল ইসলাম নামে এক মিল মালিক বলেন, তাকিয়া রোডে ক্রাশিং মিল ও স্কুলটি খুব কাছাকাছি। দিনের বেলায় মিল চললে শিশুসহ স্থানীয়দের অনেক কষ্ট হয়। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মিল মালিকদের সঙ্গে বসে যে কোনো উদ্যোগ নিতে পারে।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নূরের নাহার বলেন, শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের সময় মসলা গুঁড়ার কারণে দম বন্ধ হয়ে আসে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী উভয়েই খুব কষ্টে আছি। এক প্রকার বাধ্য হয়েই ক্লাস নিতে হচ্ছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাজী মমতাজ বেগম বলেন, এ সমস্যার কারণে এরই মধ্যে অনেক শিক্ষার্থী বিদ্যালয় ছেড়ে অন্য জায়গায় ভর্তি হয়েছে। এ ক্ষতি অপূরণীয়। ফেনীর সাবেক জেলা প্রশাসক বিদ্যালয় পরিদর্শনে এসে বিষয়টি নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকেও বিষয়টি জনিয়েছি। আশা করি কর্তৃপক্ষ দ্রুত এর সমাধান করবেন।
আরও পড়ুন: বরগুনায় আউশের দামে হিসাব মিলছে না কৃষকের
এ বিষয়ে ফেনী সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাসুদ রানা বলেন, এ ধরনের পরিবেশে থাকলে শিশুদের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে। শারীরিকভাবেও নানামুখী ক্ষতির মুখে পড়তে পারে। এছাড়া সেখানকার শব্দদূষণও শিক্ষার্থীদের জন্য অনেক ক্ষতিকর।
এ প্রসঙ্গে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, এরই মধ্যে বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করেছি। মসলার গুঁড়ার কারণে বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অনেক দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। জেলা প্রশাসন থেকে এ বিষয়ে শীঘ্রই একটি সিদ্ধান্ত আসতে পারে। সেখানকার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসে উভয়পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে একটি সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে।
আবদুল্লাহ আল-মামুন/জেএস/এমএস