ময়মনসিংহ-৬
নৌকার মাঝি হতে চান বাবা-ছেলে-মেয়ে
আওয়ামী লীগের শক্তিশালী ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ময়মনসিংহ-৬ (ফুলবাড়িয়া) আসন। আসনটি ১৯৭০ থেকে আওয়ামী লীগের দখলে ছিল ছয়বার। আর বিএনপি ও জাতীয় পার্টির দখলে ছিল দুইবার করে। ২০১৪ সাল থেকে টানা তিনবার আওয়ামী লীগের এমপি অ্যাডভোকেট মোসলেম উদ্দিনের দখলে রয়েছে আসনটি। এবার এ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী তার ছেলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট ইমদাদুল হক সেলিম ও মেয়ে সাবেক নেত্রী সেলিমা বেগম সালমা।
তারা ছাড়াও দলীয় মনোনয়ন পেতে মাঠে রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট আব্দুর রাজ্জাক, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশীদ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক সরকার এবং সাবেক ছাত্রনেতা গোলাম মোস্তফা তপন। আওয়ামী লীগ বাদে জাসদ ও জাতীয় পার্টির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপ দেখা গেছে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের প্রচার-প্রচারণা তুঙ্গে রয়েছে। পুরো উপজেলা শহর ছেঁয়ে গেছে নেতাকর্মীদের প্যানা, পোস্টার ও বিলবোর্ডে।
মনোনয়নের বিষয়ে বর্তমান এমপি অ্যাডভোকেট মোসলেম উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে খবর পৌঁছানো হয়েছিল যে আমার বয়স হয়ে গেছে, আমি কর্মক্ষম নই। এজন্য উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির পদটি হাত ছাড়া হয়েছে। পরে ২০২২ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি আমার ছেলে পদটি পেয়েছে। এখন আবার আমার ছেলেমেয়েরা মনোনয়নপ্রত্যাশী। কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতারা অবগত হয়েছেন আমি কর্মক্ষম এবং সুস্থ রয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বৃহৎ একটি দল। তাই ছেলেমেয়েরা যোগ্য হিসেবে মনোনয়ন চাইতেই পারে। কিন্তু নতুনরা জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে আমার ধারেকাছেও নেই।’
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও এমপি মোসলেম উদ্দিনের ছেলে অ্যাডভোকেট ইমদাদুল হক সেলিম বলেন, ‘বাবার পরিচয়ে আমি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হইনি। আমি আমার বাবার দক্ষ কর্মী হিসাবে এবং আমার যোগ্যতায় পদ অর্জন করেছি। এবার বাবার পাশাপাশি আমিও মনোনয়ন প্রত্যাশী। কারণ আমি উপজেলা আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ রেখেছি।’
নৌকার মনোনয়নপ্রত্যাশী সেলিমা বেগম সালমা এমপি মোসলেম উদ্দিনের মেয়ে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামছুন নাহার হলের ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক।
সেলিমা বেগম সালমা জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি ১৯৮৮ সালে থেকে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত আছি। বিগত কয়েক বছর ধরে সরকারের উন্নয়নচিত্র মা-বোনদের সামনে তুলে ধরে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। আর মনোনয়ন চাওয়াটা আমার অধিকার তাই চাচ্ছি। সেই লক্ষ্যে ফুলবাড়িয়াতে পরিবেশ তৈরি করেছি।’
মনোনয়নপ্রত্যাশী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. হারুন অর রশীদ বলেন, ‘ছাত্ররাজনীতি থেকে শুরু করে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হয়েছি। নির্যাতনের শিকার হয়েছি বহুবার। তৃণমূলের মানুষের কাছে আমার ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। আশা রাখছি দল আমার প্রতি আস্থা রাখলে এ আসনটি উপহার দিতে পারবো।’
কথা হয় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক সরকারের সঙ্গে। নৌকার মনোনয়ন পেতে চান তিনিও।
আব্দুল মালেক বলেন, ‘রাজনীতির নামে ফুলবাড়িয়াতে ব্যবসা শুরু করেছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও তার ছেলেমেয়েরা। এক ঘরে অনেক প্রার্থী এটা হাস্যকর। দলের জন্য বিব্রতকর। তাই আমি মনে করি আগামীতে আমার মতো ঝামেলাবিহীন স্বচ্ছ ব্যক্তিকেই মনোনয়নের জন্য দল বেঁচে নেবে।’
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ থেকে মনোনয়ন চান মহানগর সভাপতি ও ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর সৈয়দ শফিকুল ইসলাম মিন্টু।
তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ফুলবাড়িয়াতে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা ইমেজ সংকটে রয়েছেন। তাই নৌকার জয় আনতে হলে আমার বিকল্প নেই।
শফিকুল ইসলাম আরও বলেন, উপজেলার ১২৬টি ওয়ার্ডের সাধারণ মানুষ আমাকে এমপি হিসেবে চায়। তাই ১৪ দলীয় জোট থেকে আমাকে মনোনয়ন দিলে এ আসনটিতে জয়লাভ করা সহজ হবে।
জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. কে আর ইসলাম বলেন, ‘ফুলবাড়িয়াতে জাতীয় পার্টির একটি ভোট ব্যাংক রয়েছে। প্রত্যেক ওয়ার্ডে আমার নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির কর্মী-সমর্থকরা কাজ করছেন। মহাজোট থেকে আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হলে স্বচ্ছ রাজনীতির উদাহরণ হবে ফুলবাড়িয়া।’
একটি পৌরসভা ও ১৩টি ইউনিয়ন পরিষদ নিয়ে গঠিত ময়মনসিংহ-৬ আসন। এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা তিন লাখ ৮৬ হাজার ১২। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ ৯৪ হাজার ৪৫৩। আর নারী ভোটার এক লাখ ৯১ হাজার ৫৫৯ জন। এরমধ্যে নতুন ভোটার ৬০ হাজার ২৭২ জন। কেন্দ্র ১২১টি।
এসআর/জিকেএস