৩৩ ঘণ্টা পর নওগাঁয় বাস চলাচল শুরু

ধর্মঘট যেন নেশায় পরিণত হয়েছে বাস-মালিক শ্রমিকদের

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি নওগাঁ
প্রকাশিত: ০৭:২৩ পিএম, ১৮ অক্টোবর ২০২৩

নওগাঁয় ৩৩ ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর বাস চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। পরিবহন নেতাদের সঙ্গে শ্রমিকদের বৈঠকের পর বুধবার (১৮ অক্টোবর) বিকেল ৩টা থেকে বাস চলাচল শুরু হয়।

এর আগে দুপুররে বিদ্যমান সমস্যা নিরসনে শহরের বালুডাঙা বাস টার্মিনালে শ্রমিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ওই সমাবেশে জেলা বাস মালিক গ্রুপ ও মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। পরে পরিবহন নেতাদের সঙ্গে শ্রমিকদের একটি প্রতিনিধি দলের বৈঠক হয়। পরে বিকেল থেকে বাস চলাচল শুরু হয়।

যাত্রীদের অভিযোগ, জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ১৫-২০ বার ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন বাস পরিবহন শ্রমিকরা। সামান্য ইস্যুতে ধর্মঘটের ডাক দেওয়া তাদের নেশায় পরিণত হয়েছে। কখনো ৩-৪ ঘণ্টা পর আবার কখনো ২-৩ দিন লেগে যায় স্বাভাবিক হতে। এতে সঠিক সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেন না যাত্রীরা।

এর আগে সোমবার বিকেলে নওগাঁর মান্দার ফেরিঘাট এলাকায় মহাসড়কে অটোরিকশা চলাচলে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে বাস ও অটোরিকশার শ্রমিকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। ওই ঘটনার পর সন্ধ্যায় নওগাঁ শহরের বালুডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে অটোরিকশা শ্রমিক ও মালিকেরা সড়ক অবরোধ করে বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়। পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিপুল পরিমাণ পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এ ঘটনার জেরে মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটের ডাক দেয় বাস মালিক-শ্রমিকেরা।

আরও পড়ুন: নওগাঁয় অটোরিকশা মালিক-শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ, বাস চলাচল বন্ধ 

গত ৬ জুন মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের মেয়াদ শেষ হয়ে দুই মাস অতিবাহিত হবার পরেও নির্বাচন না করায় তারা ধর্মঘটের ডাক দেন। এর পর দুদিন ধর্মঘট চলার পর আবার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

৩০ জুন সন্ধ্যায় শহরের বাইপাস এলাকায় আব্দুল জলিল শিশুপার্কের সামনে একটি বাস ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও একটি মাইক্রোবাসকে ধাক্কা দিলে পার্কের দর্শনার্থীসহ প্রায় ২০ জন গুরুত্বর আহত হন। পরে একজনের মৃত্যুও হয়। ওই ঘটনার বাসচালক ইমরান হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা হলে তাকে আটক করে কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর একাধিকবার চেষ্টা করেও জামিন পাননি ইমরান। এতে ক্ষুব্ধ পরিবহন শ্রমিকরা বিচার বিভাগ ও প্রশাসনকে আল্টিমেটাম দিয়ে মঙ্গলবার (৮ জুলাই) সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট শুরু করে। এতে ৩৮ ঘণ্টা পর বাস চলাচল স্বাভাবিক হয়।

ফাহিম হোসেন নামের এক কলেজছাত্র বলেন, নওগাঁয় এসে আর রাজশাহী যেতে পারছেন না। মাঝে মধ্যে এমন পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয় আমাদের। এতে যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হয়।

বালুডাঙ্গা বাস টার্মিনালের চা দোকানদার জলিল মিয়া বলেন, আমি এখানে প্রায় ১০ বছর ধরে চা বিক্রি করে আসছি। এমন ঘটনা আগে দেখতে পাইনি।

আক্তারুন নাহার রিপা নামের এক নারী জানান, বাস বন্ধ থাকায় ডাক্তার দেখানোর বেশি ভাড়া দিয়ে জন্য রাজশাহী যেতে হয়েছে। প্রায় এ ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়।

উপজেলার ছটিপুর গ্রামে থেকে ময়েজ উদ্দিন (৫৮) নওগাঁয় মেয়ের বাড়িতে বেড়াতে এসেছেন দুদিন আগে। বাড়ি ফেরার জন্য বুধবার সকালে বাসস্ট্যান্ডে এসে দেখতে পান বাস চলাচল বন্ধ। পরে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে সিএনজি করে বাসায় যেতে হয়েছে।

ধর্মঘটের বিষয়ে জানতে চাইলে নওগাঁ জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি শহিদুল ইসলাম বলেন, সরকারি আইন অনুযায়ী মহাসড়কে তিন চাকার যান চলাচল নিষিদ্ধ হলেও অটোরিকশা চালকরা জোর করে গাড়ি চালিয়ে আসছেন। এ নিয়ে প্রায়ই তাদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব জড়িয়ে পড়েন বাস চালকেরা। আমারা আবারও তাদের সঙ্গে বসেছি। তারা আশ্বস্ত করেছেন সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত মহাসড়কে অটোরিকশা চালাবেন না। এটি যদি তারা আগামীতে মেনে চলতে পারেন তাহলে আমাদের মধ্যে আর কোনো দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হবে না।

নওগাঁ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফয়সাল বিন আহসান বলেন, বাস মালিক-শ্রমিক এবং অটোরিকশা চালকদের দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের। এটা সমাধানের জন্য আমরা একাধিকবার উভয় পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করেও কোনো সমাধান হয়নি। মাঝে মাঝে তাদের পাল্টাপাল্টি হামলার কারণে প্রায়ই বাস বন্ধ থাকে। এমন পরিস্থিতি যেন কখনো না হয় এজন্য আমরা রাস্তায় অবস্থান করছি।

আরএইচ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।