কাটেনি স্বজন হারানোর শোক
পঞ্চগড়ে অনাড়ম্বর আয়োজনে মহালয়া উৎসব
পঞ্চগড়ের শ্রী শ্রী ত্রিস্রোতা বদ্বেশ্বরী মন্দিরে সনাতণ ধর্মালম্বীদের অন্যতম উৎসব মহালয়া পূজা উৎযাপন করা হয়েছে। তবে এবার অনাড়ম্বর আয়োজনের মধ্য দিয়ে পালন করা হয় এই মহালয়া উৎসব। প্রতিবছরের মতো এবার কোনো প্রচারণা করা হয়নি।
এছাড়া জেলার বোদা উপজেলার বড়শশী ইউনিয়নের এই মন্দিরে মহালয়া পূজায় অংশ নিতে যাওয়ার সময় ভয়াবহ নৌকাডুবির ঘটনায় এবার নিহতদের পরিবারের অনেক সদস্য যোগ দেননি। সীমিত পরিসরে পূজার আয়োজন করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এজন্য মাড়েয়া ইউনিয়নের আওলিয়ার ঘাটে নদী পারাপার হওয়া যাত্রীদের সংখ্যাও কম দেখা গেছে।
শনিবার (১৪ অক্টোবর) সকাল থেকেই মূলত বদ্বেশ্বরী মন্দিরে মহালয়া পূজা শুরু হয়। দুপুরে মন্দির আওলিয়ার ঘাট এলাকা ঘূরে দেখা গেছে, হাজার হাজার সনাতণ ধর্মালম্বী ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গেই পূজার অর্চণা করছেন। পূজা উদযাপনে স্থানীয় ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নদীর ওপারের মাড়েয়া ইউনিয়নের সনাতণ ধর্মালম্বীদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য পাঁচটি নৌকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিটি নৌকায় ১৫-২০ জনের অতিরিক্ত যাত্রী নেওয়া হয়নি। এছাড়া প্রতিটি নৌকায় পর্যাপ্ত লাইফ সাপোর্ট জ্যাকেট রাখা হয়েছে।
আওলিয়ার ঘাটসহ মন্দির এলাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক আজাদ জাহানের নেতৃত্বে প্রশাসনের একটি দল মন্দিরস্থলে উপস্থিত থেকে সার্বিক বিষয় দেখভাল করেন। সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কনক কুমার রায়, বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বহ্নি শিখা রানীসহ জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
গত বছর ২৫ সেপ্টেম্বর মহালয়া পূজায় যোগ দিতে বদ্বেশ্বরী মন্দিরে যাওয়ার সময় আওলিয়ার ঘাটে মর্মান্তিক নৌকাডুবির ঘটনায় নিখোঁজ ৭২ জনের মধ্যে ৭১ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এজন্য এবার এই ঘাট দিয়ে কম সংখ্যক ভক্তদের যাতায়াত করতে দেখা গেছে।
মাড়েয়া বামনহাট এলাকার উজ্জল বর্ম্মণ বলেন, গত বছর মহালয়া পূজায় যাওয়ার সময় নৌকাডুবির ঘটনায় আমার পরিবারের ছয়জন নিখোঁজ হয়। পরে একে একে তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এরপর আর ওই ঘাটে যাওয়া হয়নি। সেখানে গেলেই বুকটা হাহাকার করে ওঠে। এজন্য এবার আমাদের পরিবারের কেউ মহালয়া উৎসবে যোগ দিতে বদ্বেশ্বরী মন্দিরে যাননি। আমিও যাইনি। আমরা এখনো শোক কাটিয়ে উঠতে পারিনি।
ত্রিস্রোতা বদ্বেশ্বরী মন্দির কমিটির সভাপতি শ্রী নিতীশ কুমার বকশি মুকুল বলেন, গতবারের মর্মান্তিক ঘটনার জন্য এবার আমরা মহালয়া উৎসবের তেমন প্রচারণা করিনি। অনাড়ম্বর আয়োজনে পূজা অর্চণা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এরপরও হাজার হাজার ভক্ত ছুটে এসেছেন পূজা অর্চণা করতে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক আজাদ জাহান বলেন, মহালয়া পূজায় যোগ দিতে যাওয়ার সময় গত বছর আওলিয়ার ঘাটে অনাকাঙ্ক্ষিত একটি ঘটনা ঘটে। এবার স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ঘাট পারপারের জন্য অতিরিক্ত নৌকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমরা সকলেই ঘাটে রয়েছি। পর্যাপ্ত নৌকার পাশাপাশি প্রতি নৌকায় ১৫ জনের বেশি যাত্রী নেওয়া হচ্ছে না এবং প্রতিটি নৌকায় লাইফ সাপোর্ট জ্যাকেট রাখা হয়েছে।
সফিকুল আলম/এফএ/জেআইএম