কৃষকদের কাজে আসছে না কৃষি আবহাওয়া পূর্বাভাস প্রকল্প

সঞ্জিত সাহা
সঞ্জিত সাহা সঞ্জিত সাহা নরসিংদী
প্রকাশিত: ০৫:২৪ পিএম, ১৪ অক্টোবর ২০২৩

নরসিংদীতে কৃষকের কাজে আসছে না কৃষি আবহাওয়া পূর্বাভাস প্রকল্প। অকেজো পড়ে রয়েছে রেইন গেজ মিটার, সোলার প্যানেল এবং আবহাওয়া পূর্বাভাস বোর্ড। জেলার ইউনিয়ন পরিষদগুলোতে নামসর্বস্ব তথ্যবোর্ড থাকলেও সেগুলো আপডেট করা হচ্ছে না। ফলে কৃষকের ফসল রক্ষায় কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না এই তথ্যবোর্ড।

জানা যায়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, ঘুর্ণিঝড়, অতিবৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি, রোদের প্রখরতা কিংবা ঘন কুয়াশাসহ জলবায়ু পরিবর্তন বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে কৃষক ও কৃষি ফসল রক্ষায় উদ্যোগ নেয় সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় ২০১৮-১৯ অর্থবছরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ও বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর দেশজুড়ে ‘কৃষি আবহাওয়া তথ্যপদ্ধতি উন্নীতকরণ’ প্রকল্প হাতে নেয়। যা ২০২০-২১ সালে বাস্তবায়ন করা হয়।

এরই ধারাবাহিকতায় নরসিংদীর ৬ উপজেলার ৩ লাখ ৪০ হাজার কৃষকের জন্য ৭১টি ইউনিয়ন পরিষদে সাটানো হয় কৃষি আবাহাওয়া পূর্বাবাস তথ্যবোর্ড। এই প্রকল্পের মাধ্যমে তাপমাত্রা, বাতাসের আদ্রতা, বায়ুপ্রবাহ, আলোক ঘণ্টা, বৃষ্টির পরিমাণ ও ঝড়ের পূর্বাভাস তিনদিন আগের ও তিনদিন পরের তথ্য পাওয়ার কথা কৃষকদের। কিন্তু এই বোর্ডের কথা জানেনই না অনেক কৃষক। এমনকি এর কী কার্যক্রম তাও জানেন না তারা। ফলে প্রাকৃতিক দূর্যোগের হাত থেকে ফসল রক্ষা করা যাচ্ছে না।

শিবপুর খরমাপাড়া গ্রামের কৃষক রমিজ উদ্দিন বলেন, নরসিংদীতে কৃষকদের কাজে আসছে না আবহাওয়া পূর্বাভাস প্রকল্প। এই প্রকল্পের মাধ্যমে আমাদের আবহাওয়ার কথা ৩ দিন আগে জানার কথা থাকলেও আমরা তা জানতে পারছি না। কারণ ইউনিয়ন পরিষদে যে তথ্যবোর্ডগুলো লাগানো হয়েছে তা এখন অচল।

অপর কৃষক ইসমাইল মিয়া বলেন, শীতকালীন আগাম সবজি চাষে ফুলকপি-বাঁধাকপির চারা রোপণ করেছি। কিন্তু গত কয়েকদিন আগে বৃষ্টির কারণে বীজতলা পানিতে তলীয় যায়। ফলে সকল চারা মরে গেছে। আমরা যদি বৃষ্টির খবর আগে থেকে জানতাম তাহলে ৬৫ থেকে ৭০ হাজার টাকা কেজি দরের ফুলকপির বীজগুলো রোপণ করতাম না।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, কৃষি আবহাওয়া তথ্য পদ্ধতি উন্নীতকরণ ও কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কৃষকদের কৃষি আবহাওয়া পরামর্শ সেবা সহজলভ্য করার কথা থাকলেও বাস্তবে তা হয়নি। নামমাত্র একটি বোর্ড লাগিয়ে শেষ হয়েছে এ প্রকল্প। কোথাও কোথাও সেই বোর্ডগুলোতে ধুলা পড়ে আছে। স্বয়ংক্রিয় রেইন গজ মিটার ও সৌরবিদ্যুতের প্যানেল অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে। কোথাও কোথাও সেসব যন্ত্র খোয়াও গেছে। কোনোটি আবার নষ্ট। বোর্ডগুলো অকেজো অবস্থায় পড়ে থাকায় কৃষকদের কোনো কাজে আসছে না। ফলে তথ্য না পেয়ে একদিকে যেমন ক্ষতির মুখোমুখি হচ্ছেন কৃষক অপরদিকে গচ্ছা যাচ্ছে প্রকল্পের টাকাও।

কৃষকদের কাজে আসছে না কৃষি আবহাওয়া পূর্বাভাস প্রকল্প

শুধু কৃষকরাই নয় এই তথ্যবোর্ডের কার্যক্রম জানেন না অনেক ইউনিয়ন পরিষদের সচিব ও চেয়ারম্যানরাও।

চিনিশপুর ইউনিয়ন পরিষদের সচিব শাহ আলম মিয়া জানান, ২০২১ সালে আমি চিনিশপুর ইউনিয়ন পরিষদের সচিবের দায়িত্ব নিয়েছি। শুরু থেকে এই পর্যন্ত তথ্যবোর্ডটি এভাবেই পড়ে আছে। কেউ এই বোর্ডটি আপডেট বা তদারকির জন্য ইউনিয়ন পরিষদে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আসতে দেখেনি। আবার কোনো কৃষকও আসেনি বোর্ডটি দেখতে।

কৃষকদের কাজে আসছে না কৃষি আবহাওয়া পূর্বাভাস প্রকল্প

হাজিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইউসুফ খান পিন্টু বলেন, তথ্য বোর্ডটি লাগানোর পর আজ পযর্ন্ত কেউ আর ইউনিয়ন পরিষদে আসেনি। কোনো খোঁজ-খবরও নেয়নি। আবহাওয়ার তথ্যগুলো আপডেটও করেনি। এমনকি আমাদেরকেও তথ্য আপডেট করতে বলেনি।

তিনি আরও বলেন, কৃষকের ফসল রক্ষায় সরকার লাখ লাখ টাকা ব্যয় করলেও প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা তার সুফল সরকারকে দিচ্ছে না।

কৃষকদের কাজে আসছে না কৃষি আবহাওয়া পূর্বাভাস প্রকল্প

নরসিংদী সদর উপজেলার ভারপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা মো. হাদিউর রহমান বলেন, ডিজিটাল ওয়দার ডিসপ্লে বোর্ড ও অটোমেটিক রেইন গজ স্থাপন করা ছিল। এগুলোর মধ্যে ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ড এখন আর কার্যকর অবস্থায় নেই। আবহাওয়ার তথ্য দেখে সেগুলো ম্যানুয়ালি আপডেট করতে হয়। আর অটোমেটিক রেইন গেজ মিটারের ব্যাটারি ও চিপ নষ্ট থাকার কারণে আমরা অটোমেটিক তথ্য কালেকশন করতে পারছি না। তাই কৃষকদের প্রাপ্য সেবাটা আমরা সরসরি দিতে পারছি না।

নরসিংদী কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আজিজুর রহমান বলেন, আবহাওয়া তথ্য পদ্ধতি উন্নীতকরণ প্রকল্পের তথ্যবোর্ডসহ যাবতীয় সরঞ্জাম অকার্যকর থাকলেও দুইটি কৃষি অ্যাপসের মাধ্যমে আবাহাওয়ার পূর্বাভাস কৃষকদের জানানো হচ্ছে। তথ্যবোর্ডগুলো মেরামত করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের লিখিতভাবে জানিয়েছি।

এফএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।