১৬ মাসেই দ্বিতীয়বারের মতো সংস্কার ৬০ কোটির সড়কে

রুবেলুর রহমান
রুবেলুর রহমান রুবেলুর রহমান , জেলা প্রতিনিধি রাজবাড়ী
প্রকাশিত: ০৪:৪৭ পিএম, ১৪ অক্টোবর ২০২৩

রাজবাড়ী সড়ক ও জনপথ বিভাগের আধীনে রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়ক প্রশস্ত ও উন্নীতকরণ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার ১৬ মাসের মধ্যেই দ্বিতীয়বারের মতো শুরু হয়েছে সংস্কার কাজ। সড়কের ক্ষতিগ্রস্ত স্থান চেছে-খুঁড়ে নতুন করে সংস্কার করা হচ্ছে। এই রাস্তার কারণে যানবাহনের চালক, পথচারী ও সড়কের পাশে থাকা ব্যবসায়ীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। এতে কাজের মান নিয়ে জনমনে দেখা দিয়েছে অসন্তোষ।

রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়ক একটি জনগুরুত্বপূর্ণ সড়ক। এই সড়কের শ্রীপুর থেকে বড়পুল পর্যন্ত দুইপাশে রয়েছে একাধিক সরকারি-বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ অফিস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাজার এবং হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। ফলে প্রতিনিয়তই এই রাস্তাটি দিয়ে চলাচল করেন ভিআইপিসহ সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ। এছাড়া রাস্তাটি দিয়ে ভারী যানবাহনসহ সব ধরনের যানবাহন চলাচল করে। কিন্তু কাজ শেষ হওয়ার পরপরই রাস্তাটি নষ্ট হওয়ায় প্রতিনিয়তই দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে জনগণ।

জানা গেছে, ২০১৮ সালের শুরুতে ১৮ মাস মেয়াদী রাজবাড়ীর আঞ্চলিক মহাসড়ক প্রশস্ত ও উন্নীতকরণ প্রকল্পের আওতায় দ্বিতীয় প্যাকেজে শ্রীপুর জেলা পরিষদ কার্যালয়ের সামনে থেকে চরবাগমারা আহমদ আলী মৃধা কলেজ পর্যন্ত ৪.১ কিলোমিটার ফোরলেন সড়কের কাজ শুরু করে ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশন নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। প্রায় ৬০ কোটি টাকা চুক্তিমূল্যে এ প্রকল্পের কাজ নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করতে না পারায় কয়েক দফায় কাজের মেয়াদ বাড়িয়ে করা হয় ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত।

jagonews24

তবে ওই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই শহরের বড়পুল থেকে সড়ক বিভাগ পর্যন্ত সড়কের অনেক স্থানের মাঝ বরাবর দেবে সরু লাইন তৈরি হয়। এতে জনগুরুত্বপূর্ণ এ সড়কে ব্যাহত হয় যানবাহন চলাচল। ফলে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার ৩ মাসের মধ্যে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে দেবে যাওয়া স্থানে প্রথমবারের মতো কাপের্টিংয়ের মাধ্যমে সংস্কার করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এর এক বছর পর আবার একই স্থানে রাস্তা খুঁড়ে দ্বিতীয়বারের মতো সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে।

মোটরসাইকেল চালক রাশেদুল ইসলাম নিরব, শামীম, রাশেদ খানসহ কয়েকজন বলেন, হাইওয়ে রাস্তা নির্মাণের পর প্রায় ১৫ থেকে ১০ বছর টেকসই হয়। কিন্তু রাজবাড়ীর বড়পুল থেকে সড়ক বিভাগ পর্যন্ত রাস্তা ৬ মাস বা একবছর আগে একবার সংস্কার করা হয়েছে, এখন আবার করছে। রাস্তার মধ্য দিয়ে খাল হয়ে নদীর ঢেউয়ের মতো সৃষ্টি হয়েছে। যার কারণে বাইক নিয়ে যেতে গেলে দোল খেলে। আবার বৃষ্টি হলেই সেখানে পানি জমে উঁচু-নিচু বোঝা যায় না। এভাবে কাজ করে দেশের টাকা অপচয় করা হচ্ছে। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ও অদক্ষ মানুষের কারণে এ অবস্থা হয়েছে। এখন এর ভুক্তভোগী হচ্ছেন সবাই।

ইজিবাইক চালক সোহেল রানা ও শাহআলম মিয়া বলেন, রাস্তার এক সাইড ঢাল, লোড গাড়ি চালাতে গেলে সমস্যা হয়। এরপর আবার শহরের বড়পুল থেকে শ্রীপুর পর্যন্ত রাস্তায় লাইন তৈরি হয়েছে। যার কারণে অনেক সময় গাড়ি এদিক ওদিক চলে যায়, তখন পেছনে বড় গাড়ি থাকলে ভয় লাগে। এতে যেমন তাদের গাড়ি চালাতে সমস্যা হয়, তেমনি বড় গাড়িরও সমস্যা হয়। নতুন করা রাস্তা এত দ্রুত নষ্ট হবে কেন?

jagonews24

সড়ক সংলগ্ন ব্যবসায়ী মোকলেছুর রহমান ও নাহিদ চৌধুরী বলেন, এই রাস্তাটি জেলা শহরের প্রধান সড়ক এবং এর পাশেই তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করায় রাস্তাটির বিভিন্ন স্থানে দেবে গিয়েছে। বৃষ্টির সময় এই দেবে যাওয়া স্থানের নোংরা পানির ওপর দিয়ে দ্রুত গতির যানবাহন গেলে ছিটে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চলে আসে। এ অবস্থায় রাস্তাটি ভালোভাবে করা প্রয়োজন। মাঝেমধ্যে ট্রাক নিয়ে এসে রাস্তার ক্ষতিগ্রস্ত স্থান খুঁড়ে মসলা দিয়ে ডলে দিয়ে যায়, পরে আবার যা তাই। গতবছর রাস্তার কাজ শেষ হওয়ার পর এখন পর্যন্ত দুইবার সংস্কার করা হচ্ছে। তাছাড়া মাঝে মধ্যেই করেছে। তাহলে কোটি কোটি টাকা খরচ করে রাস্তা তৈরি করে লাভ কী, যদি ৫-১০ বছর টেকসই না হয়।

রাজবাড়ী সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী তুষার আহমেদ বলেন, কাজটি গত বছর শেষ হলেও আসলে শেষ হয়েছে ২০১৯ সালের জুন মাসে। সড়কের মাঝে যেখানে সেখানে বাসস্ট্যান্ডের মতো ব্যবহার করায় এমন ক্ষতি হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মেরামত করা হচ্ছে। এর আগেও একবার মেরামত করা হয়েছে। কোনো কারণে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেরামতে অস্বীকৃতি জানালে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।