লাখ টাকা ঋণের জন্য ৫ টাকায় সদস্য হতে মানুষের ভিড়
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে লাখ টাকা ঋণ দেওয়ার নামে সাধারণ মানুষের সঙ্গে চলছে প্রতারণা। সহজ কিস্তিতে ঋণ দেওয়ার কথা বলে ‘অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ’ লেখা লিফলেটে চলছে সদস্য সংগ্রহ। এর জন্য প্রত্যেকের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে ৫ টাকা। তাই একমাস ধরে ভৈরব বাজারের ঋষিপট্টি এলাকায় ভিড় করছেন হতদরিদ্র অসংখ্য নারী-পুরুষ।
বিষয়টি জানার পর মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) দুপুরে ওই এলাকায় গেলে স্থানীয় সাংবাদিকদের উপস্থিতি দেখে সদস্য সংগ্রহকারীরা পালিয়ে যান।
অনুসন্ধানে জানা যায়, কয়েকদিন ধরে ভৈরব বাজারের ঋষিপট্টির রাস্তার মোড়ে কয়েকজন নারী টেবিল নিয়ে বসেন। টেবিলে থাকা লিফলেটে লেখা ‘অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ’। এ সংগঠনের কথিত সদস্য ‘রতন বর্মন’ নামের এক ব্যক্তি।
বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে আসা নারী-পুরুষদের কাছ থেকে জনপ্রতি ৫ টাকা করে নিয়ে সদস্য সংগ্রহ করছেন টেবিলে বসা নারীরা। তাদের লক্ষ্য ২০ লাখ সদস্য সংগ্রহ করা। সদস্য করতে নেওয়া হচ্ছে জাতীয় পরিচয়পত্র ও মোবাইল নম্বর।
সদস্য হওয়ার পর লটারির মাধ্যমে এক লাখ টাকা করে ঋণ দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে। তবে ঋণের টাকা কবে নাগাদ পাওয়া যাবে তার কোনো সুনির্দিষ্ট সময় বলতে পারছেন না সদস্য সংগ্রহকারীদের কেউই।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, লাখ টাকা লোন পেতে অনেকে দূর-দূরান্ত থেকে এখানে এসে জড়ো হচ্ছেন। রতন বর্মন এভাবে একমাসে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে প্রায় লাখ টাকা সংগ্রহ করেছেন। সদস্য সংগ্রহের নামে উত্তোলনের টাকার কিছু অংশ পান ফরম পূরণকারী নারীরা। আর বাকি টাকা নেন রতন বর্মন নিজে।
সদস্য হতে আসা ফিরোজ মিয়া বলেন, আমরা জানতে পেরেছি ঋষিপট্টিতে রতন বর্মন নামে এক ব্যক্তি ৫ টাকা দিয়ে একটি ফরম পূরণ করাচ্ছেন। পরবর্তীতে তার কাছ থেকে এক লাখ টাকা করে বিনা সুদে ঋণ পাওয়া যাবে। তাই আমরা অনেক দূর থেকে ঋণ পাওয়ার আশায় এখানে এসেছি। এসে দেখি ভিন্ন কিছু। লোকজন বলছে সবই প্রতারণা।
স্থানীয় বাসিন্দা শিউলি দাশ বলেন, ২০ লাখ লোকের সদস্য ফরম পূরণ করার পর ঋণ দেওয়া শুরু হবে। এ কথা শুনে আমাদের সন্দেহ হয়। পরে আমি সদস্য হইনি।
বিপাশা নামে সদস্য সংগ্রহকারী বলেন, আমি কয়েকদিনে ৮ হাজার টাকার সদস্য ফরম পূরণ করে দিয়েছি। এর জন্য রতন আমাকে ২ হাজার ২০০ টাকা দিয়েছে। ৫ টাকায় ফরম পূরণ করালেও ঋণ দেওয়া হবে কি না আমি জানি না। রতন বর্মনই সঠিক উত্তর দিতে পারবেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রতন বর্মন বলেন, মাধবদীর আবুল বাশার নামে এক ব্যক্তি আমাকে দায়িত্ব দিয়েছে ভৈরব থেকে ২০ লাখ সদস্য সংগ্রহ করে দিতে। সদস্য হওয়ার পর প্রত্যেককে লটারির মাধ্যমে এক লাখ টাকা করে ঋণ দেওয়া হবে। সবাই একসঙ্গে ঋণ পাবেন না। পর্যায়ক্রমে সবাই ঋণ পাবেন। আগ্রহীদের কাছ থেকে প্রতি মাসে এক হাজার টাকা করে দীর্ঘমেয়াদি সময় ঋণের টাকা আদায় করা হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায় আবুল বাশার একজন শিক্ষক এবং অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশের সদস্য। তিনি বলেন, আমাদের সংগঠনের নামে কোনো টাকা পয়সা লেনদেনের নিয়ম নেই। সদস্য করার নামে যদি কেউ কারও কাছ থেকে টাকা পয়সা নেয় তাহলে আপনারা তাকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করুন।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সাদিকুর রহমান সবুজ জাগো নিউজকে বলেন, কোনো সংগঠনের নাম ভাঙিয়ে কেউ সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অর্থ আদায় করলে অভিযোগের ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রাজীবুল হাসান/এসজে/এএসএম