নিষেধাজ্ঞার বাকি দু’দিন

এখনো দেখা নেই ডিমওয়ালা ইলিশের, ক্ষোভে ফুঁসছেন জেলেরা

জুয়েল সাহা বিকাশ
জুয়েল সাহা বিকাশ জুয়েল সাহা বিকাশ , জেলা প্রতিনিধি, ভোলা
প্রকাশিত: ০৪:১৫ পিএম, ১০ অক্টোবর ২০২৩

আর দু’দিন পর ১২ অক্টোবর থেকে ভোলায় শুরু হচ্ছে ইলিশ আহরণে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা। তবে এখনো ভোলার মেঘনা ও তেতুলিয়া নদীতে তেমন একটা দেখা মিলছে না ডিমওয়ালা ইলিশের। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জেলেরা।

জেলেরা বলছেন, গত কয়েক বছর ধরে নিষেধাজ্ঞা শেষে নদীতে গেলে ঝাঁকে ঝাঁকে ডিমওয়ালা ইলিশ ধরা পড়ে। কিন্তু ইলিশের ভরা মৌসুমে তাদের জালে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ ধরা পড়ে না। যার কারণে অনেক জেলে ঋণগ্রস্ত হয়ে জেলে পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় গিয়ে সংসার চালাচ্ছেন।

মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) সকালে ভোলা সদর উপজেলার মেঘনা নদীতে সরেজমিনে গিয়ে জেলেদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, ইলিশের ভরা মৌসুমে ভোলার মেঘনা ও তেতুলিয়া নদীতে দল বেঁধে ইলিশ শিকার ব্যস্ত সময় পার করছেন জেলেরা। ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত কেউ একবার আবার কেউ দুইবার জাল ফেলে টেনে তুলছেন। তবে তাদের জালে উঠে আসছে না আশানুরূপ ইলিশ। আর যে ইলিশ উঠে আসছে তার মধ্যে ডিমওয়ালা ইলিশ তেমন নেই বললেই চলে।

তুলাতুলি এলাকার মেঘনা নদীতে ইলিশ শিকার করা মো. সাহাবুদ্দিন মাঝি জানান, তিনি ও তার সঙ্গী আরও দুই মাঝি মিলে ভোর থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত দুইবার জাল ফেলে টেনে তুলেছেন। জালে বিভিন্ন সাইজের ২০টি ইলিশ পেয়েছেন। কিন্তু এর মধ্যে একটিও ডিমওয়ালা ইলিশ উঠে আসেনি। নিষেধাজ্ঞার আর দুদিন বাকি থাকলেও একটিও ডিমওয়ালা ইলিশ না পেয়ে অবাক তিনি।

ছালাউদ্দিন মাঝি জানান, তার সঙ্গী ৩ মাঝি নিয়ে গত এক সপ্তাহ ধরে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তুলাতুলি ও ইলিশা এলাকার মেঘনা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে জাল ফেলে প্রায় একশোটি ইলিশ পেয়েছেন। কিন্তু তার জালে উঠে আসা একটি ইলিশের পেটেও ডিম ছিল না। তাই প্রাকৃতিকভাবে কিছু পরিবর্তন হয়েছে বলে ধারণা তার।

দুলাল মাঝি ও আশিক মাঝি জানান, আগে মা ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞার ১৫-২০ দিন আগে থেকেই নদীতে জাল ফেললে ৬০-৭০ ভাগ ইলিশের পেটে ডিম থাকতো। কিন্তু এ বছর নিষেধাজ্ঞার মাত্র ২ দিন বাকি থাকলেও এখন পর্যন্ত তারা শতকরা ৩-৪ ভাগ ডিমওয়ালা ইলিশ পাচ্ছেন।

এদিকে নিষেধাজ্ঞা শেষে ডিমওয়ালা ইলিশ প্রাপ্তি ও ভরা মৌসুমে ইলিশ না পেয়ে ঋণগ্রস্ত হয়ে অনেক জেলেই তাদের পেশা পরিবর্তন করছেন।

তুলাতুলি এলাকার মো. মনির হোসেন জানান, তিনি আগে জেলের কাজ করতেন। তার ট্রলার ও জাল ছিল। তার নেতৃত্বে ৮-১০ জেলে নদীতে ইলিশ শিকার করতেন। কিন্তু ভরা মৌসুম ও বছরের বেশিভাগ সময়ই নদীতে ইলিশ না পাওয়ায় লোকসান গুনতেন। এতে ঋণগ্রস্ত হয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতেন। তাই বাধ্য হয়ে ট্রলার ও জালসহ মাছ শিকারের সব উপকরণ বিক্রি করে এখন বাল্কহেডে চাকরি করেন।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের শীর্ষ মৎস্য বিজ্ঞানী ও ইলিশ গবেষক ড. মো. আনিসুল রহমান জানান, ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি অব্যাহত রাখতে হলে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে গবেষণা ও বিশ্লেষণ করা ফলাফলে উপর গুরুত্ব দিতে হবে।

ভোলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা এমদাদুল্যাহ জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ইলিশের পেটে ডিম অনেক সময় দেরিতে আসে। তারা ভোলা থেকে ২২ অক্টোবর ইলিশের প্রজনন মৌসুমের নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাব দিলেও বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট ও মন্ত্রণালয় থেকে ১২ অক্টোবর থেকে নিষেধাজ্ঞার সময় নির্ধারণ করেছে। তাই সেটিই তারা বাস্তবায়ন করবেন।

এফএ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।