তিনদিন ধরে আটকা দেড়শো পর্যটক, সেন্টমার্টিনে খাদ্য সংকট
বৈরী আবহাওয়া না কাটায় টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে চালু হয়নি জাহাজ চলাচল। এ কারণে বুধবার ফেরার সিডিউলে সেন্টমার্টিন দ্বীপে থেকে যাওয়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ৩৮ শিক্ষার্থী ও দুই শিক্ষকসহ দেড় শতাধিক পর্যটক তিনদিনেও ফিরতে পারেননি। তবে শুক্রবার বিকেলে সতর্ক সংকেত তুলে নিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। শনিবার জাহাজ চলাচল স্বাভাবিক হলে ফিরতে পারেন আটকা পড়া পর্যটকরা।
এদিকে নৌ-চলাচল বন্ধ থাকায় দ্বীপে নিত্যপণ্য ও খাদ্য সামগ্রী সংকট দেখা দিয়েছে বলে প্রচার পাচ্ছে। খাবার সংকট দূরীকরণে শুক্রবার দুপুরে সার্ভিস বোটে দ্বীপে নিত্যপণ্য পাঠানো হয়েছে।
গত মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে সৃষ্ট লঘুচাপের কারণে আবহাওয়া অধিদপ্তর কর্তৃক ৩ নম্বর সর্তক সংকেত জারির ফলে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌ-রুটে পর্যটকবাহী জাহাজসহ সকল ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ করে দেয় উপজেলা প্রশাসন।
সেন্টমার্টিন দ্বীপে আটকা পড়া জবির শিক্ষার্থী আব্দুল বারেক বলেন, আমরা জবির ৩৮ জন শিক্ষার্থী সেন্টমার্টিন দ্বীপে ব্যাচ ট্যুরে আসি। ট্যুর শেষে দ্বীপ থেকে বুধবার ফেরার কথা থাকলেও হঠাৎ বৈরী আবহাওয়ার কারণে নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে আমরা দ্বীপে আটকা পড়েছি। এখানে নিত্যপণ্যের মধ্যে মাছ-মাংস, বিভিন্ন তরি-তরকারির সংকট দেখা দিয়েছে। তবে ভাত, ডাল ও শুকনা খাবার পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, বঙ্গোপসাগরে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত থাকার কারণে সেন্টমার্টিন দ্বীপে নিত্যপণ্য আগের মতো আনা যাচ্ছে না। টানা তিনদিন মালামাল কম আসায় দ্বীপে খাদ্যসামগ্রীর কিছুটা সংকট দেখা দিয়েছে।
চেয়ারম্যান আরও জানান, সাগর উত্তাল থাকায় মাছ ধরাও বন্ধ। তবে সতর্ক সংকেত কেটে গেলে এ সমস্যার সমাধান হবে। শিক্ষার্থীসহ যেসব পর্যটক দ্বীপে অবস্থান করছেন তারা সমুদ্রে গোসল এবং দ্বীপের বিভিন্ন সৌন্দর্য ঘুরে দেখছেন।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আদনান চৌধুরী বলেন, আবহাওয়া অধিদপ্তর কর্তৃক জারিকৃত ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত কেটে গেলে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেওয়ার কথা ছিল। শুক্রবার বিকেলে সতর্ক সংকেত তুলে দেয়া হয়েছে। কিন্তু জাহাজ পাঠানো যায়নি। আবহাওয়া স্বাভাবিক থাকলে শনিবার জাহাজ গিয়ে ফেরত আনবে দ্বীপে আটকা পড়াদের। দ্বীপের বাসিন্দা ও পর্যটকদের কথা বিবেচনা করে নিত্যপণ্য সামগ্রী নিয়ে যেতে সার্ভিস ট্রলারে মালামাল পরিবহনের নির্দেশনা দেয়াছিল শুক্রবার দুপুরে। বিকেলেই পণ্য সামগ্রী দ্বীপে যাচ্ছে।
ইউএনও আরও বলেন, নিত্যপণ্যবাহী বোটগুলোতে আকার ভেদে মাঝি ও তার সহকারীসহ মোট ৫ থেকে ৬ জন পরিবহন করতে পারবে। কিন্তু সতর্ক সংকেত চলাকালীন সময়ে যাত্রী পরিবহণ করতে পারবে না। তবে মেডিকেল ইমার্জেন্সি হলে রোগী এবং তার সঙ্গে দুইজন স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে চলাচল করা যাবে। সতর্ক সংকেত চলাকালীন সময়ে কোনো স্পিড বোট চলাচল করবে না।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) টেকনাফের ট্রাফিক সুপারভাইজার মো. জহির উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, বঙ্গোপসাগরে বৈরী আবহাওয়া ও ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত থাকায় মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে পুনরায় টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে সকল ধরনের জাহাজ চলাচল বন্ধ করে উপজেলা প্রশাসন। মঙ্গলবার সকালে পর্যটকবাহী জাহাজ বার আউলিয়া নিয়ে ৩৮০ জন পর্যটক দ্বীপে গেছেন। ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত থাকায় ২৩০ জনের মতো পর্যটক ওইদিন ফেরত আসলেও বাকি আরও দেড় শতাধিক পর্যটক দ্বীপে থেকে গেছেন।
গত ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে পর্যটন মৌসুম শুরু হওয়ার পর থেকে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে বৈরী আবহাওয়ার কারণে এ পর্যন্ত দু’বার জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখা হয়। এর আগে বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে সাতদিনের জন্য এমভি ‘বার আওলিয়া’ নামে একটি জাহাজকে পরীক্ষামূলকভাবে ওই নৌপথে চলাচলের অনুমতি দেয় জেলা প্রশাসন।
সায়ীদ আলমগীর/এফএ/জেআইএম