৫ শতাধিক বাড়ির দেওয়ালে লিফলেট, টাকা না দিলে সন্তানদের অপহরণ হুমকি
সন্তানদের অপহরণের হুমকি দিয়ে বিভিন্ন অঙ্কের চাঁদা দাবি করে বাড়ির দেওয়ালে দেওয়ালে লিফলেট সেঁটে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। রোববার (১ অক্টোবর) সকালে ভোরের আলো ফুটতেই গ্রামবাসীরা যখন কাজে যাবেন ঠিক তখনই বাড়ির সামনে এমন হুমকি দেওয়া পত্র দেখে ভীত হয়ে পড়েন। ঘটনাটি বগুড়ার কাহালু উপজেলার মুরইল ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর গ্রামের।
গ্রামবাসীরা জানান, শনিবার দিনগত রাতের কোনো এক সময় দুর্বৃত্তরা বিষ্ণুপুর গ্রামের মাজগাড়ি, মিস্ত্রীপাড়া, মোল্লাপাড়া ও দপ্তরিপাড়ায় অন্তত পাঁচ শতাধিক বাড়ির দেওয়ালে এ লিফলেট সেঁটে হুমকি দিয়েছে। এ ঘটনায় ভীত পরিবারের অভিভাবকরা সন্তানদের স্কুল, মাদরাসায় পাঠাননি।
দেয়ালে সেটে দেওয়া লিফলেটে বিভিন্ন বাড়ির আর্থিক ও পারিবারিক অবস্থা বিবেচনা করে ২০০ টাকা থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা দাবি করা হয়েছে। ৬ অক্টোবরের মধ্যে দাবিকৃত চাঁদা ওই বিষ্ণুপুর গ্রামের লোয়া পুকুর পাড়ে সোলার লাইটের সঙ্গে স্থাপিত বাক্সে একটা কাগজে নিজের নাম লিখে জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশনাও দেয় দুর্বৃত্তদের ওই চক্র। তা না হলে ৭ অক্টোবরের পর থেকে গ্রামের ছেলে-মেয়ে হারিয়ে গেলে কোনো কিছু করার থাকবে না বলে হুমকি দেওয়া হয়।
দুর্বৃত্তরা কে বা কারা সেটা না খুঁজে, অল্প কিছু টাকার জন্য বাচ্চাদের বিপদে না ফেলার ব্যাপারেও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। ওই লিফলেটে বিশেষ দ্রষ্টব্যে বলা হয়েছে, ‘এ কাগজ আপনি পড়ছেন, তাহলে মনে করেন আপনার ছেলে-মেয়েকে তুলে আনতেও পারবো। দয়া করে টাকা দিয়েন আমরা ছেলেগুলো ভালো না। ভালো থাকবেন ৬ তারিখ পর্যন্ত।’
লিফলেটের শেষে প্রেরকের স্থানে ইংরেজিতে শ্যাডো লিখে তার ডানে ও বামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ব্যবহৃত ইমোজি ব্যবহার করা হয়েছে।
মুরইল ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর গ্রামের মাজগাড়ি পাড়ার বাসিন্দা নয়ন মিঞা বলেন, আমার বড় মেয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। ছোট ছেলের বয়স চার বছর। বাড়ির দেওয়ালে লিফলেট সেঁটে ২০০ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়েছে। আতঙ্কে মেয়েকে স্কুলে যেতে দেইনি। ছেলে-মেয়েকে নিয়ে ভয়ে ভয়ে বাড়িতেই অবস্থান করছি। ছোটবেলায় শুনতাম ঘোষণা দিয়ে ডাকাতি করা হতো। এখন আমাদের সন্তানদের অপহরণের ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে। পুলিশ দ্রুত দুর্বৃত্তদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসুক।
মুরইল ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর গ্রামের মোল্লাপাড়ার বাসিন্দা রিমু খাতুন বলেন, আমার বাড়ির দেওয়ালের লিফলেটে ৫ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করা হয়েছে। দুই ছেলেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। অবস্থা এরকম হলে সন্তানদের নিয়ে আর গ্রামে থাকা সম্ভব না। যারা কাজটি করেছে দ্রুত তাদের গ্রেফতার করা হোক।
মুরইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল জাগো নিউজকে বলেন, পাঁচ শতাধিক বাড়িতে দুর্বৃত্তরা রাতের আঁধারে চাঁদা দাবি করে লিফলেট সেঁটেছে। এতে এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে নেশাগ্রস্ত কিছু দুর্বৃত্ত এই কাজ করেছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসেছে। গ্রামের মসজিদে মাইকিং করে মানুষদের আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
বগুড়া জেলার সহকারী পুলিশ সুপার নাজরান রউফ বলেন, ঘটনাটি জানার পরেই বিষ্ণুপুর গ্রামে পুলিশের একাধিক টিম কাজ শুরু করেছে। যারাই এ কাজ করে থাকুক তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে। পুলিশ সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে।
এসজে/জিকেএস