সাভারে ৩ জনের মরদেহ উদ্ধার
নিহতদের গ্রামের বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ে চলছে স্বজনদের আহাজারি
ঢাকার সাভারে একই পরিবারের তিনজনের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় তাদের গ্রামের বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ে চলছে শোকের মাতম। স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে এলাকার পরিবেশ।
রোববার (১ অক্টোবর) নিহতদের গ্রামের বাড়ি পীরগঞ্জ উপজেলার কোষারাণীগঞ্জ ইউনিয়নের গরুড়ায় এমন চিত্র দেখা যায়। গেলো শনিবার সাভারের আশুলিয়ার জামগড়ায় বহুতল ভবনের একটি ফ্ল্যাট থেকে তাদের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
নিহত তিনজন হলেন- ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার কোষারাণীগঞ্জ ইউনিয়নের গরুড়া (ফুলবাড়ী) গ্রামের মৃত শহির উদ্দীন মুন্সীর ছেলে মুক্তার হোসেন বাবুল (৪৮), তার স্ত্রী শাহিদা বেগম (৩৫) ও তাদের ছেলে মেহেদী হাসান জয় (১২)। স্বামী-স্ত্রী দুজনই আশুলিয়ায় পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন।
বাবুলের প্রতিবেশী খোরশেদ আলী, জহিরুল ইসলাম, নরেশ সরকার, সাইফুল ইসলামসহ একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাবুলের বাবা আব্দুল হালিম গ্রামের মসজিদের ইমাম ছিলেন। তার চার ছেলে ও তিন মেয়ে। বাবুল ছিলেন সবার ছোট। বসতভিটা ছাড়া তাদের কিছুই ছিল না। ২০ বছর আগে খোরশেদ আলী বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যান। এর পাঁচ বছর পর তার স্ত্রী হামিদা খাতুনও মারা যান। তাদের পরিবারে অভাব-অনটন লেগে থাকত। বাবা মসজিদের ইমাম হওয়ার কারণে ছেলেরা চক্ষুলজ্জায় অন্যের বাড়িতে কাজে যেতেন না। বাবুল এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে ঢাকায় চলে যান। তার সঙ্গে প্রতিবেশীদের কখনো বিরোধ ছিল না বলেও দাবি করেন তারা।
বাবুলের বড় ভাই ইউসুফ আলী বলেন, ২০০৩ সালে সুমি আক্তার নামে এক গার্মেন্টস কর্মীকে বিয়ে করেন বাবুল। ২০০৭ সালে ওই ঘরে তাদের এক ছেলের জন্ম হয়। এরপর বাবুলের ওই স্ত্রী কাউকে কিছু না বলে নিখোঁজ হন। তার আর খোঁজ পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন: আশুলিয়ায় ফ্ল্যাট থেকে একই পরিবারের ৩ জনের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার
দাম্পত্যজীবনে কলহ ছিল কি না জানতে চাইলে ইউসুফ আলী বলেন, তাদের মধ্যে কখনো ঝগড়া হয়েছে বলে জানা নেই। এরপর ২০০৮ সালে শাহিদা আক্তার নামে আরেকজনকে বিয়ে করেন বাবুল। তাকে নিয়ে ঈদ উৎসবে গ্রামে বেড়াতে আসতেন। ছয়-সাত দিন থেকে আবার ঢাকায় চলে যেতেন।
বাবুলের বড় ভাবি জুলেখা বেগম বলেন, আগের স্ত্রীর রেখে যাওয়া সন্তান মেহেদীকে নিজের সন্তানের মতো স্নেহ-ভালোবাসা দিয়ে লালন করতেন শাহিদা। বিয়ের অনেক বছর পার হলেও তাদের এ ঘরে কোনো সন্তান আসেনি। গেলো রোজার ঈদে তারা বেড়াতে এসেছিলেন। এ সময় ছেলে মেহেদীকে গ্রামের একটি বিদ্যালয়ে ক্লাস সেভেনে ভর্তি করিয়ে দিয়ে তারা দুজন ঢাকায় চলে যান। কয়েক মাস পর মেহেদী বাবা-মাকে দেখতে ঢাকায় গেলে সেখানে থেকে যায়।
নিহত বাবুলের স্কুলজীবনের বন্ধু ও স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. মান্নান বলেন, বাবুল অভাব-অনটনে বড় হয়েছে। তার বাবা স্থানীয় একটি মসজিদের ইমাম ছিলেন। ২০ বছর আগে তিনি মারা যান। ওই সময় বাবুল এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে ঢাকায় চলে যান কাজের সন্ধানে। সেখানে গার্মেন্টসে কাজ নেয় বলে জানি। তবে ছোটবেলা থেকে সে শান্তশিষ্ট ও মিশুক প্রকৃতির ছিল।
তানভীর হাসান তানু/এসজে/জিকেএস