নেচে গেয়ে কারাম উৎসবে মাতলেন নৃগোষ্ঠীর লোকজন

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি নওগাঁ
প্রকাশিত: ০৯:২৩ পিএম, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩

ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর লোকজনের বড় ধর্মীয় উৎসব কারাম পূজা। প্রাচীনকাল থেকে এইদিনে নেচে গেয়ে উৎসব পালন করে আসছেন সমতলে বসবাসরত নৃগোষ্ঠীর লোকজন।

শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে নওগাঁর পোরশা উপজেলার ছাওড় ইউনিয়নের দক্ষিণ লক্ষ্মীপুর ঝর্ণা স্কুল মাঠে ঐতিহ্যবাহী কারাম উৎসব পালন করেছেন নৃগোষ্ঠীর সদস্যরা। এতে অংশ নেয় নওগাঁ ছাড়াও বিভিন্ন জেলার ১৮টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক দল।

এসময় তারা লাল-হলুদ-বেগুনি শাড়ি আর খোপায় বাহারি ফুল গুঁজে ঢোল-মাদলের তালে নাচে-গানে মাতোয়ারা হয়ে ওঠেন। বর্ণিল সাজে নেচে গেয়ে তুলে ধরেন নিজেদের ভাষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য।

নেচে গেয়ে কারাম উৎসবে মাতলেন নৃগোষ্ঠীর লোকজন

সরেজমিন দেখা যায়, দুপুরের পর থেকেই বিভিন্ন জায়গা থেকে নেচে গেয়ে আসতে শুরু করেন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বিভিন্ন সম্প্রদায়ের নৃত্য দলবদ্ধ নারী-পুরুষ। এরপর বিকেল হতেই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বিভিন্ন সম্প্রদায়ের নিজস্ব ভাষায় গাওয়া গান আর ছন্দময় নাচে অংশ নেন তরুণ-তরুণীসহ নানা বয়সী নারী-পুরুষ। ভাদ্রের বিকেলে এমন বৈচিত্র্যময় উৎসব দেখতে ঢল নামে ওঁরাও সম্প্রদায়ের পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের। ক্ষণিকের বিনোদনের এমন উৎসবে মুগ্ধ হন দর্শনার্থীরা।

কারাম মূলত একটি বৃক্ষ। নৃগোষ্ঠীর বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠীর মানুষের কাছে এটি একটি পবিত্র গাছ। মঙ্গলেরও প্রতীক। উপোসের মধ্য দিয়ে কারাম পূজা শুরু করেন নৃগোষ্ঠীর নর-নারীরা। তারা সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত উপোস থাকেন। বিকেল থেকে মাদল, ঢোল, করতাল ও ঝুমকির বাজনার তালে তালে নেচে গেয়ে এলাকা থেকে কারাম গাছের (খিল কদম) ডাল তুলে আনা হয়। এরপর তারা একটি পূজার বেদি নির্মাণ করেন। সূর্যের আলো পশ্চিমে হেলে গেলে সেই কারাম গাছের ডালটি পূজার বেদিতে রোপণ করা হয়। পুরোহিত উৎসবের আলোকে ধর্মীয় কাহিনি শোনান। সেইসঙ্গে চলে কাহিনির অন্তর্নিহিত ব্যাখ্যা। ব্যাখ্যা শেষ হলে বেদির চারধারে ঘুরে ঘুরে তরুণ-তরুণীরা নাচতে থাকেন।

নেচে গেয়ে কারাম উৎসবে মাতলেন নৃগোষ্ঠীর লোকজন

সাপাহার উপজেলা আদিবাসী পরিষদের সভাপতি ভুট্টু পাহান বলেন, প্রতিবছরই কারাম উৎসব করা হয়ে থাকে। এ উৎসবে সহোদর ধর্মা ও কর্মার জীবনী তুলে ধরা হয়। এতে করে আমাদের সংসারে অভাব-অনটন দূর হয়ে যায়। বিভিন্ন রোগ-বালাই থেকে রক্ষা হয়। এমন বিশ্বাস থেকে বংশপরম্পরায় এ কারাম পূজা চলে আসছে।

এদিকে, নাচ-গান শেষে এক সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। তিনি বলেন, কারাম উৎসব সমতলের নৃগোষ্ঠীদের প্রাণের উৎসব। ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালনের পাশাপাশি এটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষার বিশেষ উদ্যোগ। আগে ছোট আকারে কারাম উৎসব আয়োজন হলেও এখন ব্যাপক পরিসরে হচ্ছে। কারাম উৎসব সমতলে বসবাস করা নৃগোষ্ঠীর প্রাণের উচ্ছ্বাস। এ উৎসব বরেন্দ্র অঞ্চলকে মিলন মেলায় পরিণত করে।

নেচে গেয়ে কারাম উৎসবে মাতলেন নৃগোষ্ঠীর লোকজন

খাদ্যমন্ত্রী আরও বলেন, বর্তমান সরকার দেশের সব নাগরিকের সুষম উন্নয়নে বিশ্বাসী। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর প্রতি সরকারের সুদৃষ্টি রয়েছে। তাদের উন্নয়নে নানা কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। নৃগোষ্ঠীর জন্য সরকার বিশেষ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।

এমআরআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।