৩ ছাত্রকে ঝাড়ু-বেত দিয়ে পেটালেন শিক্ষক, তদন্তে কমিটি
ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার কুশঙ্গল নিকারীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তিন ছাত্রকে বেত ও ঝাড়ু দিয়ে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় দুই সদস্যদের তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আকতার হোসেন।
অপরদিকে বিদ্যালয়ের একটি কক্ষ বহিরাগত যুবকের কাছে কোচিং সেন্টার হিসেবে ভাড়া দেওয়ারও অভিযোগ আছে।
সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নিজেই। তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন, সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা (এটিও) সাইদুর রহমান স্বপন ও মো. কামরুজ্জামান রেজা।
ভুক্তভোগী তিন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অভিযোগ, রোববার বিদ্যালয়ে এসে বাংলা বই হারিয়ে ফেলে তৃতীয় শ্রেণির এক ছাত্র। এজন্য প্রধান শিক্ষক সেলিম হোসাইনের কাছে একটি বাংলা বই চাইলে তিনি লিমনকে হাতপাখা দিয়ে পেটানো শুরু করেন। একপর্যায়ে পাখাটি ভেঙে যায়। খবর পেয়ে লিমনের মা লিজা বেগম বিদ্যালয়ে ছুটে গেলে প্রধান শিক্ষক মারধরের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেন।
সপ্তাহ দুই-এক আগে ঝাড়ু বানানোর জন্য লোটাস নামে পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রকে নারিকেলের শলা আনতে বলা হয়। ওই ছাত্র শলা না দিতে পারায় শিক্ষকদের ভয়ে বিদ্যালয়ে আসা বন্ধ করে দেয়। এরপর বিদ্যালয়ের সামনের রাস্তা দিয়ে যাওয়ার পথে সহকারী শিক্ষক মো. ফেরদৌস তাকে ধরে আনে। এ সময় সুলতানা নামে আরেক সহকারী শিক্ষিকা তাকে ঝাড়ুপেটা করেন। এছাড়া দ্বিতীয় প্রান্তিক মূল্যায়ন (দ্বিতীয় সাময়িক) পরীক্ষার পরদিন বিদ্যালয় না যাওয়ায় পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র সাজিন গাজিকে বেত দিয়ে পিটিয়ে আহত করেন ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, কোনো ধরনের নিয়মনীতি না মেনে প্রধান শিক্ষক তার ইচ্ছেমতো স্কুল চালাচ্ছেন। নিজের মতো করে আসেন বিদ্যালয়ে, ছুটিও দেন ইচ্ছেমতো। নতুন সময়সূচি অনুযায়ী সকাল ৯টায় বিদ্যালয়ে ক্লাস শুরুর নিয়ম থাকলেও কয়েকজন শিক্ষক আসেন ১০-১১টার দিকে। বিদ্যালয়ে এসে কোনো রকমে দু-একটি ক্লাস নেন। এরপর বাড়ি যান তারা।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. ফেরদৌস বলেন, লোটাস নামে ওই ছাত্রকে রাস্তা থেকে বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে ডেকে নিয়েছিলাম। তখন সাবিহা ম্যাডাম তাকে ধমক দেন। তবে মারধর করেননি।
ঝাড়ু দিয়ে মারধরের অভিযোগ সহকারী শিক্ষিকা সাবিহা সুলতানাও অস্বীকার করেছেন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এস এম সেলিম হোসাইন জাগো নিউজকে বলেন, শিক্ষকদের মারধরের অভিযোগ সত্য হয়। এটিও স্যাররা তদন্তে এসেছিলেন, আমি আমার বক্তব্য লিখিত আকারে তাদের কাছে জমা দিয়েছি।
বিদ্যালয়ের একটি কক্ষ বহিরাগত যুবকের কাছে কোচিং সেন্টার হিসেবে ভাড়া দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (টিও) মো. আকতার হোসেন বলেন, ঘটনা তদন্তের জন্য দুজন সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তাকে ওই বিদ্যালয়ের পাঠানো হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
৩ এপ্রিল অনুমতি ছাড়া কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকা এবং বিদ্যালয় মেরামতের জন্য বরাদ্দের টাকা নয়-ছয় করার অভিযোগে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এস এম সেলিম হোসাইনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দেন সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা অনিতা রানী দত্ত। এরপর ৩০ আগস্ট একই দিন সেলিম হোসাইনসহ তিন শিক্ষক বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকায় তাদের শোকজ করেন সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা সাইদুর রহমান স্বপন।
আতিকুর রহমান/এসজে/এমএস