হাসপাতালে সরকারি মশারি জুটছে না ডেঙ্গুরোগীদের কপালে

আয়শা সিদ্দিকা আকাশী
আয়শা সিদ্দিকা আকাশী আয়শা সিদ্দিকা আকাশী , জেলা প্রতিনিধি মাদারীপুর
প্রকাশিত: ০৪:২৫ পিএম, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩

মাদারীপুরে প্রতিদিনই ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। সেই হিসেবে আলাদা কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি শহরে। এমনকি সদর হাসপাতালের ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের কক্ষগুলোতে একটিও সরকারি মশারি নেই। কক্ষগুলোও খুবই অপরিষ্কার ও অপরিচ্ছন্ন। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে পর্যাপ্ত মশারি আছে তাদের।

মাদারীপুর সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় মাদারীপুরের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ৫১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন। এরমধ্যে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে ১৭ জন, রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৯ ও শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৫ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এছাড়া জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত ২ হাজার ৯৯৩ জন ডেঙ্গুরোগী মাদারীপুরের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এরমধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২ হাজার ৮৮৯ জন। ভর্তি আছেন ১১৮ জন। মারা গেছেন দুজন।

সরেজমিনে কথা বলে জানা যায়, মাদারীপুর সদর হাসপাতালে ডেঙ্গুরোগীরা ভর্তি হলেও তাদের ভাগ্যে জোটেনি একটি সরকারি মশারি। কেউ নিজ বাড়ি থেকে মশারি নিয়ে এসেছেন। কেউ কয়েল জ্বালিয়ে থাকছেন। তবে বেশিরভাগ রোগীই মশারি ছাড়া।

jagonews24

এছাড়া ডেঙ্গু রোগীদের কক্ষগুলো অপরিষ্কার। জানালা, বেডের নিচে ও ফ্লোরে ময়লা জমে আছে। টয়লেটগুলোও জলাবদ্ধসহ ময়লা-আবর্জনায় ভর্তি। এমনকি টয়লেটের বেসিনগুলোতেও ময়লার স্তূপ দেখা যায়।

জানা যায়, মাদারীপুর সদর হাসপাতালটি ১০০ শয্যা থেকে ২৫০ শয্যায় উন্নিত করার পর বহুতল ভবন করা হলেও দীর্ঘদিন তা চালু হয়নি। পরে প্রায় সাড়ে তিন বছর পর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ৫০ শয্যা বাড়িয়ে দেড়শো শয্যা চালু করা হয়। এরপর থেকে নতুন ভবনেই রোগীদের সব ধরনের সেবা দেওয়া হচ্ছে। তবে মাত্র সাত মাসেই হাসপাতালটিতে অপরিষ্কার ও অপরিচ্ছন্নতা দেখা দিয়েছে। হাসপাতালের ফ্লোর ও জানালায় ময়লা জমেছে। তাছাড়া হাসপাতালের টয়লেটগুলোর অবস্থাও খুব খারাপ। বেসিনগুলো ময়লায় ভরা। টয়লেটগুলোও নোংরা।

কালকিনি উপজেলার শাহাবুদ্দিন তালুকদার বলেন, ‘আমি মাকে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করেছি। তার ডেঙ্গু হয়েছে। রোববার ভর্তি হওয়ার পর কেবিনে এসে দেখি ময়লা-আবর্জনায় ভরা। আমি নিজে ঝাড়ু কিনে এনে রুম পরিষ্কার করেছি। টয়লেটের যে অবস্থা তাতে সেখানে যাওয়া যায় না। কিছু নার্সের ব্যবহার খুব খারাপ। সেবা দেওয়াতো দূরের কথা, ডাকলেও শোনে না।’

jagonews24

অন্য এক রোগীর বাবা জহিরউদ্দিন তালুকদার বলেন, ‘আমার ছেলে এখানে ভর্তি আছে তিনদিন ধরে। এখন পর্যন্ত মশারি পাইনি। রুমগুলো অপরিষ্কার। নার্সদের ডাকলেও আসেন না। আমি স্যালাইন কিনে এনেছি। এরপর নার্সদের বললেও তারা আসেন না। পরে একঘণ্টা ঘোরার পর তারা এসে আমার ছেলেকে স্যালাইন দেন।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রোগী বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এখানে ভর্তি হওয়ার পর নার্সের কাছে মশারি চেয়েও পাইনি। নার্স বলেছেন, আমরা মশারি দেই না, বাড়ি থেকে নিয়ে আসেন।

রোগী আরমানের মা মিনারা বেগম বলেন, আমরা কোনো মশারি পাইনি। তাছাড়া রুমের মধ্যে অনেক ময়লা ছিল। হাসপাতালের আয়াকে বলে, অনেক অনুরোধ করে পরিষ্কার করিয়েছি।

মাদারীপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. নুরুল ইসলাম বলেন, আমাদের এখানে পর্যাপ্ত পরিমাণে মশারি আছে। রোগীদের মশারি না দেওয়ার কোনো কারণ নেই। আমি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে ডেঙ্গুরোগীর কক্ষগুলোতে মশারি বাঁধার জন্য হুকের ব্যবস্থা করেছি। যেহেতু আপনি জানালেন, খোঁজ নিয়ে দেখবো।

তিনি হাসপাতাল ও টয়লেট অপরিষ্কারের বিষয়ে বলেন, আমাদের জনবল সংকট রয়েছে। করোনাকালীন ও চুক্তিভিত্তিক প্রায় ৩০ জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী চলে গেছেন। ১০০ শয্যার হাসপাতালের লোকজন দিয়েই দেড়শো শয্যার হাসপাতালের কাজ চালাতে হচ্ছে। তাই যতটুকু সম্ভব পরিষ্কার করা হচ্ছে। লোকবল থাকলে এই সমস্যা হতো না। তাছাড়া নতুন ভবনের টয়লেটগুলো সামনের দরজার দিকে ঢালু। তাই পানি জমে থাকে। এ ব্যাপারেও গণপূর্ত বিভাগের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে।

এফএ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।