চাঁপাইনবাবগঞ্জ

নদীর তলদেশে ছিঁড়ে গেছে সাবমেরিন ক্যাবল, অন্ধকারে ৬ গ্রাম

সোহান মাহমুদ সোহান মাহমুদ , চাঁপাইনবাবগঞ্জ চাঁপাইনবাবগঞ্জ
প্রকাশিত: ১২:১৩ পিএম, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩

চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে স্থাপিত সাবমেরিন ক্যাবল উদ্বোধনের ১৭ মাসের মাথায় ছিঁড়ে গেছে। এতে ১২ দিন ধরে বিদ্যুৎহীন ছয় গ্রামের দেড় হাজার মানুষ। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন তারা।

জানা যায়, ২০২১ সালের ডিসেম্বরে সদর উপজেলার ইসলামপুরের চাটাইডুবী বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র এলাকার মীরেরচর থেকে বাতাস মোড় পর্যন্ত ৪০ কিলোমিটার এবং বাতাস মোড় থেকে নিশিপাড়া পর্যন্ত পদ্মা নদীর তলদেশ দিয়ে ১৩ দশমিক ৮ কিলোমিটার সাবমেরিন ক্যাবল এবং ১০৭ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে পদ্মার চরে বিদ্যুৎ সরবরাহের উদ্বোধন করা হয়। দুই উপজেলার ৪ হাজার ২০০ গ্রাহক বিদ্যুৎ সুবিধায় আসে।

কিন্তু ১৭ মাসের মাথায় ৪০ কিলোমিটার সাবমেরিন ক্যাবলের তিনটি ফেজের মধ্যে একটি ও ১৩ দশমিক ৮ কিলোমিটার কেবলের দুই দফায় তিনটি ফেজের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ফলে ১২ দিন ধরে বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন থাকলেও এর সমাধান দিচ্ছে না পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। কবে নাগাদ এ সংকট নিরসন হবে, তা বলতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। এ প্রকল্পে খরচ হয়েছিল ৭০ কোটি টাকা। এর মধ্যে দুই কোটি টাকা শুধু নদীর তলদেশে সাবমেরিন কেবল স্থাপনেই ব্যয় হয়।

স্থানীয়রা বলেন, ১০ সেপ্টেম্বর রাতে পদ্মা নদীর তলদেশে বসানো সাবমেরিনের সব ক্যাবল ছিঁড়ে যায়। ফলে বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে শিবগঞ্জ উপজেলার পাকা ইউনিয়নের চরলক্ষ্মীপুর, দক্ষিণ পাকা, নিশিপাড়া চর ও কদমতলা এবং উজিরপুর ইউনিয়নের সেতারাপাড়া গ্রাম। এছাড়া সদর উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের সূর্যনারায়ণপুরে বিদ্যুৎসেবা বন্ধ হয়ে যায়।

স্থানীয় বাসিন্দা নবিবুর রহমান জানান, দুই হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আছেন। বাকি দুই হাজার ২০০ গ্রাহকের সাতদিন ধরে বিদ্যুৎসেবা বন্ধ থাকায় তারা জমিতে সেচ দিতে পারছেন না। বাড়তি খরচে শ্যালো মেশিনে সেচ দিতে হচ্ছে। অনলাইনে মোবাইল ব্যাংকিং, মোবাইল ফোনের চার্জ, নেটওয়ার্ক সেবার পাশাপাশি সরিষা, ধান ও গম ভাঙানো মেশিনও বন্ধ আছে।

তবে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (টেকনিক্যাল) ফিরোজ কবিরের দাবি, চরের মাত্র ৬০০ গ্রাহকের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। সদর উপজেলার চরাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক। টেকনিক্যাল টিমকে জানানো হয়েছে। তারা এলে সংযোগটি পুনস্থাপিত হবে।

শিবগঞ্জ উপজেলার চরপাকা এলাকার বাসিন্দা এস এম আল আমিন জুয়েল বলেন, দিকনির্দেশনা ঠিক না থাকার কারণেই মূলত এমনটা হয়েছে। হয়তো অনির্দিষ্টকালের জন্য বিদ্যুৎহীন হয়ে গেলো চরাঞ্চলবাসী। আমরা এর প্রতিকার চাই। এখন ডিজিটাল যুগে এসে মানুষ কীভাবে বিদুৎহীন থাকবে।

কদমতলা এলাকার বাসিন্দা শাহজাহান আলী বলেন, ১২ দিন ধরে বিদ্যুৎসেবা পাচ্ছি না। ফলে বিভিন্ন সেবা পেতে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। এলাকার চেয়ারম্যান-মেম্বারকে বিষয়টি জানালেও তারা এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেননি।

শিবগঞ্জ উপজেলার পাকা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল মালেক জাগো নিউজকে বলেন, আমি সমস্যার কথা জানানোর পরও পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি। এ মাসের শুরুর দিক থেকেই সাবমেরিন ক্যাবলের দুটি সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পরও কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা না নেওয়ার কয়েকদিনের মধ্যে বাকি দুটি সংযোগও বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এতে লোডশেডিংয়ের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। ১২ দিন ধরে চরাঞ্চলে বিদ্যুৎ নেই।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার ছানোয়ার হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ১০ সেপ্টেম্বর রাতে সাবমেরিন ক্যাবলের তার ছিঁড়ে যাওয়ার খবর পেয়েছি। ৭০ কোটি টাকার প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পটি সচল রাখতে কারিগরি সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠানকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।

এসজে/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।