পুঁজি হারানোর শঙ্কায় পাটচাষিরা

জামাল হোসেন
জামাল হোসেন জামাল হোসেন , উপজেলা প্রতিনিধি, বেনাপোল (যশোর) বেনাপোল (যশোর)
প্রকাশিত: ০৫:১২ পিএম, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩

উৎপাদন খরচ বাড়লেও বিক্রির সময় দাম পাচ্ছেন না যশোরের শার্শা-বেনাপোলের পাটচাষিরা। এবছরও বাজারদর নিম্নমুখী হওয়ায় উৎপাদন খরচ তুলতে পারছেন না তারা। এতে পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হওয়ার পথে হাজার হাজার কৃষক।

শার্শা উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, উপজেলায় এবার পাটচাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ হাজার হেক্টর। আর চলতি মৌসুমে ৫ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে উচ্চ ফলনশীল পাটের আবাদ হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি। পাশাপাশি ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকরা পাট বিক্রি করে লাভের আশা করছিলেন। কিন্তু বাজারে কাঙ্ক্ষিত দাম না পেয়ে তারা হতাশ হচ্ছেন।

কৃষকরা বলছেন, পাটচাষের শুরুর দিকে কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টি পেলেও মাঝামাঝি সময়ে এসে শার্শা-বেনাপোলে অনাবৃষ্টি দেখা দেয়। এতে সেচনির্ভর হয়ে পাটচাষে খরচ বেড়ে যায়। এমনিতে সার-কীটনাশক, শ্রম খরচ আগের চেয়ে বেশি, অন্যদিকে পাট কেটে জাগ দিতেও বাড়তি শ্রমিক খরচ হয়েছে তাদের। অনাবৃষ্টিতে খাল-বিলে পানি না থাকায় দূর-দূরান্তে যেখানে পানি ছিল সেখানে জাগ দিতে গিয়ে খরচ বেড়েছে। তবে সেসব বিবেচনায় বাজারে পাটের দাম পাওয়া যাচ্ছে না।

বেনাপোলের ভবারবেড় গ্রামের পাটচাষি জাহিদুল ইসলাম জানান, এ বছর তিনি ১২০ শতক জমিতে পাটচাষ করেছেন। এতে তার খরচও হয়েছে অনেক। তাছাড়া এবার তেমন বৃষ্টি না হওয়ায় পাট কেটে জাগ দেওয়ার কোনো জায়গা পাননি। মেশিন চালিয়ে খানা গর্তে পানি দিয়ে পাট জাগ দিতে হয়েছে। পাটের ফলনেও তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন। তবে পাটের বাজারমূল্য আশানুরূপ না পাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা তার।

শার্শার স্বরূপদাহ এলাকার চাষি আব্দুল মান্নান বলেন, পাটচাষের সময় এবার নানা বিড়ম্বনার শিকার হন তারা। প্রথমত বীজ বপণের সময় খরা হওয়ায় ঠিকমতো চারা গজায়নি। এতে ব্যাহত হয়েছে পাটের ফলন। অন্যদিকে এক বিঘা জমিতে হালচাষ ও বীজ বপণ থেকে শুরু করে সার-কীটনাশকের খরচ, পানি সেচ, শ্রমিক খরচ, জাগ দেওয়া, আঁশ ছড়ানোসহ ঘরে তোলা পর্যন্ত খরচ পড়েছে ১৫-১৬ হাজার টাকা। অথচ মৌসুমের শুরুতে বাজারে পাট ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকা বিক্রি হলেও এখন তা বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৯০০ থেকে ২ হাজার টাকা মণ। গত বছর এই পাট ৩ হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে।

শার্শার নাভারন, বাগআঁচড়া ও বেনাপোলের পাটের বাজারে পাইকারি ব্যবসায়ী জাবির হোসেনের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, দীর্ঘদিন ধরে বাজার থেকে তিনি পাট কিনে খুলনাসহ বিভিন্ন জেলায় পাঠান। কিন্তু এবছর বড় বড় মোকামে বেচাকেনা না থাকায় পাটের দাম কমে গেছে। মোকামে চাহিদা না বাড়লে পাটের দাম বাড়বে না। এছাড়া গত বছরের পাট এখনো গোডাউনে আছে বলে তিনি জানান।

jagonews24

আব্দুল খালেক নামে আরেক পাইকারি ব্যবসায়ী বলেন, আমাদের বাজারের পাটের মোকামে পাটের তিন ধরনের দাম রয়েছে। ভালো মানের পাট যেগুলোকে আমরা ‘এ-গ্রেড’ বলি সেগুলো ২২শো টাকা মণ, ‘বি-গ্রেডের’ ১৯শো থেকে ২ হাজার ও ‘সি-গ্রেডের’ মানের পাট ১৮শো টাকা মণ বিক্রি হচ্ছে।

তিনি বলেন, এ বছর পাট জাগ দেওয়ার উপযুক্ত সময় বৃষ্টি না হওয়ায় পানির অভাবে জাগ দেওয়া নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েন কৃষক। যেকারণে যত্রতত্র জায়গায় তারা পাট জাগ দেওয়ার কারণে পাটের তেমন কোনো মান নেই। এ কারণে এ গ্রেডের পাটের খুবই সংকট। অথচ মিলগুলোতে এ গ্রেডের পাটের চাহিদা বেশি।

শার্শা উপজেলা কৃষি অফিসার দীপক কুমার সাহা বলেন, চলতি মৌসুমে যশোরের শার্শায় ৫ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। যা গত বছরের চেয়ে ১০ হেক্টর বেশি। পাটচাষিদের সঠিক দাম পাওয়ার বিষয়টি জেলা কৃষি বিপণন অধিদপ্তর দেখে। এ বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মঞ্জুরুল হক বলেন, নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও এবছর আমাদের জেলার চাষিরা পাটের লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করেছেন। ফলনও ভালো হয়েছে। তবে শেষ সময়ে পর্যাপ্ত বৃষ্টি না পেয়ে কিছুটা সংকটে পড়েন তারা।

তিনি বলেন, পাটের দাম আপাতত কিছুটা কম হলেও খুব দ্রুত সময়ে দাম বেড়ে যাবে বলে আশা করছি। দাম বাড়লে কৃষক লাভবান হবেন এবং ভবিষ্যতে জেলায় পাটচাষির সংখ্যা বাড়বে।

এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।