কক্সবাজারে সপ্তাহজুড়ে বিচ কার্নিভাল, থাকছে ছাড়ের ছড়াছড়ি
গত বছরের চেয়ে জমকালো আয়োজনে এবারো পর্যটন মৌসুমকে বরণের উদ্যোগ চলছে। ২৭ সেপ্টেম্বর বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত হবে সপ্তাহব্যাপী বিচ কার্নিভাল। ‘পর্যটনে পরিবেশবান্ধব বিনিয়োগ’ প্রতিপাদ্যে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এ দিন দেশের পর্যটন রাজধানী খ্যাত কক্সবাজারে শুরু হবে নানা আয়োজন, এমনটি জানিয়েছেন পর্যটন মেলার আহবায়ক ও কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. ইয়ামিন হোসেন।
তিনি বলেন, পর্যটন মৌসুমকে বরণে ২৭ সেপ্টেম্বর বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে সপ্তাহব্যাপী পর্যটন মেলা ও বিচ কার্নিভাল করছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। গতবারের চেয়ে এবারের আয়োজন হবে আরও বড়। দু’শতাধিক স্টলের পাশাপাশি নতুনভাবে এবার যোগ হচ্ছে বিচ ম্যারাথন। ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত উৎসব ঘিরে থাকছে নানা আয়োজন।
পর্যটন ব্যবসায়ীদের মতে, কক্সবাজারকে উৎসবে মাতোয়ারা রাখতে এরই মধ্যে হোটেল-মোটেল রিসোর্টে ৫০-৬০ শতাংশ এবং রেস্তোরাঁয় ১০-১৫ শতাংশ ও কক্সবাজারগামী বিমান ও দূরপাল্লার বাস কর্তৃপক্ষও মূল্যছাড়সহ বিশেষ সুবিধার ঘোষণা দিয়েছে।
আয়োজকরা জানান, পর্যটকদের আনন্দ দিতে এবং কক্সবাজারের পরিচিতি বিশ্বময় করতে আয়োজিত পর্যটন মেলা ও বিচ কার্নিভাল উপলক্ষে বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৭টায় উন্মোচন হবে ‘থিম সং’। ২১ সেপ্টেম্বর থেকে ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিনই সকাল ১০টা থেকে ঘণ্টাব্যাপী চলবে সৈকত এলাকায় পরিচ্ছন্নতা অভিযান। ২৫ সেপ্টেম্বর দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হবে শিশুদের চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতা। ২৭ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টায় সৈকতের লাবনী পয়েন্ট থেকে শুরু হয়ে সুগন্ধা পয়েন্ট ঘুরে পুনরায় লাবনী পয়েন্ট পর্যন্ত থাকছে বর্ণাঢ্য র্যালি। এরপর সকাল সাড়ে ৯টায় উদ্বোধন হবে পর্যটন মেলা ও বিচ কার্নিভাল। সকাল পৌনে ১০টায় থাকছে বৃক্ষরোপণ ও আলোচনা সভা। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকে মহেশখালী জেটি পর্যন্ত চলবে নৌ-র্যালি।
কক্সবাজার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইয়ামিন হোসেন বলেন, মেলায় প্রতিদিনই থাকবে নানা আয়োজন। এসবের মধ্যে আছে সার্কাস প্রদর্শনী, বিচ বাইক র্যালি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ডিজে শো, আতশবাজি, রোড শো, সেমিনার, ঘুড়ি উৎসব, ম্যাজিক শো, ফায়ার স্পিন, লাইফ গার্ড রেসকিউ প্রদর্শনী, ফানুস উৎসব, সার্ফিং প্রদর্শনী, বিচ ম্যারাথন, বিচ ভলিবল, পুরস্কার বিতরণী ও সমাপনী অনুষ্ঠান এবং কনসার্ট।
তিনি আরও বলেন, পর্যটক ও দর্শনার্থীদের বিনোদনে এবারের মেলায় রাখা হচ্ছে বিনামূল্যে সার্কাস প্রদর্শনী। লোকাল শিল্পীর পাশাপাশি বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শিল্পীরা আসবেন। আসছেন কুষ্টিয়া লালন একাডেমি ও সিলেট আঞ্চলিক ভাষার শিল্পীরা। এছাড়াও সুনামগঞ্জ থেকে আগত শিল্পীরা পরিবেশন করবেন হাসন রাজার গানসহ আঞ্চলিক ভাষায় নানা গান। ময়মনসিংহ থেকে মহুয়াপালা, কুড়িগ্রাম থেকে ভাওইয়া গানের শিল্পীরা আসবেন। বান্দরবান এবং খাগড়াছড়ি থেকে আসবেন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর টিম। চট্টগ্রাম থেকে আঞ্চলিক গানের খ্যাতিমান শিল্পী প্রেম সুন্দর ছাড়াও আসবেন জাতীয় পর্যায়ের শিল্পীরা। একেকদিন মঞ্চে গাইবেন লিজা, ঐশী, আভাসের তুহিন, রবি চৌধুরী, নিশিতা বড়ুয়াসহ আরও অনেক জাতীয় শিল্পী। সাতদিন গানে আড্ডায় স্পোর্টসসহ বিভিন্ন ইভেন্টের মাধ্যমে পর্যটকসহ এলাকার সকল বাসিন্দাদের মাতিয়ে রাখবে পর্যটন মেলা।
সৈকতের লাবনী পয়েন্টে ট্যুরিস্ট পুলিশ কার্যালয় ও বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির তথ্য অফিসের সামনে গতবারের মতো গড়া হচ্ছে মঞ্চ। সড়কের দু’পাশে বসানো হচ্ছে স্টল। মেলা উপলক্ষে মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা, সমুদ্র সৈকতের ঘোড়ার বহর, বিচ বাইকসহ ঐতিহ্য প্রদর্শনীর পাশাপাশি পর্যটন শিল্পের বিকাশ ও প্রসারে বিভিন্ন স্লোগান সম্বলিত প্ল্যা-কার্ড হাতে বের করা হবে বর্ণাঢ্য র্যালি।
এদিকে, মেলা উপলক্ষে নানান প্যাকেজ ঘোষণা করছে তারকা হোটেলগুলো। ছাড় দেওয়া হচ্ছে হোটেল ভাড়া ও খাবার মূল্যেও।
তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইসের পরিচালক আবদুল কাদের মিশু বলেন, পর্যটন শিল্পের বিকাশে পহেলা বৈশাখ, ফাগুন উৎসবসহ বাঙ্গালিয়ানার সব আয়োজন আমরা গুরুত্বের সঙ্গে বৈচিত্র্যময় নানা আয়োজন করে পর্যটক ও স্থানীয়দের বিনোদিত করি। এবারের পর্যটন মেলা উপলক্ষে আমরা ২৭-২৯ সেপ্টেম্বর তিনদিনের ইলিশ উৎসবের আয়োজন রেখেছি। ৯৯৯ টাকা থেকে বিভিন্ন মূল্যে বৈচিত্র্যময় স্বাদে আটটি প্যাকেজে ইলিশের রসনা ভোগ করতে পারবেন পর্যটক ও দর্শনার্থীরা। সঙ্গে আছে রুম ভাড়ায় বিশেষ ছাড়ও।
কক্সবাজার হোটেল-গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, আমরা মনে করি কক্সবাজার বিশ্ববাসীর নানাবাড়ি। নানাবাড়িতে আয়োজন না থাকলে বেড়ানোর মজা জমে না। তাই পর্যটন দিবস উপলক্ষে আমরা পর্যটকদের ভিন্ন মাত্রার আনন্দ দিতে প্রস্তুত। এ সময়টা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় রেখে নানান ছাড় রাখা হচ্ছে। যদিও সারাবছরই আমরা পর্যটক সেবায় সিদ্ধহস্ত।
হোটেল কক্স-টুডে’র সহকারী মহাব্যবস্থাপক আবু তালেব শাহ বলেন, মেলা উপলক্ষে ৫০ শতাংশ বিশেষ ছাড় থাকবে রুমে আর রেস্তোঁরায় ১০ শতাংশ ছাড় পাবেন পর্যটকরা। যা চলবে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত।
এডিএম মো. ইয়ামিন হোসেন বলেন, মেলা আয়োজনে সরকারি কোনো বরাদ্দ নেই। তবে পর্যটন ব্যবসায়ীদের নানা সংগঠন, তারকা হোটেল, টোয়াক, হোটেল গেস্ট হাউজ মালিক সমিতি, বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির নিজস্ব তহবিল, স্টল ভাড়াসহ অন্যান্য কয়েকটি খাত থেকে পাওয়ার আশায় প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ের এ মেলার আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পর্যটনের স্বার্থে এটি একটি বড় আয়োজন। আসুন সবাই মিলে মেলাটি সুন্দরভাবে সমাপ্ত করি।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. জিল্লুর রহমান বলেন, সারাবছর পর্যটক নিরাপত্তায় আমরা সচেষ্ট থাকি। মেলা উপলক্ষে নেওয়া হয় বিশেষ সতর্কতা। এবারও এর ব্যত্যয় ঘটবে না। কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বলয়ে ঢাকা থাকবে সৈকত ও মেলা প্রাঙ্গণ।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মো. রফিকুল ইসলাম, বিশ্বের দীর্ঘতম সৈকত নগরী কক্সবাজারে এখন সারাবছরই পর্যটক সমাগম থাকছে। পর্যটন দিবস উপলক্ষে সপ্তাহব্যাপী মেলা কক্সবাজারকে বিশ্বময় আরও সমাদৃত করবে। সেটা মাথায় নিয়ে সামগ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে আমারাও প্রস্তুত। নিয়মিত টহলের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও বিশেষ টিম মাঠে কাজ করবে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক ও বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতি মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, পর্যটন মেলা ও বিচ কার্নিভালে লোকারণ্য হবে কক্সবাজার এমনটিই আশা করছি। মেলায় পর্যটকদের চাহিদাসম্পন্ন জিনিসপত্র তুলে ধরা হবে। সার্বিক নিরাপত্তায় মাঠে থাকবে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সমেত ভ্রাম্যমাণ আদালত।
সায়ীদ আলমগীর/এসজে/জেআইএম