টিকটক করতে দরকার আইফোন, নিজের অপহরণ নাটক সাজালো কিশোর

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক বগুড়া
প্রকাশিত: ০৮:০০ পিএম, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩
প্রতীকী ছবি

বগুড়ার গাবতলী উপজেলার একটি কওমি মাদরাসার নবম শ্রেণির ছাত্র আফজাল রহমান (ছদ্মনাম)। ১৫ বছর বয়সী এ কিশোর বছরের শুরুতেই বাবার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকায় এ-৫৩ মডেলের একটি স্মার্টফোন কিনে নেয়। সে এ ফোন দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের নানারকম ভিডিও টিকটকে আপলোড করতো।

টিকটকে তার অনুসারীর সংখ্যাও কম নয়। মাত্র কয়েক মাসেই হাজার হাজার অনুসারী তৈরি করেছে আফজাল। তাই টিকটকে আরও বেশি মানসম্মত ভিডিও তৈরি করতে আইফোন কেনার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে কয়েক দফায় কৃষি ব্যবসায় জড়িত বাবাকে অনুরোধ করেও সাড়া পায়নি আফজাল। তাই বাবার কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিতে চাচাতো ভাই খায়রুল ইসলাম লিমনকে নিয়ে অপহরণ নাটক সাজায়।

পরিকল্পনামাফিক নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার পর ভাইয়ের বন্ধু আকাশের মাধ্যমে বাবার কাছে তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ চেয়ে ফোন করা হয়। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে এলো তাদের সাজানো ‘অপহরণ’ নাটক।

আরও পড়ুন: আতঙ্ক তৈরি করতে অঙ্গ কেটে টিকটকে ভিডিও প্রকাশ করতো গ্রুপটি

শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) রাতে বগুড়া শহরের মালগ্রাম এলাকা থেকে তাকে উদ্ধার করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এসময় তার চাচাতো ভাই খায়রুল ইসলাম লিমন ও মেহেদী হাসান নামের এক যুবককে আটক করা হয়। তবে মুক্তিপণের টাকা দাবি করা আকাশ এখনো পলাতক।

সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) পুলিশ জানায়, আফজাল তার চাচাতো ভাই লিমনের সহযোগিতায় নিজেই আত্মগোপনে গিয়ে অপহরণের নাটক সাজায়। পরিবারের কাছ থেকে টাকা আদায় করতেই লিমনের বন্ধু আকাশকে দিয়ে বাবাকে মুক্তিপণের জন্য ফোন দেওয়ানো হয়।

কিশোর আফজাল রহমান গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার বাসিন্দা। সে জানায়, গত ১০ সেপ্টেম্বর বগুড়া শহরের মালগ্রামে চাচাতো ভাই লিমনের ছাত্রাবাসে ঘুরতে আসে সে। এসময় লিমন ও আকাশকে অপহরণ নাটকের পরিকল্পনার কথা জানানো হয়। তাদের মধ্যে সমঝোতা হয় আইফোন কেনার জন্য মুক্তিপণের এক লাখ টাকা পাবে আফজাল। আর বাকি টাকা অন্যরা ভাগাভাগি করে নেবে। তবে মুক্তিপণের টাকা কোনো অবস্থাতেই দুই লাখের নিচে তারা গ্রহণ করবে না।

আরও পড়ুন: প্রেমিকের খোঁজে বিজ্ঞাপন, একদিনে ৩ হাজারেরও বেশি আবেদন!

পরিকল্পনা অনুযায়ী বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) আফজাল মাদরাসা থেকে বই কেনার কথা বলে বেরিয়ে আসে। সে চাচাতো ভাই লিমনের বন্ধু আকাশের সঙ্গে বগুড়া শহরের বিভিন্ন স্থানে ঘোরাফেরা করে। পরে রাতে সদর উপজেলার পীরগাছায় এক পতিত জমিতে যায়। আর সন্দেহ এড়াতে লিমন ছাত্রাবাসে থেকে পরিবারের সবার মতিগতি পর্যবেক্ষণ করতে থাকে।

আফজালের বাবাসহ পরিবারের বাকি সদস্যরা শুক্রবার থেকেই আফজালের খোঁজ শুরু করেন। এদিকে পতিত ওই জমিতে কিশোর আফজাল আকাশকে নিয়ে শনিবার রাত পর্যন্ত অবস্থান করে। পরে রোববার ভোরের দিকে আকাশ ও সে বগুড়া শহরের তিনমাথা রেলগেট এলাকায় যায়। সেখানে আকাশ অপহরণকারী সেজে আফজালার বাবার কাছে তিন লাখ টাকা দাবি করে। এরপরে তারা ফোন বন্ধ করে মালগ্রামে লিমনের ছাত্রাবাসে চলে আসে।

আরও পড়ুন: সড়কে টিকটক করার সময় অটোরিকশার ধাক্কায় কিশোর নিহত

বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার স্নিগ্ধ আখতার বলেন, আফজালের বাবা রোববার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে আমাদের অভিযোগ জানালে তদন্ত শুরু হয়। ঘটনা প্রবাহ জানার পর লিমনের ওপর সন্দেহ থেকে তার বন্ধু মেহেদীকে ডিবি কার্যালয়ে ডেকে আনা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে সে পুরো অপহরণ নাটকের তথ্য ফাঁস করে দেয়। পরে ছাত্রাবাসে অভিযান চালিয়ে ওই মাদরাসাছাত্রকে উদ্ধার ও লিমনকে আটক করা হয়।

স্নিগ্ধ আখতার বলেন, আফজাল স্বেচ্ছায় নিখোঁজ ছিল। বিষয়টি পুলিশ সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে নেয়। তবে আফজালের বাবা কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ না করায় আটকদের মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

এসআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।