বাবা শয্যাশায়ী, স্কুল ছেড়ে চা বিক্রি করছে সুমাইয়া
‘চা বিক্রি না করলে খাবো কী? বৃদ্ধ বাবার ওষুধ কেনার টাকা পাবো কই? এজন্য স্কুল ছেড়ে বাবার চায়ের দোকানে বসে চা বিক্রি করি। এতে দিনে ২০০-৩০০ টাকা আয় হয়। এ দিয়ে সংসারে চাল-ডাল কেনার পর বাকি টাকা দিয়ে বাবার ওষুধ কিনি। গত একবছর এভাবেই চলছে।’
কথাগুলো বলছিল সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার গাঁড়াদহ ইউনিয়নের গাঁড়াদহ গ্রামের সায়েম আলী ফকিরের (৬৫) মেয়ে সুমাইয়া খাতুন (১১)। সে স্থানীয় ব্র্যাক স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী। বাবা অসুস্থ। কোনো কাজ করতে পারেন না। এজন্য গত একবছর ধরে পড়াশোনা ছেড়ে স্থানীয় হাটখোলা বাজারে চা বিক্রি করছে সুমাইয়া।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সুমাইয়ার বাবা সায়েম আলী যক্ষ্মা রোগী। তার চিকিৎসার পেছনে অনেক টাকা খরচ হয়েছে কিন্তু সুস্থ হননি। এখন তিনি শয্যাগত।
আরও পড়ুন: তিন কিলোমিটার পথ হামাগুড়ি দিয়ে কলেজে যায় ফজলুল
মেয়ের কষ্টের কথা জানিয়ে বাবা সায়েম আলী ফকির জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমার নিজস্ব কোনো বাড়িঘর নেই। সরকারি খাস জায়গায় কিছু লোকের সহযোগিতায় একটি দোচালা ঘর তুলে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বসবাস করি। এতো অভাবের মধ্যে আমি দুরারোগ্য যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হয়ে বিছানায় মৃত্যুর প্রহর গুনছি। সংসার চালানোর মতো আর কোনো উপায় না থাকায় মেয়েটা চা বিক্রি করে। ওই টাকা ওষুধ কিনতেই শেষ হয়ে যায়।’
সুমাইয়া জাগো নিউজকে বলে, ‘আমি আবার স্কুলে যেতে চাই। পড়ালেখা করতে চাই। বিত্তবানরা আর্থিক সহযোগিতা করলে আমি আবার স্কুলে যেতে পারতাম। পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পাড়তাম।’
সমাজের বিত্তবানদের সুমাইয়ার পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে স্থানীয় আব্দুল মান্নান বলেন, ‘মেয়েটা অনেক মেধাবী। পড়াশোনা সুযোগ পেয়ে ভালো কিছু করতে পারবে।’
গাঁড়াদহ ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার ইয়াকুব আলী আকন্দ জাগো নিউজকে বলেন, ‘সায়েম আলী ফকিরের কোনো ছেলেসন্তান নেই, শুধু চার মেয়ে রয়েছে। বড় মেয়ের বেশ আগেই বিয়ে হয়ে গেছে। সে গার্মেন্টস শ্রমিক স্বামী ও সন্তান নিয়ে ঢাকায় থাকে। মেজ মেয়ে মারা গেছে। তৃতীয় মেয়ে শারীরিক প্রতিবন্ধী। সুমাইয়া স্থানীয় ব্র্যাক স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ছিল। এখন সে চা বিক্রি করে।’
শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, বাবার চিকিৎসা ও সংসার চালানোর জন্য স্কুল ছেড়ে চা বিক্রির বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। খোঁজ নিয়ে সুমাইয়ার পরিবারের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এম এ মালেক/এসআর/এমএস