‘১০০ টেকার স্যালাইন কিনলাম চারশ টেকা দিয়া’

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি শেরপুর
প্রকাশিত: ১০:৪৯ এএম, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩

‘আমরা গরিব মানুষ বাবা। ছেলেডার সাত দিন ধইরা ডেঙ্গু। হাসপাতালে স্যালাইন নাই। প্রথম তিনদিন স্যালাইন দিতে পারি নাই। অবশেষে ১০০ টেকার স্যালাইন, কিনলাম ৪০০ টেকা দিয়া।’ এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন শেরপুর সদর উপজেলার কামারের চর এলাকার মমতা বেগম। সাতদিন ধরে শেরপুর জেলা হাসপাতালের ডেঙ্গু ইউনিটে চিকিৎসা নিচ্ছেন তার ছেলে।

শ্রীবরদী উপজেলার ইন্দিলপুর এলাকার মশিউর রহমান এসেছেন স্ত্রীকে নিয়ে। বৃহস্পতিবার থেকে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি তার স্ত্রী। মশিউর বলেন, হাসপাতালে স্যালাইন সংকট। সরবরাহ করতে পারছে না। এই সুযোগে বাইরের ফার্মেসির ব্যবসায়ীরা স্যালাইনের দাম প্রায় তিনগুণ বেশি রাখছেন। সম্প্রতি শেরপুর জেলা হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।

প্রতিদিনই শেরপুরে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। হাসপাতালের নির্ধারিত শয্যার বাইরে মেঝে ও বারান্দায় চিকিৎসা নিচ্ছেন রোগীরা। অনেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন নিজ বাড়িতেই। তবে ডেঙ্গু রোগীর প্রয়োজনীয় স্যালাইন সংকটে বিপাকে পড়তে হচ্ছে রোগী ও স্বজনদের। হাসপাতালে নেই সরবরাহ, বাড়তি দামেও ফার্মেসিতে মিলছে না স্যালাইন। চাহিদা বাড়ায় সংকট তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ।

‘১০০ টেকার স্যালাইন কিনলাম চারশ টেকা দিয়া’

আরও পড়ুন: স্যালাইন সংকট, একটির বেশি কিনতে পারছেন না রোগীরা

স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য মতে, ফ্লুইড ম্যানেজমেন্ট স্যালাইনগুলো উৎপাদন করে ওরিয়ন ফার্মা, পপুলার ফার্মা, বেক্সিমকো ফার্মা, অপসো স্যালাইন, লিব্রা ইনফিউশন। এরমধ্যে ওরিয়ন ফার্মা সরকারি হাসপাতালে স্যালাইন সাপ্লাই দিলেও তা অপ্রতুল। তাই বাধ্য হয়েই রোগীর স্বজনরা বাইরে থেকে স্যালাইন কিনছেন। শহরের নারায়ণপুর এলাকার হাসপাতাল রোডের প্রতিটি ফার্মেসির চিত্র একই। কেউ বেশি দামে বিক্রি করছেন, আবার কেউ চাহিদামত দাম না পেয়ে স্যালাইন বিক্রিই করছেন না।

শুধু জেলা হাসপাতাল নয়, জেলার সব স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একই চিত্র। চাহিদার তুলনায় হাসপাতাল ও ফার্মেসিতে পর্যাপ্ত স্যালাইন না থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন রোগী ও স্বজনরা।

নকলা উপজেলার মজিবর মিয়া বলেন, সরকারি হাসপাতালে স্যালাইন না থাকায় গরীব রোগীরা বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। যে যার মতো দাম রাখছে। না কিনেও কোনো উপায় নেই।

আরও পড়ুন: গরমেও ফ্যান চালাই না, কখন যে ভেঙে পড়ে

ব্যবসায়ীরা বলছেন, চাহিদা থাকলেও সরবরাহ করছে না কোম্পানিগুলো। বাড়তি দামে বিক্রির কথা স্বীকার করলেও পরিস্থিতির বিবেচনায় নিরুপায় বলছেন তারা। তবে কথা বলতে রাজি হননি কোম্পানির প্রতিনিধিরা।

‘১০০ টেকার স্যালাইন কিনলাম চারশ টেকা দিয়া’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বিক্রেতা বলেন, সুযোগ মতো সবাই ব্যবসা করে নিচ্ছে। অতিরিক্ত দামে বিক্রি করা আইন সম্মত না হলেও, কেউই মানছে না। যার যেমন ইচ্ছা তেমন দাম রাখছে।

তবে সম্প্রতি হাসপাতাল এলাকার বেশ কয়েকটি দোকানে অভিযান চালিয়ে বেশি দামে স্যালাইন বিক্রি করার অপরাধে বেশ কয়েকটি ফার্মেসিকে জরিমানা করেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। কিন্তু এতেও অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি বলে অভিযোগ রোগীর স্বজনদের।

এদিকে বাড়তি চাহিদার জন্য সংকটের কথা বলছে স্বাস্থ্য বিভাগ। তবে বড় ধরনের সংকট হবে না জানিয়ে সিভিল সার্জন ডা. অনুপম ভট্টাচার্য বলেন, আমরা ঊর্ধ্বতন মহলে প্রতিদিনই আপডেট দিচ্ছি। কিছুটা কম আছে, তবে বড় কোনো সমস্যা হবে না।

আরও পড়ুন: ৫ বছরেও শেষ হয়নি নির্মাণ কাজ, দুর্ভোগে লাখো মানুষ

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে, গেলো এক মাসে শেরপুরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৪০০ জন। একই সঙ্গে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন দুজন।

ইমরান হাসান রাব্বী/জেএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।