নরসিংদীতে ফারুক আজিজ প্রাথমিক বিদ্যালয় শ্রেষ্ঠ
নরসিংদীতে উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্বাচিত হয়েছে ফারুক আজিজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। স্কুলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে মানসম্মত পাঠদান, স্থানীয় আর্থিক অনুদানে স্কুলের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে নিয়মাবর্তিতা, ডিজিটাল হাজিরাসহ আধুনিক সুবিধা নিশ্চিত করাসহ নানা ক্যাটাগরিতে স্কুলটিকে শ্রেষ্ঠ নির্বাচিত করা হয়।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতায় নরসিংদী সদর উপজেলা শিক্ষা অফিস জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা পদক-২০২৩ ক্যাটাগরিতে ফারুক আজিজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে শ্রেষ্ঠ নির্বাচিত করা হয়। নিয়মিত শিক্ষার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের ল্যাপটপসহ ডিজিটাল জিনিসপত্র দিয়ে শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে।
প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, ধনি-গরিবসহ সব শ্রেণি পেশার মানুষের সন্তানকে শিক্ষিত করার লক্ষ্যে নরসিংদী সদর উপজেলায় ১৩৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করে সরকার। এক সময় টিনশেড ভবনে প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রম চললেও বর্তমানে প্রতিটা বিদ্যালয়ে আধুনিক ভবন নির্মাণ করছে সরকার। কিন্তু নরসিংদী সদর উপজেলায় শীলমান্দি ইউনিয়নের উত্তর বাগহাটা এলাকায় সু বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য নির্মিত ফারুক আজিজ স্কুলটি জরাজীর্ণ অবস্থায় চলছে।
সরকার বিদ্যালয়টিতে নতুন ভবন তৈরির কাজ হাতে নেয়। ফলে স্কুলের পুরোনো টিনশেড ভবনটি ভেঙে নতুন ভবন তৈরিতে দুই থেকে তিন বছর সময় লেগে যাবে। ফলে শিক্ষার্থীদের পাঠদানে বিঘ্ন ঘটবে এবং ঝরে পড়তে পারে অসংখ্য শিক্ষার্থী। এ অবস্থার উত্তরণে আট-ঘাট বেঁধে নেমে পড়েন স্কুলের প্রধান শিক্ষক জয়শ্রী সাহা।
স্থানীয় ব্যাপ্তিবর্গ, স্কুলের অভিভাবক ও ফারুক আজিজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা এবং জমিদাতা মোমেনা আজিজের পরিবারের সদস্যদের আর্থিক অনুদানের প্রায় ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে ১২০ ফুট লম্বা পাঁচ কক্ষ বিশিষ্ট একটি নতুন স্কুলভবন নির্মাণ হয়েছে।
ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার্থে স্কুলটিতে দুটি আধুনিক শৌচাগার নির্মাণ হয়। স্কুল কমিটির সদস্য স্বপন রায়ের তিন লাখ টাকা আর্থিক অনুদানে পাকা শহীদ মিনার, বঙ্গবন্ধু পুষ্প কানন ও অজুখানা নির্মাণ করা হয়।
শুধু তাই নয় ছাত্রছাত্রীরা যেন নির্বিঘ্নে ক্লাস করতে পারে সেই লক্ষ্যে জমিদাতা পরিবার শ্রেণিকক্ষে ১৫টি ফ্যান, ২০টি লাইট দুটি টেবিল, পাঁচটি অক্সিজেন সিলিন্ডার দিয়েছে।
মাস্কো গ্রুপের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সবুর সাহেবের আর্থিক অনুদানে বিদ্যালয়ের ওয়ারিংয়ের কাজ, সেনিটেশন ব্যবস্থা, তিনজন প্যারা শিক্ষকের সম্মানী ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীর সম্মানী দেওয়া হয়। জমিদাতা পরিবারসহ স্থানীয় মানুষদের অনুপ্রাণিত করে প্রধান শিক্ষক জয়শ্রী সাহা স্কুলটিকে আধুনিক একটি রূপ দিয়েছেন।
এলাকাবাসী ও অভিভাবকদের কাছে প্রশংসা কুড়িয়েছেন প্রধান শিক্ষক। গ্রামের এই স্কুলটি বর্তমানে সদর উপজেলার মডেল একটি সরকারি স্কুল।
সদর উপজেলার শ্রেষ্ঠ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জয়শ্রী সাহা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে স্মার্ট শিক্ষার্থী চাই। এ লক্ষ্যে আমার কাজ করে যাচ্ছি। আমি যখন যোগ দেই তখন শিক্ষার্থী ছিল ৯০ জন। এখন স্কুলটিতে প্রায় চার শতাধিক শিক্ষার্থী আছে। এ সময় এ এলাকার মানুষ তাদের সন্তানদের কিন্ডারগার্টেন স্কুলে পড়ানোর জন্য শহরে স্কুলে নিয়ে যেতেন। এমনকি সন্তানের পড়াশোনার কথা ভেবে গ্রাম ছেড়ে দিয়েছেন। এলাকার ধনী বড়লোক ও শিল্পপতি পরিবারের সন্তানরা আমার সরকারী প্রাইমারি স্কুলে ভর্তি হয়ে পড়াশোনা করছে।
তিনি আরও বলেন, স্কুলটি ভিজিট করলেই বুঝবেন শিক্ষকরা কতটা মনোযোগী ও মমতা দিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠদান করান। এছাড়া আমি স্কুলটিতে যোগদানের পর শিক্ষার্থীদের ড্রেসকোডসহ শিক্ষার মান উন্নয়নে অভূতপূর্ব পরিবর্তনের চেষ্টা করেছি। আমার স্কুলের শিক্ষার্থীরা এখন পড়াশোনার পাশাপাশি বিভাগীয় প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে বিজয়ী হচ্ছেন।
সঞ্জিত সাহা/এসজে/জিকেএস