৫৯ কিমি সড়ক যেন মরণফাঁদ, তিন মাসে প্রাণহানি ২৩
মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নরসিংদী অংশ। হরহামেশাই ঘটছে দুর্ঘটনা। ঝরছে তাজা প্রাণ। সরকারি হিসাবে গেলো তিন মাসে ছোট-বড় ১২টি দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ২৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত আরও ১৮ জন। শুধুমাত্র পাঁচ ঘণ্টার ব্যবধানে মহাসড়কে ছয়জন নিহত হন। এরপরও মহাসড়কটি সুরক্ষিত করা যাচ্ছে না।
হাইওয়ে পুলিশ বলছে, অদক্ষ চালক ও বেপরোয়া গতিতে যানবাহন চালানোর কারণেই মহাসড়কে বাড়ছে দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর হার।
সড়ক ও জনপদ বিভাগ বলছে, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ছয়লেনে উন্নিতকরণ কাজ হাতে নিয়েছে সরকার। এ সড়কে ডিভাইডার দেওয়া হয়েছে। তখন আসা এবং যাওয়ার জন্য যানবাহনগুলো পৃথক লেন ব্যবহার করতে পারবে। তখন মুখোমুখি সংঘর্ষসহ দুর্ঘটনার হার কমে আসবে।
ইটাখোলা হাইওেয় পুলিশ জানিয়েছে, নারায়ণগঞ্জের আড়াই হাজার এরপর থেকে ভৈরবের আগ পর্যন্ত ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নরসিংদীর অংশ পড়েছে ৫৭ কিলোমিটার। এ সড়কে গেলো তিনমাসে ছোটবড় ১২টি দুর্ঘটনা ঘটেছে।
২০১১ সালে মহাসড়কের ঘাসিরদিয়ায় একই স্থানে মাছ বোঝাই ট্রাকের সঙ্গে পুলিশের গাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষে নরসিংদীর বেলাবো থানার পুলিশের ১০ কর্মকতা নিহত হয়েছিলেন। পরবর্তীতে একই স্থানে সরাইল থানার ওসিসহ দুই পুলিশ কর্মকর্তার মৃত্যু হয়। এছাড়া গত পাঁচ বছরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে কমবেশি শতাধিক দুর্ঘটনায় কমপক্ষে দুই শতাধিক মানুষ মারা গেছেন।
সবশেষ শুক্রবার রাতে প্রবাসী এফাজুল হক নারায়ণগঞ্জে নিজ বাড়িতে ফিরছিলেন। তাদের বহনকারী মাইক্রোবাসটি ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের শিবপুরের শ্রীফুলিয়া এলাকায় পৌঁছালে দিনগত রাত ২টার দিকে বিপরীত থেকে আসা সিলেটগামী একটি ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে মাইক্রোবাসটি একেবারে দুমড়ে-মুচড়ে যায়। ঘটনাস্থলেই এফাজুল হক তার ছেলে মোস্তাকিন ও চালকসহ তিনজন নিহত হন। আহত হন ছয়জন। এদের মধ্যে দুজনকে আইসিউতে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ৯৯৯-এর মাধ্যমে খবর পেয়ে দুর্ঘটনাস্থলে এসে হতাহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায় ফায়ার সার্ভিস।
এর পাঁচ ঘণ্টা আগে শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে রায়পুরার মরজাল থেকে পাঁচ যাত্রী নিয়ে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা ভিটি মরজাল যাচ্ছিল। অটোরিকশাটি ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের রায়পুরা উপজেলার মরজাল শিমুলতলী এলাকায় পৌঁছালে বিপরীত থেকে আসা একটি বাসের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এতে অটোরিকশাটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। ওই সময় ঘটনাস্থলেই এক নারীসহ অটোরিকশায় থাকা তিন যাত্রী মারা যান। আহত হর আরও তিনজন।
২৫ আগস্ট সিলেট থেকে ফেরার সময় নরসিংদীর শিবপুরের ঘাসিরদিয়া এলাকায় পাথরবোঝাই ট্রাক ও মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে প্রাণ গেছে একটি পোশাক কারখানার সাত কর্মকর্তার। আহত হয়েছেন আরও চারজন।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের শহীদ মিনার এলাকার ফার্মেসি মালিক আরিফুল ইসলাম বলেন, শিবপুরের মরজাল, শহীদমিনার ঘাশিরদিয়া, সৃষ্টিঘর, শ্রীফুলিয়া এলাকায় প্রায় বড়বড় দুর্ঘটনা ঘটে। শুধু তাই নয় প্রতি সপ্তাহেই ঘটে। আর মানুষ মারা যায়। ২০ দিন আগে রাত ৩টার দিকে হঠাৎ বিকট শব্দ। বের হয়ে দেখি রাস্তার মধ্যে আট-নয়জন মানুষ পড়ে আছে। আর চিৎকার করছে। ওই ঘটনায় সাতজন মার যান। এত দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ঘটলেও প্রতিরোধে কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ছে না।
একই এলাকার অপর বাসিন্দা নজরুল বলেন, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নরসিংদী অংশ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। রাস্তাটিতে চালকরা দ্রুত গতিতে গাড়ি চালায়। ঘাসির দিয়া সড়কটিতে নরসিংদীর বেলাবো থানার দুই ওসিসহ পুলিশের ১০ কর্মকতা নিহত হয়েছিলেন। এরপরও অনেক দুর্ঘটনায় মানুষ মারা গেছে। চালকরা যদি সাবধান হয় আর সড়কটি প্রশস্ত করলে দুর্ঘটনা কমবে।
নরসিংদী ইটাখোলা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. ইলিয়াস হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, হাইওয়ে পুলিশের মিশন ভিশন হচ্ছে মানুষের নিরাপদ সড়ক উপহার দেওয়া। মানুষের যাতায়াতের জন্য এ পথকে সুরক্ষিত করা। কিন্তু অদক্ষ চালকের বেপরোয়া মনোভাব আর ওভারটেকিং প্রতিযোগিতার কারণে ইদানীং ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে দুর্ঘটনায় হার বেড়েছে। এ সড়ককে নিরাপদ করতে আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি। এর ফলশ্রুতিতে সরকার পেশাদার চালক তৈরিতে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। চালকদের বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। প্রশিক্ষণের পর লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে।
সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হামিদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ঢাকা-সিলেট মাহাসড়কটি যথেষ্ট প্রশস্থ করা হয়েছে। অন্ধকারাচ্ছন্ন বাঁকগুলো প্রসস্থ করা হয়েছে। এক কথায় বলতে গেলে এ সড়কটিতে জিওমেট্রিক কোনো সমস্যা নেই। সড়কটিতে ৮০ কিলোমিটার গতিতে যানবাহনগুলো চালানোর নির্দেশনা থাকলেও চালকরা তা মানছে না। যার ফলে দুর্ঘটনা ঘটছে। এছাড়া সাইড রোড থেকে যত্রতত্র অনেক যানবাহন মহাসড়কে উঠে যাচ্ছে। তখন দেখা যায় দুর্ঘটনা হয়।
তিনি আরও বলেন, ঢাকা-সিলেট মাহাসড়কটি ছয়লেন সড়কে উন্নিতকরণের কাজ হাতে নিয়েছে সরকার। ধাপে ধাপে কাজ হচ্ছে। এ সড়কে ডিভাইডার দেওয়া হয়েছে। তখন আসা এবং যাওয়ার জন্য যানবাহনগুলো পৃথক লেন ব্যবহার করতে পারবে। তখন মুখোমুখি সংঘর্ষসহ দুর্ঘটনার হার কমে আসবে।
এসজে/জিকেএস