‘নির্বাচন করতে মন্ত্রী আমাকে এখানে এনেছেন’- বললেন ওসি

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি রাজশাহী
প্রকাশিত: ১২:৪৫ পিএম, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩

পুলিশ সুপারের নাম ভাঙিয়ে আসামির স্ত্রীর কাছে রাজশাহীর চারঘাট থানার ওসি মাহবুবুল আলমের সাত লাখ টাকা ঘুস দাবির অডিও ফাঁস হয়েছে। অডিওতে অর্থ দাবির পাশাপাশি তাকে মাদক ব্যবসা করার পরামর্শও দেন তিনি।

এ ঘটনায় শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী ওই নারী। অভিযোগের সঙ্গে ৬ মিনিট ৫০ সেকেন্ডের অডিও রেকর্ড দেওয়া হয়েছে।

ভুক্তভোগী ওই গৃহবধূর নাম সাহারা বেগম। তিনি চারঘাট থানার চামটা গ্রামের আব্দুল আলিম কালুর স্ত্রী। কালু মাদক মামলায় কারাগারে রয়েছেন।

আরও পড়ুন: বোয়ালমারী থানার ওসির বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ

অভিযোগে ওই নারী উল্লেখ করেন, ১৩ সেপ্টেম্বর চাঁদাবাজির অভিযোগ করতে ছেলেসহ তাকে চারঘাট থানার ওসি শয়নকক্ষে ডেকে নেন। এরপর তাদের কাছ থেকে ওসি মোবাইল ফোন নিয়ে নিয়ে অর্থ দাবি করেন।

ফাঁস হওয়া ওই অডিও রেকর্ডে ওসি মাহবুবুল আলমকে বলতে শোনা যায়, ‘নির্বাচন করতে মন্ত্রী আমাকে গাইবান্ধা থেকে এখানে নিয়ে এসেছেন। আমি তার কথা ছাড়া কারও কথা শুনি না।’ চারঘাট এলাকায় গিয়ে মাদক ব্যবসায়ীদের ধরে মামলা দেওয়ার কারণে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসির সমালোচনা করেন তিনি। এরপর বলেন, ‘দুই লাখ টাকা দেন, কালকেই ডিবির ওসিকে বদলি করে দেব।’

jagonews24

সাহারা বেগমকে বলেন, ‘আপনার স্বামী আমার অনেক ক্ষতি করেছে (ওসির বিরুদ্ধে এসপি অফিসে অভিযোগ করেছিলেন)। এবার আপনার পরিবারের কাউকে ধরলে ১০ লাখ টাকার কমে ছাড়াতে পারব না।’

এরপর ওসি বলেন, ‘এখনো তোমার গায়ে আঁচড় দেইনি। বহুত ফাঁকি দিয়েছ। কালকে পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে আসবা। এখন সেরকম সময় নয় যে কেউ পয়সা খায় না। সবাই পয়সা খাচ্ছে। এমন কেউ বাদ নেই যে পয়সা খাচ্ছে না। পুরো জেলা পয়সা খাচ্ছে। এখানে আমার থানা চালাতে মাসিক অনেক টাকা লাগছে। আমি স্যারকে কথা দিয়ে এসেছি। স্যারকে বলেছি, ‘এখানে মাদক ছাড়া কিছু নেই।’ মুক্তা (চারঘাটের মাদক সম্রাট নামে পরিচিত) অ্যাকশন নিতে পারবে না, শুভ (ছাত্রলীগ নেতা ও মাদক কারবারি) অ্যাকশন নিতে পারবে না। তোমরা পাঁচ লাখ টাকা দিতে পারবা? ধরে ওদের চালান দিয়ে দেব। থাকি না থাকি ওদের সাইজ করব। তোমরা বাইরে থেকে ব্যবসা (মাদক ব্যবসা) করবে।’

জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি আতিকুর রেজা সরকার আতিকের সমালোচনা করে ওসিকে বলতে শোনা যায়, ‘নির্বাচনের আগে শুভকে ধরতে পারব না। কথা সব ভেঙে বলব না। কথা সব হয়ে গেল; যদি আতিকের বদলি চাও দুই লাখ টাকা দাও। কালকেই আতিকের বদলি হয়ে যাবে।’

jagonews24

আরও পড়ুন: ওসির বিরুদ্ধে যত অভিযোগ ভাঙ্গা আ.লীগের

ওসিকে বলতে শোনা যায়, ‘৫ লাখ আর ২ লাখ— ৭ লাখ টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করো। আতিক বাদ, ওই দুজনকে (মুক্তা ও শুভ) ট্যাকেল দেওয়ার দায়িত্ব আমার। নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পরে মন্ত্রীকে বলে ওই দুজনকে ধরে অ্যারেস্ট করে চালান করে দেব। আমার সব ওপরের লাইন। যে টাকা দিবা এ টাকাই ওপরে কাজ করবে।’ অডিওতে গৃহবধূ সাহারা বেগমের ‘সুন্দর চেহারা’ নিয়েও মন্তব্য করতে শোনা যায় ওসিকে।

এ বিষয়ে চারঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবুল আলমের ফোন নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল আলম বলেন, আমরা অডিও রেকর্ডসহ একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগ তদন্ত করা হচ্ছে। ঘটনা সত্যি হলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বর্তমানে তাকে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে।

সাখাওয়াত হোসেন/আরএইচ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।