পথ হারানো হারেজ উদ্দিন ৩১ বছর পর ফিরলেন বাড়ি
পথ ভুলে ৩১ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার সাইংজুরি গ্রামের হারেজ উদ্দিন মণ্ডল তার পরিবার ফিরে পেয়েছেন। তাকে লালন-পালনকারী চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার নাটুদাহ ইউনিয়নের হোগলডাঙ্গা গ্রামের সোনাহার মণ্ডল শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) হারেজকে বোন নুরজাহানের হাতে তুলে দেন।
জানা যায়, ১৯৯২ সালে মানিকগঞ্জের সাইংজুরি গ্রামের মৃত চেনু মণ্ডলের ছেলে হারেজ পথ ভুলে চুয়াডাঙ্গার হোগলডাঙ্গা গুচ্ছপাড়ায় চলে যান। সে সময় ওই গ্রামের মৃত আছির উদ্দিনের ছেলে সোনাহার মণ্ডল তাকে বাড়িতে নিয়ে আসেন। সেই থেকে সোনাহার মণ্ডলের বাড়িতেই বসবাস করে আসছিলেন।
হারেজের কথা স্পষ্ট না হওয়ায় এতদিন তার পরিবারের খোঁজ মেলেনি। কিছুদিন আগে হারেজকে বাবার নাম, গ্রামের না বলতে শোনা যায়। সে কথা ধরে সোনাহার মণ্ডলের ছেলে মতিয়ার রহমান স্থানীয় বালিয়াখোড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আওয়াল খানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করেন।
পরে হারেজের আপন বোন নুরজাহান খাতুন, ঘিওর উপজেলার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মাহেলা খাতুন, একই উপজেলার বালিয়াখোড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মকবুল হোসেনসহ এলাকার গণমান্য ব্যক্তিরা এসে হারেজকে নিয়ে যান।
মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মাহেলা খাতুন বলেন, ‘সাইংজুরি গ্রামের হারেজ ১৯৯২ সালে হারিয়ে যায়। আমরা ও তার পরিবার মনে করেছি হারেজ মারা গেছে। এতদিন পার হলেও কোনো খোঁজ-খবর পাওয় যায়নি। যখন শুনলাম হারেজকে পাওয়া গেছে, তখন আনন্দে চলে আসলাম। এখানে সোনাহার ভাই খুব ভালো মানুষ। হারেজকে নিজের ছেলের মতো রেখেছিলেন।’
বালিয়াখোড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মকবুল হোসেন বলেন, ‘সোনাহার মণ্ডলের ছেলে মতিয়ার রহমান আমাকে ফোন করে হারেজের কথা জিজ্ঞাসা করলেই আমি চিনতে পারি। পরে তাদের পরিবােের সঙ্গে যোগাযোগ করে হারেজকে নিতে আসি।’
হারেজের বোন নুরজাহান বলেন, ‘আমার ভাইকে খুঁজে পাবো কখনও ভাবিনি। আল্লাহর অশেষ রহমতে আমার ভাইকে খুঁজে পেয়েছি। আমার আব্বা বেঁচে নেই। ভাইটাকে খুঁজে পেয়ে আমরা খুব খুশি হয়েছি। আর সোনাহার ভাইকে ধন্যবাদ, আমার ভাইকে এতদিন দেখে রাখার জন্য।’
পালনকারী সোনাহার মণ্ডল বলেন, ‘কী বলবো, হারেজ চলে যাওয়ায় আমার বুকটা ফেটে যাচ্ছে। সে একটু বোঝে কম। কথা ঠিকমতো বলতে পারে না। সেই ১৯৯২ সাল থেকে তার পায়খানা পরিষ্কার করেছি। আমি যা খেয়েছি, তাকে তাই খাইয়েছি। কী করে বুঝাবো এ ব্যথা।’
হুসাইন মালিক/বিএ