চৌগাছা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
দেশসেরা হাসপাতালে দু’দিনে স্বাভাবিক প্রসবে জন্ম নিলো ১৭ শিশু
যশোরের চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দু’দিনে স্বাভাবিক প্রসবে ১৭ নবজাতকের জন্ম হয়েছে। বৃহস্পতি ও শুক্রবার (১৪ ও ১৫ সেপ্টেম্বর) ১৭ জন প্রসূতি নরমাল ডেলিভারিতে তাদের সন্তান জন্ম দেন।
প্রসূতি স্বাস্থ্যসেবায় উপজেলা পর্যায়ে দেশ সেরা হাসপতালটি বরাবরই স্বাভাবিক প্রসবে দেশসেরা। হাসপাতালটি প্রসূতি সেবায় উপজেলা পর্যায়ে দেশ সেরার স্বীকৃতিস্বরূপ রাষ্ট্রীয় পদকও পেয়েছে ১৩ বার।
সূত্র জানায়, অনেক প্রসূতির কাছে এখন হাসপাতালে স্বাভাবিক প্রসব (নরমাল ডেলিভারি) প্রত্যাশার বাইরে চলে গেছে। কেননা হাসপাতালে গেলেই অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দেন বেশিরভাগ চিকিৎসক। আবার কোথাও কোথাও ব্যতিক্রম যে নেই তা নয়। এরকমই ব্যতিক্রম যশোরের চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এই হাসপাতালে গত ৪৮ ঘণ্টায় (বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার) স্বাভাবিক প্রসবের মাধ্যমে ১৭ শিশু জন্ম নিয়েছে। এর মধ্যে ৯টি মেয়ে ও ৮টি ছেলে শিশু। প্রসূতি মা ও শিশুরা সবাই সুস্থ আছেন। তারা হাসপাতাল থেকে বাড়িতেও চলে গেছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, চলতি সেপ্টেম্বর মাসের ১৬ তারিখ পর্যন্ত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে স্বাভাবিক প্রসব (নরমাল ভ্যাজাইনাল ডেলিভারি) হয়েছে ৭৩ জন প্রসূতির। এরমধ্যে ১৪ সেপ্টেম্বর রাত থেকে ১৬ সেপ্টেম্বর সকাল পর্যন্ত ৪৮ ঘণ্টায় নরমাল ডেলিভারি হয়েছে ১৭ জন প্রসূতির। হাসপাতালটিতে সেপ্টেম্বরের ২ থেকে ১৬ তারিখ পর্যন্ত সিজারিয়ান ডেলিভারি হয়েছে ৪১ জন প্রসূতির। আর বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার সিজারিয়ান ডেলিভারি হয়েছে ৯ জন প্রসূতির।
হাসপাতাল সূত্রে আরও জানা গেছে, আগস্ট মাসে হাসপাতালটিতে নরমাল ভ্যাজাইনাল ডেলিভারি হয় ১২৩ জনের এবং সিজারিয়ান ডেলিভারি হয় ৮৮ জন প্রসূতির।
জানা গেছে, সিজারের নামে বাণিজ্য, দালালচক্র ও অদক্ষ ধাত্রীর হাত থেকে প্রসূতিদের রক্ষা এবং নিরাপদে স্বাভাবিক সন্তান প্রসব করাতে চৌগাছা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কয়েকজন চিকিৎসকের একটি টিম কাজ শুরু করে ২০১০ সাল থেকে। এ বিষয়ে প্রসূতিদের উদ্বুদ্ধকরণে তারা বিভিন্নভাবে প্রচার চালান।
চিকিৎসা কর্মকর্তারা বলছেন, প্রসব পূর্ববর্তী চিকিৎসার সময় স্বাভাবিক প্রসবের জন্য প্রসূতি মায়েদের কাউন্সেলিং করানো এবং হাসপাতালে চিকিৎসক ও সেবিকাদের সমন্বয়ে টিম ওয়ার্কের ফলেই হাসাপাতালে স্বাভাবিক প্রসব বেড়েছে।
এ বিষয়ে হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগে কর্তব্যরত মিডওয়াইফ তামান্না আক্তার বলেন, আমরা প্রসূতিদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও তাদের প্রসবের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত করার কারণেই হাসপাতালে স্বাভাবিক প্রসূতি বেড়েছে।
হাসপাতালের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আল এমরান বলেন, আমাদের মিডওয়াইফরা হাসপাতালে কোনো প্রসূতি এলে তাদেরকে শারীরিক পরীক্ষার পাশাপাশি মানসিকভাবে প্রস্তুত করে তোলেন। তাদেরকে স্বাভাবিক প্রসবের জন্য উৎসাহিত করেন। এজন্য হাসপাতালে স্বাভাবিক প্রসব বেড়েছে।
চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. লুৎফুন্নাহার বলেন, গত কিছুদিন ধরে দেখছিলাম হাসপাতালে স্বাভাবিক প্রসবের পরিমাণ কিছুটা কমে যাচ্ছিল। বিষয়টি নিয়ে চিকিৎসক, সেবিকা, মিডওয়াইফ ও স্বেচ্ছাসেবীদের নিয়ে মিটিং করে এ বিষয়ে প্রসূতিদের কাউন্সেলিং করানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। আমাদের এএনসি কর্নারে (প্রসব পূর্ববর্তী সেবাকেন্দ্র) সেবা নিতে আসা সকল প্রসূতির মোবাইল ফোন নম্বর রাখা হয়। প্রসবের দিনের ২৪ ঘণ্টা আগে তারা হাসপাতালে না এলে তাদের ফোন করে হাসপাতালে আনা হয়। মূলত আমাদের টিম ওয়ার্কের ফসল ৪৮ ঘণ্টায় এই ১৭ শিশুর স্বাভাবিক প্রসব।
তিনি বলেন, সকল শিশু এবং প্রসূতিরা সুস্থ আছেন। তারা নিজেদের বাড়িতে চলে গেছেন।
যশোরের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. নাজমুস সাদিক রাসেল জানান, স্বাভাবিক ডেলিভারির মাধ্যমে সন্তান প্রসবে বরাবরই চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সুনাম রয়েছে। শুক্রবার ও শনিবার দু’দিনে চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৭ জন প্রসূতি স্বাভাবিক ডেলিভারির মাধ্যমে সন্তান প্রসব করেছেন।
মিলন রহমান/এফএ/জেআইএম