নারায়ণগঞ্জ

লিবিয়ায় ঘূর্ণিঝড়ে নিহত সাহাব-মামুনের বাড়িতে শোকের মাতম

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত: ০১:৪৩ এএম, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩

লিবিয়ায় ঘূর্ণিঝড় ড্যানিয়েলে নিহত নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের সাহাব উদ্দিন (৩৫) ও মামুনের (২৭) বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। দুজনের বাড়িতেই চলছে স্বজনদের আহাজারি। পরিবারের সদস্যরা তাদের হারিয়ে চোখে অন্ধকার দেখছেন। স্বজনদের চাওয়া, যেন শেষবারের মতো দেখতে পান সাহাব উদ্দিন ও মামুনকে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের ভোলাব ইউনিয়নের পুবেরগাঁও এলাকার মৃত তমিজ উদ্দিনের ছেলে মামুন। পাঁচ ভাই ও তিন বোনের মাঝে সবার ছোট তিনি। অভাবের সংসারে আলো ফেরাতে ৪ বছর আগে দেশ ছেড়ে লিবিয়া পাড়ি জমিয়েছিলেন মামুন। লিবিয়ায় গিয়ে দারনা শহরে স্বর্ণের দোকানে কাজ করতেন। ঘূর্ণিঝড় ড্যানিয়েলে নিভে গেছে তার জীবন প্রদীপ।

এদিকে নিহত সাহাব উদ্দিনের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার গোলাকান্দাইল কেরাবো এলাকায়। তিনি এলাকার মৃত কবির মিয়ার বড় ছেলে। এলাকার একটি বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাস করার পর অভাবের তাড়নায় ১০ বছর আগে গিয়েছিলেন মিশর। সেখান থেকে অবৈধপথে যান লিবিয়া।

২০১৮ সালে বিয়ে করেন সাহাব। তার জোনায়েদ নামে সাড়ে তিন বছরের এক ছেলে সন্তানও রয়েছে।

নিহত সাহাব উদ্দিনের স্ত্রী মাকসুদা বেগম বলেন, আমার স্বামী সাহাবউদ্দিন বিদেশ যাওয়ার সময় বাড়ি বন্দক রেখে গিয়েছিলেন। তার স্বপ্ন ছিল রাজনৈতিক অস্থিরতা শেষে লিবিয়া আবার শান্ত হবে। তার সেই স্বপ্ন কেড়ে নিয়ে গেলো ঘূর্ণিঝড় ড্যানিয়েল। আমার সাজানো সংসার ভেঙে তছনছ হয়ে গেলো। কীভাবে ঋণ শোধ করবো, আর কাকে নিয়েই বাঁচবো?

সাহাব উদ্দিনের ফুপু সুরবান বলেন, স্বামীর মৃত্যুর খবর শুনে স্ত্রী মাকসুদা প্রায় পাগল হয়ে গেছে। স্বামী মারা গেলো, লাশটাও দেখার সুযোগ পাচ্ছে না। বাড়ি বন্দক, ঋণের সুদ। জানি না তারা এখন কীভাবে চলবে।

অন্যদিকে নিহত মামুনের বাড়িতে গিয়েও দেখা যায় স্বজনদের আহাজারি। মা আবেদা বেগম কান্না করতে করতে বলেন, আমার ছেলে আমাকে রেখে চলে গেলো। মামুন আমার অনেক আদরের ছিল। আমার ছেলেকে দেখতে চাই। আমি আর কিছু চাই না।

বড় ভাই খোরশেদ আলম বলেন, সবার ছোট হওয়ায় আমাদের আদরের ভাই ছিল মামুন। কিন্তু সংসারের হাল ধরতে লেখাপড়া ছেড়ে সে প্রবাসে যাওয়ার কথা বলে। পরে আমরা স্থানীয় এক দালালের মাধ্যমে তাকে লিবিয়া পাঠাই। ভালোই চলছিল। ঘূর্ণিঝড়ে আমাদের সব স্বপ্ন শেষ। শুনেছি আমার ভাইয়ের লাশ শনাক্ত হয়েছে। আমরা শেষবারের মতো আমাদের আদরের ছোট ভাই মানুনকে দেখতে চাই।

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বলেন, সরকার থেকে আমরা চেষ্টা করবো যাতে তাদের সাহায্য করা যায়। আমার ব্যক্তিগত তরফ থেকেও তাদের পরিবারকে সহযোগিতা করবো।

মোবাশ্বির শ্রাবণ/এমএইচআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।