ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চিত্তবিনোদনের ভরসা অর্ধশতাধিক রেস্তোরাঁ
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরশহরে গত দুবছরে আনাচে-কানাচে গড়ে উঠেছে প্রায় অর্ধশতাধিক রেস্তোরাঁ। ছোট্ট এ শহরে চিত্তবিনোদনের তেমন ব্যবস্থা না থাকায় চাহিদা বেড়েছে এসব রেস্তোরাঁর। আর এ ব্যবসায় আগ্রহ বেড়েছে তরুণ উদ্যোক্তাদের। পাশাপাশি নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে। তবে গ্রাহকদের দাবি, ব্যবসা প্রসারিত হলেও বাড়েনি সেবার মান।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে গত দুবছরে প্রায় অর্ধশতাধিক চাইনিজ রেস্টুরেন্ট ও ফাস্টফুডের দোকান গড়ে উঠেছে। বিশেষ করে হালদারপাড়া, মৌলভীপাড়া, কুমারশীল মোড়, পাইকপাড়া, মেড্ডা, কাউতুলী এলাকায় বেশকিছু চাইনিজ রেস্টুরেন্ট গড়ে উঠেছে। এছাড়া তিতাস নদীর তীরকে কেন্দ্র করে মেড্ডা ও শিমরাইলকান্দি এলাকায় কয়েকটি রেস্টুরেন্ট তৈরি হয়েছে। সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ ও খৈয়াসারেও নতুন কয়েকটি রেস্টুরেন্ট চালু হয়েছে। প্রতিটি রেস্টুরেন্টেই বেচাকেনা বেশ ভালো। এসব রেস্টুরেন্টে শিশুদের জন্য খেলাধুলা ও চিত্তবিনোদন সুবিধা থাকায় চাহিদাও বাড়ছে।
পরিবার নিয়ে একান্ত সময় কাটানোর ব্যবস্থা থাকাও অন্যতম কারণ হিসেবে জানিয়েছে রেস্তোরাঁয় আসা গ্রাহকরা। তবে অনেকেরই অভিযোগ, কয়েকটি ছাড়া অধিকাংশ রেস্তোরাঁর খাবারের গুণগত মান তেমন ভালো নয়। কিছু রেস্তোরাঁয় কর্মচারীদের ব্যবহারও খারাপ।
শ্রাবণ চৌধুরী নামে এক ব্যক্তি বলেন, উদ্বোধনের পর নতুন নতুন সবগুলোই ভালো থাকে। কিছুদিন যাওয়ার পর গুণগত মান ঠিক থাকে না।
জাহিদুল ইসলাম নামের এক যুবক বলেন, বাচ্চা ও পরিবারকে নিয়ে সময় কাটানোর জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরশহরে তেমন জায়গা নেই। গড়ে ওঠা রেস্তোরাঁগুলোয় শিশুদের জন্য খেলাধুলার জায়গা রাখা আছে। তাই সেখানে আড্ডা দিলাম, বাচ্চারাও খেলাধুলা করে আনন্দ পায়।
তবে তানিয়া ইসলাম নামে এক নারী অভিযোগ করে বলেন, বেশিরভাগ রেস্টুরেন্টেরই মান ভালো না। ব্যবহারও ভালো না। আপনি খেতে গেলে তাদের ভাবখানা এমন হবে যেন আপনি ভিক্ষা চাইতে গেছেন।
এ বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রেস্তোরাঁ ব্যবসায় সফল উদ্যোক্তা তিতাস ওয়েব ও ফুড ফ্যান্টাসির পরিচালক রেজুয়ানুল হক মনি জাগো নিউজকে বলেন, এখন উদ্যোক্তারা রেস্টুরেন্ট ব্যবসার দিকে ঝুঁকছে। সেখানে কর্নারে শিশুদের জন্যে খেলার ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। ফলে পরিবার নিয়ে অনেকেই যাচ্ছেন রেস্তোরাঁগুলোতে।
তিনি আরও বলেন, আমরা এখন রেস্তোরাঁগুলোতে পরিকল্পনা করেছি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ইতিহাস-ঐতিহ্য তুলে ধরতে। সেখানে খাওয়ার পাশাপাশি শিশু কিশোরদের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ইতিহাস ঐতিহ্য সম্পর্কে জানাতে পারবো। সর্বোপরি এ ব্যবসার উদ্যোগকে আমি পজিটিভলি দেখছি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফখরুল হাসান জাগো নিউজকে বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরশহরে কিছুদিন পরপরই নতুন রেস্টুরেন্ট ও চাইনিজ চালু হচ্ছে৷ এরমধ্যে অনেকে আমাদের সমিতির সদস্য হয়েছেন। গত দুবছরের পূর্ণাঙ্গ হালনাগাদ তালিকা আমরা প্রণয়ন করবো। তবে এ সময় আনুমানিক অর্ধশতাধিক চাইনিজ রেস্টুরেন্ট ও ফাস্টফুডের দোকান গড়ে উঠেছে। এতে আমরা খুশি। কারণ নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান হলে খাবারের গুণগত মান বাড়বে। উদ্যোক্তার পাশাপাশি বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রিজের সভাপতি আজিজুল হক জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের পৌরশহরে এটা খুবই প্রয়োজন। আমাদের শহর কেন্দ্রিক কোনো বিনোদনকেন্দ্র না থাকার কারণে এ ব্যবসাগুলো বাড়ছে। শিশুরা রেস্তোরাঁগুলোতে বিনোদনের খোরাক পাচ্ছে। পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া নাগরিক ফোরামের সভাপতি পীযূষ কান্তি আচার্য জাগো নিউজকে বলেন, নতুন গড়ে ওঠা রেস্তোরাঁগুলো যেন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকে। সেখানে নাগরিক স্বার্থ সুরক্ষার পাশাপাশি অযথা যেন রেস্তোরাঁয় কোনো সংস্থা হয়রানি না করে তার দাবি জানাই।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা মো. আতিকুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, শহরের রেস্তোরাঁ-চাইনিজগুলোতে আমরা নিয়মিত পরিদর্শন করে তাদের সচেতন করছি। তারা অনেকটা সচেতন হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন সময় মতবিনিময় ও সচেতনতামূলক সভা করে তাদের দিকনির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. মেহেদী হাসান জাগো নিউজকে বলেন, আমরা নিয়মিত খাবার হোটেল ও চাইনিজে অভিযান পরিচালনা করছি। ভোক্তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কোনো অনিয়ম পেলে জরিমানা আদায় করে সচেতন করা হচ্ছে।
আবুল হাসনাত মো. রাফি/এসজে/জেআইএম