খরা-বৃষ্টি-পাহাড়ধসে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি, হাসি নেই জুম চাষিদের মুখে

নয়ন চক্রবর্তী নয়ন চক্রবর্তী
প্রকাশিত: ০৬:৪২ পিএম, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩

বান্দরবানের পাহাড়ে বসবাসকারী অধিকাংশ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর লোকজন বছর জুড়ে খাদ্য ও অর্থের যোগান পেয়ে থাকে জুমের উৎপাদিত ফসল থেকে। এবারের ফসল কাটা শুরু হয়েছে। তবে আবাদকালে অনাবৃষ্টি আর পাকা ফসল ঘরে তোলার সময় ভারী বৃষ্টি ও পাহাড় ধসে নষ্ট হয়েছে অনেক ফসল। তাই ভবিষ্যতে খাদ্য সংকটের আশঙ্কা করছেন জুম চাষিরা।

বান্দরবান কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, জেলায় গত বছর জুমের আবাদ হয়েছে ৭৮৫৫ হেক্টর জমিতে। যা থেকে হেক্টর প্রতি তিন টন ধান উৎপাদন হয়েছিল। এবার আবাদ হয়েছে ৭৯৩৩ হেক্টর। এরমধ্যে ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৫১৪ হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে এবং এর থেকে হেক্টর প্রতি ২.১ টন ধান উৎপাদনের পরিমাপ করা হয়েছে। এ বছর আবাদের সংখ্যা বেশি হলেও গত বছরের উৎপাদনের তুলনায় হেক্টর প্রতি দশমিক ৯ টন কম। সব জুম ক্ষেত কাটা হয়ে গেলে এ উৎপাদনের পরিমাপ কিছুটা বাড়তে বা কমতেও পারে বলে জানিয়েছে বান্দরবান কৃষি বিভাগ।

জুম ফসল রোপণের সময় (এপ্রিল-মে) বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় ধানের ফলন কিছুটা কম হয়েছে। আবার ফসল কাটার সময় ভারী বৃষ্টির কারণে ধান গাছ মাটিতে নুয়ে পড়ে। এতে কিছু কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। যার আনুমানিক ক্ষতি নির্ধারণ হয়েছে প্রায় ৫ কোটি টাকা।

ban

এছাড়া সম্প্রতি বন্যার পানিতে তলিয়ে সমতলের ৭১ হাজার কৃষকের ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। যার আনুমানিক ক্ষতির পরিমাণ ৩১০ কোটি টাকা। সমতল ও পাহাড়ি জুম চাষিদের মিলে এবারের বন্যায় বান্দরবান জেলার কৃষি খাতে প্রায় ৩১৫ কোটি টাকার ক্ষতি নির্ধারণ হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, পাহাড়ে বসবাসকারী জুম চাষিরা প্রাচীন কাল থেকে পাহাড়ের ঢালুতে বিশেষ কায়দায় সম্পূর্ণ প্রকৃতি নির্ভর হয়ে ধানের সঙ্গে সাথী ফসল হিসেবে গম, জব, ভুট্টা, শসা, মারফা, চিনাল, বেগুন, কুমড়া, আলু, মরিচ, সবজিসহ প্রায় ৩০-৩৫ ধরনের ফসলের আবাদ করেন। এ আবাদ থেকে উৎপাদিত ফসল নিজ পরিবারের জন্য সঞ্চয় রেখে উদ্বৃত্ত ফসল বিক্রি করে অর্থনৈতিক সচ্ছলতা ফেরান পাহাড়ে বসবাসকারী জুম চাষিরা।

এবার ফসল রোপণকালে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় ধানের ফলন কিছুটা কম হয়েছে। আবার ফসল কাটার সময় বৃষ্টির কারণে ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাশাপাশি পচন ধরে অধিকাংশ সবজি নষ্ট হচ্ছে। এছাড়া পাহাড় ধসের কারণে কিছু চাষির ফসলি জমি ধসে গেছে।

থানচির বলিপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের দিনতে ম্রো পাড়ার জুম চাষি দৈ লাং ম্রো জানান, এবার পাঁচ একর পাহাড়ি জমিতে ১২০ কেজি ধানের সঙ্গে মরিচ, তিল, যব, কুমড়া, বেগুন, কাকন ধান, চিনাল, মারফা জাতীয় শাক ও ভুট্টাসহ অন্য সাথী ফসলের জুম আবাদ করেন। তবে আবাদের সময় অনাবৃষ্টির কারণে ধানের ফলন ভালো হয়নি। পাকা ফসল কাটার সময় আবার বৃষ্টি হওয়ায় সাথী ফসল গুলোতে পচন ধরে যাচ্ছে। এছাড়া পাহাড় ধসে এলাকার কয়েকজন চাষির ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভবিষ্যতে পরিবার নিয়ে এখন খাদ্য সংকটে পড়তে হতে পারে।

ban

রুমা বটতলী পাড়ার আরেক জুম চাষি হ্লাথোয়াচিং মারমা বলেন, এবার ২০ কেজি ধানের বীজ লাগিয়েছিলাম। এখন পরিবার নিয়ে ফসল কাটায় ব্যস্ত সময় পার করছি। তবে ভারী বৃষ্টির কারণে জুমের অধিকাংশ ধান মাটিতে নুয়ে গেছে। ফলে ক্ষেতের বেশকিছু ধান নষ্ট হওয়ায় উৎপাদিত ফলন দিয়ে ভবিষ্যতে খাদ্য সংকটের আশঙ্কা করছেন তিনিও।

বান্দরবান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এম,এম শাহনেওয়াজ বলেন, এই মৌসুমে জুম রোপণকালে অনাবৃষ্টি, ফসল কাটার সময় ভারী বৃষ্টি ও পাহাড় ধসের কারণে জেলায় গড়ে ৫-১০ শতাংশ জুম চাষির ধান এবং সাথী ফসলের ক্ষতি হয়েছে। যার আনুমানিক আর্থিক মূল্য প্রায় ৫ কোটি টাকা। এছাড়া সম্প্রতি বন্যায় জেলার সমতলের আবাদি জমি প্লাবিত হয়ে প্রায় ৩১০ কোটিসহ কৃষিখাতে মোট ৩১৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

এসজে/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।