সরকারি জায়গায় দোকান উচ্ছেদ, বিপাকে ৫০ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী
লালমনিরহাটের পাটগ্রামে সরকারি জায়গায় নির্মিত দোকানঘর উচ্ছেদের অভিযোগ উঠেছে পৌর মেয়রের বিরুদ্ধে। এতে নিরুপায় হয়ে পড়েছেন ৫০ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। বর্তমানে দোকান খুলতে না পেরে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন তারা।
ফের ব্যবসা করতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), জেলা প্রশাসক ও রংপুর বিভাগীয় কমিশনারসহ বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন জানানো হয়েছে।
জানা যায়, সরকারি সায়রাত মহালের রসুলগঞ্জ হাট পূর্ব বাজার এলাকার উন্নয়নে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ২০০১-২০০২ অর্থবছরে ২৬ লাখ ৬৯ হাজার ১৯৪ টাকা ব্যয়ে এ বাজারের মাল্টিপারপাস শেড নির্মাণ করে। ওই সময় থেকে বাজারের এ জায়গায় কয়েক শত দোকানি প্রতিবছর পাটগ্রাম পৌরসভা থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে নিয়মিত ইজারা (টোল) দিয়ে বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন।
দোকানিদের অভিযোগ, পাটগ্রাম পৌর মেয়র রাশেদুল ইসলাম সুইট ২৫ আগস্ট এক সপ্তাহের মধ্যে দোকান সরানোর নির্দেশ দেন। ১ ও ২ সেপ্টেম্বর উপজেলার পূর্ব বাজার এলাকার গ্রোথ সেন্টার মাল্টিপারপাসের তিনটি শেড থেকে টিন খুলে নিয়ে যান পৌরসভার কর্মীরা। এতে ৫০টি দোকানের মালিকরা নিরুপায় হয়ে পড়েন। বর্তমানে দোকানপাট করতে না পেরে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন পার করছেন তারা।
পূর্ব বাজার এলাকার মাল্টিপারপাস শেডের মুদি দোকানি আরমান হোসেন, সুবল চন্দ্র দেবনাথ ও মসলা ব্যবসায়ী দীলিপ চন্দ্র বলেন, ২৫ আগস্ট মেয়র আমাদের ডেকে এক সপ্তাহের আলটিমেটাম দিয়ে দোকান সরাতে বলেন। না হলে মাল সরানোর কোনো সময় দেওয়া হবে না বলে জানান। ১ সেপ্টেম্বর তিনটি শেডের টিন প্রায় ৩০ জন লোক দিয়ে মুহূর্তেই খুলে ফেলা হয়। আমরা নিরুপায় হয়ে পড়ি। ৫ তলা ভবনের ভিত্তি দিয়ে দোতলা নির্মাণ করে আমাদের দোকানঘর দেবেন বলে শেডের দোকান ভাঙতে বলেন। দোকান না করলে পরিবার নিয়ে বাঁচবো কী করে, খাবো কী। এজন্য পূর্বের স্থানে দোকানপাট করতে জেলা প্রশাসক ও ইউএনওর কাছে আবেদন করেছি।
ওই বাজারের আনারুল হক বলেন, দোকান করে আমার সংসার চালাই। ছেলে-মেয়ের পড়াশোনার খরচ দেই। কিন্তু কয়েকদিন ধরে দোকান বন্ধ। বাইরে কামলা দিতেও পারি না। সমাধানের জন্য ইউএনও ও ডিসির কাছে আবেদন করেছি।
এ বিষয়ে পূর্ব বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ইবাদুজ্জামান বাপি জাগো নিউজকে বলেন, ক্ষুদ্র এসব ব্যবসায়ী শুধুমাত্র দোকানের ক্রয়-বিক্রয়ের ওপর নির্ভরশীল। মেয়র সাহেব আমাদের কিছুই জানাননি । আমরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রুহুল আমীন বাবুল ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিষয়গুলো জানিয়েছি।
পাটগ্রাম পৌরসভার মেয়র রাশেদুল ইসলাম সুইট জাগো নিউজকে বলেন,আমি কাউকে নির্দেশ দেইনি। তাদের নিয়ে সভা করেছি। উচ্ছেদের বিষয় নয়। তারা তাদের জায়গায় থাকবেন। বাজার শেডের টিন পরিবর্তনের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ জন্য তারা মালামাল সরিয়ে নেবেন। এটির সংস্কার করার দায়িত্ব আমার। গ্রোথ সেন্টার মাল্টিপারপাস শেড বাজার উচ্ছেদের জন্য আমি জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করছি।
পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ওই বাজারের কিছু ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আমাকে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। বাজারটি জেলা প্রশাসকের নিয়ন্ত্রণে। বাজারটি খাস খতিয়ানের। উচ্ছেদের বিষয় এলে আমরাই এটি করবো। অন্য কারও এখতিয়ার এখানে নেই। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রবিউল হাসান/এসজে/এমএস