দিনে ৪০ হাজার টাকার আচার বিক্রি করেন হাবিব

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত: ১২:১৩ পিএম, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩

মহামারি করোনার সময় দেশের প্রায় বেশিরভাগ মানুষই কর্মহীন হয়ে পরে। অনেকের পক্ষে কোনো রকম খেয়ে-পড়ে বেঁচে থাকাটাও যেন দায় হয়ে পড়েছিল। সবার মতো বিপাকে পড়েছিলেন নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার কাশীপুর এলাকার মো. হাবিবও। মসজিদ-মাদরাসায় কাজ করে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সংসার চালাতে বেশ হিমশিম খাচ্ছিলেন। নিজের অবস্থার পরিবর্তনের জন্য নানা চিন্তা ভাবনা শেষে সিদ্ধান্ত নেন আচার বানানোর।

এরপরই বিভিন্ন রকমের মৌসুমি কাঁচা ফল একসঙ্গে ছ্যাঁচে মিশ্রণ তৈরি করে রকমারি মসলা দিয়ে তৈরি করেন আচার। সেই আচার সদর উপজেলার ডিক্রিরচর ঘাটে বিক্রি করা শুরু করেন। অল্প সময়ের মধ্যেই মানুষের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে যায় তার বানানো আচার। এ আচারে কোনো রকম ক্ষতিকর দ্রব্য ব্যবহার করা হয় না। এমনকি এই আচার খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়ে যাবে, মুখে রুচি আসবে বলে দাবি বিক্রেতার।

আচারের মূল কারিগর হাবিব জাগো নিউজকে বলেন, করোনার সময়ে যখন কোনো কাজ ছিল না তখন আচার বানিয়ে বিক্রি করা শুরু করি। বর্তমানে আচারটি অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন অর্ডার করে এসে আচার নিয়ে যায়। শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত আমার এই আচার খেয়ে থাকে। অনেকেই বাসায় নিয়ে যায় এই আচার ভাত দিয়ে খাওয়ার জন্য।

আরও পড়ুন: ৪ গ্রামের দুঃখ একটি কাঠের সাঁকো

‘আম, আমড়া, তেঁতুল, জলপাই, আমলকী, চালতা, বড়ই, কলা, হরিতকী, বয়রা, পেয়ারা, করমচা, কালিজিরা, ধনিয়া ও বিভিন্ন মসলা সহ ৪২ পদের মিশ্রণ করে এই আচার বানানো হয়। ছোট কাপ প্রতি পিস ১০ টাকা, ২৫০ গ্রাম ৯০ টাকা, ৬০০ গ্রাম ১৪০ টাকা দামে বিক্রি করা হয়। প্রতিদিন সকাল ১০ থেকে শুরু করে রাত ১১টা পর্যন্ত এই আচার বিক্রি চলে। বিশেষ করে ছুটির দিনে অনেক বেশি বেচাকেনা হয়ে থাকে। সেদিন প্রায় ৫০ হাজার টাকার মতো বেচাকেনা হয়ে থাকে।’

jagonews24

হাবিব আরও বলেন, প্রতিদিন ২ থেকে ৩ মণ আচার খুচরা বিক্রি হয়ে থাকে। একই সঙ্গে অর্ডারও রয়েছে। আবহাওয়া খারাপ থাকলে খুচরা বেচাকেনা কম হয়। তিন মণ আচার বানাতে খরচ হয় প্রায় ১৭ হাজার টাকা। আর তা বিক্রি হয় ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকায়। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে অনেকেই অর্ডার করে আচার নিয়ে যায়।

হাবিবের ছেলে খাদেমুল ইসলাম বলেন, তিন বছর আগে করোনা ছিল তখন থেকেই এই ব্যবসার শুরু হয়। আমার বাবা মসজিদ-মাদরাসায় চাকরি করতেন। করোনার কারণে মসজিদে নামাজ পড়া বন্ধ হয়ে যায়। মসজিদে নামাজ পড়া বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমার বাবা বেকার হয়ে পড়েন। তিনি আগে থেকেই আচার বানাতে জানতেন। কোনো উপায় না পেয়ে আচার বানানো শুরু করেন। ধীরে ধীরে এই আচার জনপ্রিয় হয়ে যায়। বর্তমানে এই পর্যায়ে এসেছে।

আরও পড়ুন: ‘যারা পাগল ভাবতেন তারাই এখন আমার প্রশংসা করেন’

তিনি আরও বলেন, আমি আগে অন্য চাকরি করতাম। তবে আচারের জনপ্রিয়তা বেড়ে যাওয়ায় আমিও বাবার সঙ্গে আচার তৈরি ও বিক্রির কাজে যোগ দেই। পরে আরও তিনজন কর্মচারী নেই। আমাদের এই ব্যবসা আরও বড় করার চিন্তা রয়েছে। বর্তমানে আমরা পাঁচজন এই আচার তৈরি করি। আগে এখানে বড় দোকান ছিল। ফেরি আসার কারণে আমাদের দোকানগুলো ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে। যার কারণে এখন দোকান ছোট হয়ে গেছে। আগের থেকে বেচাকেনাও কমে গেছে। আশা করছি দোকানটা বড় করতে পারলে আবার আগের মতো বেচাকেনা হবে।

আচার বিক্রেতা মোতালিব বলেন, এই আচারে ব্যবহার করা হয় না মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর কোনো উপাদান। কোনো রং, কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় না। কার্যক্ষমতা ধরে রাখার জন্য অনেকে এসবি পাউডারের ব্যবহার করে কিন্তু এখানে কোনো রকমের পাউডার ব্যবহার করা হয় না। এমনকি প্রতিদিনের আচার প্রতিদিন বানানো হয়।

আচার খেতে আসা শফিকুল ইসলাম নামে একজন বলেন, এই আচারটা খুবই অসাধারণ। আমি যখনই এখানে আসি এই আচার খাই। এই আচারে কোনো ভেজাল নেই। কোনো ক্ষতিকর উপাদান দেয় না। বিভিন্ন রকমের কাঁচা ফল ছ্যাঁচে এই আচারটি তৈরি করা হয়ে থাকে।

আরও পড়ুন: আচার বিক্রি করে সংসার চলে বিল্লালের

আজিজুল নামের আরেক ক্রেতা বলেন, আচারটা অনেক ভালো। কোনো কেমিকেল দেওয়া হয় না। আমরা প্রতিদিনই খাই। অনেক সময় পরিবারের অন্য সদস্যদের জন্য বাসায় নিয়ে যাই। বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকজন এসে এই আচার নিয়ে যায়। এটা ছাড়া বাড়তি কোনো আচার খাওয়া হয় না।

আলীরটেক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জাকির হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, মানুষ ইচ্ছা করলে অনেক কিছুই করতে পারে তার উদাহরণ হচ্ছে মো. হাবিব। তিনি করোনার সময়ে চাকরি হারিয়েও বসে থাকেননি। বেকার না থেকে কারো কাছে না হাত না পেতে নিজে আচার বানিয়ে বিক্রি করেছেন। এখন তিনি আচার বিক্রি করে সফল। তার আচারের সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে চারদিকে। তিনি আমাদের সবার অনুপ্রেরণা।

মোবাশ্বির শ্রাবণ/জেএস/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।