‘বাজারে পাটের দাম নেই, খরচই উঠছে না’

এন কে বি নয়ন এন কে বি নয়ন ফরিদপুর
প্রকাশিত: ০৯:৪৩ এএম, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩

ফরিদপুরে পাটের দাম কম বলে দাবি করেছেন কৃষকরা। তারা বলছেন, নতুন পাটের আশানুরূপ দাম পাচ্ছে না। পাটের এমন দরপতনে তাদের উৎপাদন খরচই উঠছে না। এতে লোকসানে পড়েছেন কৃষকরা।

পাট আবাদের দিক দিয়ে দেশে দ্বিতীয় ফরিদপুর। চলতি মৌসুমে জেলায় ৮৮ হাজার ৩৩ হেক্টর জমিতে পাট আবাদ হয়েছে। এ বছর বৈরী আবহাওয়া সত্ত্বেও পাটের ফলন ভালো হয়েছে। তবে ভরা মৌসুমে বৃষ্টি না থাকায় পাট জাগ দেওয়া নিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েন কৃষকরা।

https://cdn.jagonews24.com/media/imgAllNew/BG/2023March/jute-2-20230912094227.jpg

কৃষকদের অভিযোগ, গতবছর পাটের ফলন ও দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকরা সোনালি আঁশে সুদিনে ফেরার স্বপ্ন বুনছিলেন। কিন্তু চলতি বছরে পাটের দাম মণপ্রতি ৬০০-৭০০ টাকা কমে যাওয়ায় চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা।

আরও পড়ুন: পাটের সর্বনিম্ন মূল্য ৪০০০ টাকা মণ নির্ধারণের দাবি

কৃষকরা বলছেন, চলতি মৌসুমে পাটের যে দাম তাতে পাট বিক্রি করে লাভ তো দূরে থাক, খরচই উঠছে না। বিশেষ করে বর্গাচাষিদের বিঘাপ্রতি ৫-৭ হাজার টাকা লোকসান হচ্ছে।

jagonews24

সালথা উপজেলার পাটচাষি আকাশ মণ্ডল জাগো নিউজকে বলেন, ‘এলাকাভেদে একবিঘা জমিতে পাটচাষের জন্য জমি উপযোগী করাসহ খরচ হয়েছে ২৩-২৪ হাজার টাকা। সেখানে বিঘাপ্রতি তুষা জাতের পাটের উৎপাদন ১০ মণ, আর দেশি পাট উৎপাদন হয় ৯ মণ। সেই হিসেবে ১০ মণ পাট বিক্রি হচ্ছে ১৮-২০ হাজার টাকায়। পাটকাঠি বিক্রি করা যাচ্ছে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকায়। সবমিলিয়ে পাটচাষে লাভ থাকছে না।’

আরেক পাটচাষি শফিকুল ইসলাম বলেন, তিনি গতবছর চার বিঘা জমিতে পাটচাষ করেছিলেন। খরচ বাদ দিয়ে যে পাট হয়েছিল, তাতে তার বিঘাপ্রতি ৪-৫ হাজার টাকা লাভ হয়েছিল। গতবছর প্রতিমণ পাট বিক্রি করেছিলেন ২৬৫০-২৭০০ টাকায়। এবার বিক্রি হচ্ছে ১৭০০-১৮০০ টাকায়। খরচ বাদে তার প্রতি বিঘায় লোকসান হচ্ছে কমপক্ষে সাত হাজার টাকা।

jagonews24

আরও পড়ুন: পাটচাষে আগ্রহ হারাচ্ছে কৃষক

মধুখালী উপজেলার পাটচাষি মনিতোষ রায় বলেন, ‘পাট নিয়ে এবার খুব সমস্যায় আছি। শুরুতে বৃষ্টি না হলেও সেচ দিয়ে পাটচাষ করেছি। শ্রমিক পাওয়া যায় না। শ্রমিকের মূল্য চড়া। সবমিলিয়ে যা খরচ হয়েছে পাট বিক্রি করে উঠছে না। আগামীতে আবার পাটচাষ করবো কি না ভাবছি।’

বোয়ালমারী উপজেলার শেখর ইউনিয়নের বড়গাঁ এলাকার কৃষক আমির আলী ও চর শেখর গ্রামের কৃষক দাউদ মোল্লা জাগো নিউজকে বলেন, ‘এবার প্রখর খরা গেছে। সার-কীটনাশকের দামও বেশি। শ্রমিকের মূল্য চড়া। পানির অভাবে ভালোভাবে কৃষক পাট জাগ দিতে পারেনি। এ কারণে পাটের রং ভালো হয়নি। হাট-বাজারে পাটের দাম নেই। লাভ দূরে থাক, খরচই ঠিকমতো উঠছে না। এবার পাটচাষ করে লোকসান হয়েছে।’

কথা হয় ওই এলাকার পাট ব্যবসায়ী কাজী আরিফের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, বর্তমানে জুটমিলগুলোতে পাটের চাহিদা কম, তাই দামও কম; ১৮০০-২০০০ টাকা মণ। খুব ভালো মানের পাট হলে প্রতিমণ ২৩০০ টাকা দরে আমরা কিনছি।’

https://cdn.jagonews24.com/media/imgAllNew/BG/2023March/jute-6-20230912094301.jpg

সালথা উপজেলা সদর বাজারের পাট ব্যবসায়ী আবু তালেব জাগো নিউজকে বলেন, এখন পর্যন্ত ভালো মানের পাট ২৬০০-২৭০০ টাকা, মাঝারি মানেরটা ২২০০-২৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

আরও পড়ুন: ‘কষ্ট করে পাট চাষ করে কী লাভ’

বোয়ালমারীর সাতৈর বাজারের বড় পাট ব্যবসায়ী আতিয়ার রহমান। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, এবার পাটের মান খুব বেশি ভালো হয়নি। পাটকলগুলো এখন পর্যন্ত পাট কেনা শুরু করেনি। এ কারণে বিভিন্ন হাট থেকে অল্প অল্প করে কিনছি।

এ বিষয়ে ফরিদপুরের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ রফিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, এবার জেলায় ৮৮ হাজার ৩৩ হেক্টর জমিতে পাট আবাদ হয়েছে। আমাদের লক্ষ্যমাত্রা থেকেও বেশি উৎপাদন হয়েছে।

তিনি বলেন, পাট উৎপাদনের পরপরই সব কৃষক একসঙ্গে পাট বাজারে নিয়ে গেলে দাম একটু কম পাওয়া যায়। সেক্ষেত্রে যদি কিছুদিন রেখে কৃষক বিক্রি করেন, তাহলে দাম ভালো পাওয়া যায়।

এসআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।