বিপাকে প্রশাসন

পাগলিটা মা হলেও দায় নিলো না কেউ

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি যশোর
প্রকাশিত: ০৮:১২ পিএম, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩

যশোরে যমজ সন্তান জন্ম দেওয়া মানসিক ভারসাম্যহীন নারী মাহিনুরকে (৩৫) নিয়ে বিপাকে পড়েছে প্রশাসন। দু’দিন অনুসন্ধানের পর তার স্বজনদের সন্ধান পাওয়া গেলেও তারা মাহিনুরের দায়িত্ব নিয়ে নারাজ। মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ায় হাসপাতালেও তিনি অসংলগ্ন আচরণ করছেন। ফলে প্রসূতি ও দুই নবজাতককে নিয়ে তারাও আছেন বিড়ম্বনায়। দু’একদিন অপেক্ষা করে আদালতের নির্দেশনা নিয়ে মা ও দুই নবজাতকের ব্যাপারে পদক্ষেপের কথা ভাবছে কর্তৃপক্ষ।

গত ৩ সেপ্টেম্বর যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার ধলগ্রাম ইউনিয়নের নতুন গ্রামের জামিরুল ইসলামের খড়ের ঘরে যমজ সন্তান প্রসব করেন মানসিক ভারসাম্যহীন ওই নারী। পরে গৃহকর্তা জামিরুল ওই নারীকে বাঘারপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। ওইদিন সন্ধ্যায় তাকে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। এরপর থেকে মা ও দুই নবজাতক যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে মা ও দুই নবজাতকের দেখভাল করা জেলা প্রতিবন্ধী বিষয়ক কর্মকর্তা মুনা আফরিণ জানান, বাঘারপাড়া থেকে মানসিক ভারসাম্যহীন প্রসূতি মা ও দুই নবজাতককে যশোর হাসপাতালে পাঠানোর পর এখানে তাদের চিকিৎসা চলছে। হাসপাতালের নার্স, আয়া, আনসার নারী সদস্য ছাড়াও কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবী নারী শিশু দু’টি ও মায়ের দেখাশোনা করছেন। প্রসূতি মা মাঝে মধ্যেই অসংলগ্ন আচরণ করছেন। এখন তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর বা নিরাপদ আশ্রয় দরকার।

এদিকে গত ৩ সেপ্টেম্বর ওই নারীকে যশোর হাসপাতালে আনার পর তার পরিচয় শনাক্তে তৎপরতা শুরু করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। দু’দিন পর পিবিআই তার পরিচয় উদ্ধার করে। জানা যায়, ওই নারীর নাম মোসাম্মৎ মাহিনুর। তিনি খুলনার তেরখাদা উপজেলার বারাসাত গ্রামের চান্দু মিয়ার মেয়ে।

এরপর পিবিআই ওই ঠিকানার সূত্র ধরে বারাসাত গ্রামে যোগাযোগ করে। সেখানে মাহিনুরের এক চাচার সন্ধান পাওয়া যায়। তাদের মাধ্যমে জানা যায়, মাহিনুরের মা জাকিয়া বেগম ও ছোটভাই হাসিবুর রহমান লিপ্টন নড়াইলের কালিয়া উপজেলার মাথাভাঙ্গা আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাস করেন।

পিবিআই যশোরের পুলিশ সুপার রেশমা শারমিন জানিয়েছেন, পরিচয় ও ঠিকানা শনাক্তের পর তারা নড়াইলের কালিয়ায় ওই নারীর ছোটভাই হাসিবুরের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। মাহিনুরের পরিচয় নিশ্চিত করলেও তারা মাহিনুর বা তার সন্তানের দায়িত্ব নিতে রাজি না। এমনকি তারা যশোরে আসতেও রাজি হননি।

মাহিনুরের ছোট ভাই হাসিবুর রহমান লিপ্টন জানান, অনেক আগে তার বোন মাহিনুর নিজের পছন্দে শফিকুল ইসলাম নামে একজনকে বিয়ে করে ঢাকায় থাকতেন। নিজের পছন্দে বিয়ে করায় তার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল না। এরপর তার দুটি ছেলে-মেয়ে হয়। ওই সংসার ভেঙে গেলে দুই ছেলে মেয়ে রাকিব (১১) ও রাবেয়া (৩) নড়াইলে তাদের কাছে রয়েছে। আর মাহিনুর ঢাকায় গার্মেন্টসে চাকরি করতেন। দেড় বছর আগে তিনি নিখোঁজ হন। আগেও তার মাথায় কিছুটা সমস্যা ছিল। যোগাযোগ না থাকায় তারা কোনো খোঁজ খবর নেননি।

হাসিবুর রহমান লিপ্টন আরও জানান, প্রশাসন থেকে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। কিন্তু তিনি জানিয়ে দিয়েছেন তিনি রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। অভাবের সংসারে মাহিনুরের আগের দুই ছেলে-মেয়ে রয়েছে। আর কোনো ছেলে-মেয়ে বা মাহিনুরের দায়িত্ব তারা নিতে চান না। প্রশাসন যেটা ভালো মনে করবে তাই করার জন্য তিনি অনুরোধ জানিয়েছেন।

সমাজসেবা অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক অসিত কুমার সাহা জানিয়েছেন, মাহিনুরের যে ভাইয়ের সন্ধান পাওয়া গেছে তারা কোনো দায়িত্ব নিতে চায় না। ফলে মাহিনুর ও তার দুই সন্তান নিয়ে আদালত ও জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

স্থানীয় সরকার বিভাগ যশোরের উপ-পরিচালক রফিকুল হাসান বলেন, যেহেতু মাহিনুরের মা ও ভাই তার কোনো দায়িত্ব নিতে আগ্রহী নয় এখন শিশু দু’টির ব্যাপারে সিদ্ধান্তের জন্য জেলা শিশু কল্যাণ বোর্ডের মাধ্যমে আদালতের দ্বারস্থ হতে হবে। আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শিশু দু’টির ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আর জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত সাপেক্ষে মাকে সমাজসেবা অধিদপ্তরের ভবঘুরে আশ্রয় কেন্দ্র বা নিরাপদ কোনো আবাসে রাখার পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

মিলন রহমান/এফএ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।