সোয়া দুই কোটি টাকার ব্রিজের কাজ ফেলে উধাও ঠিকাদার

আরিফ উর রহমান টগর আরিফ উর রহমান টগর টাঙ্গাইল
প্রকাশিত: ০৮:৩৬ পিএম, ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩

টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলায় নির্মাণাধীন পিএসসি গার্ডার ব্রিজের কাজ এক বছরে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা দুই বছরেও শেষ হয়নি। স্থানীয়দের দাবি পূরণে উপজেলা ও ইউনিয়ন সড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্পের আওতায় ব্রিজটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। তবে সেই ব্রিজের কাজ শেষ না করে উধাও ঠিকাদার।

জানা গেছে, ২ কোটি ২৮ লাখ ৭০ হাজার ৭৩১ টাকা ব্যয়ে ২৫ মিটার দৈর্ঘ্যের পিএসসি গার্ডার ব্রিজের কাজটি ঢাকার মাইন উদ্দিনবাসী নামক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পায়। ২০২১ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি কাজটি শুরু হয়ে ২০২২ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ঠিকদারি প্রতিষ্ঠান মাত্র ২-৩ মাস আগে কাজটি শুরু করে অজ্ঞাত কারণে ফেলে রেখে উধাও হয়েছে।

আরও পড়ুন: সেতু আছে, সংযোগ সড়ক নেই

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) কাগজপত্রে ২৫ ভাগ কাজ সম্পন্ন দেখালেও উপজেলার করুটিয়াপাড়া বাজারের উত্তর পাশে কাকড়ার জোড়া এলাকায় নির্মাণাধীন পিএসসি গার্ডার ব্রিজটির বাস্তবে মাত্র কয়েকটি পিলার ও পাইলিং হয়েছে। বারবার তাগাদা দিলেও ঠিকাদার এলাকায় আসছেন না। এতে প্রায় ২ বছরের অধিক সময় ধরে ব্রিজের দুই পাশে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন অন্তত ১৫-১৬ গ্রামের মানুষ।

স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল জব্বার, রফিকুল ইসলামসহ অনেকেই বলেন, কাকড়া জোড়ার ব্রিজটি নির্মাণ না হওয়ায় হতেয়া-রাজাবাড়ি, কালিদাস, ঠকাইনাপাড়া, ফুলঝুড়িপাড়া, ভাতকুড়াচালা, করুটিপাড়া, কালমেঘা, ছলংগা, বহুরিয়া চতলবাইদ, হারিঙ্গাচালাসহ অন্ততপক্ষে ১৫-১৬টি গ্রামের মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই। এ এলাকার মানুষ সখীপুর শহরে বা অন্য এলাকায় যেতে চাইলে ২০-২৫ কিলোমিটার ঘুরে যাতায়াত করতে হচ্ছে। এতে অর্থ সময় দুই-ই বেশি ব্যয় হচ্ছে।

স্থানীয় কয়েকজন শিক্ষক বলেন, ব্রিজটি সম্পন্ন না হওয়া ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় স্থানীয় স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীরা সময়মতো প্রতিষ্ঠানে যেতে পারছে না।

কালিদাস ও করুটিয়াপাড়া বাজারের ব্যবসায়ী হাফিজুর রহমান ও সাইফুল ইসলাম বলেন, দুই পাশে পাকা সড়ক থাকলেও শুধুমাত্র ব্রিজ নির্মাণ সম্পন্ন না হওয়ায় যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। এতে মালামাল পরিবহন করা কষ্টকর হয়ে উঠেছে। হাটবাজারেও আসতে ভোগান্তির শেষ নেই।

আরও পড়ুন: সেতু থাকলেও নেই সংযোগ সড়ক, দুর্ভোগে এলাকাবাসী

বহুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সরকার নূরে আলম মুক্তা বলেন, ব্রিজটি ২ বছর ধরে ফেলে রাখায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন গ্রামবাসী। ওই সড়ক ব্যবহার করে ইউনিয়ন পরিষদের উপকারভোগী ও বিভিন্ন সেবাপ্রার্থীদের আসা-যাওয়া করতে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিকল্প সড়ক ঘুরে অনেক সময় লেগে যায়, এতে বয়োবৃদ্ধ মানুষের কষ্টের সীমা থাকে না।

এ বিষয়ে জানতে একাধিকবার যোগাযোগ করেও ঢাকার মাইন উদ্দিনবাসী নামক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের কোনো বক্তব্য নেওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) উপসহকারী প্রকৌশলী ফরিদ আহমেদ জানান, বারবার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে তাগাদা দিয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না। কাজটি সময়মতো শেষ না করায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ঢাকা অফিস থেকে চিঠি দিয়ে ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। বর্ষা মৌসুম গেলে প্রাক্কলন ব্যয় নির্ধারণ করে পুনরায় টেন্ডারের মাধ্যমে অসমাপ্ত কাজটি শেষ করা হবে।

তিনি আরও জানান, ওই প্রকল্পের আওতায় ব্রিজটির দুই পাশের ১৮ ফুট প্রশস্ত করে সাড়ে ৩ কিলোমিটার রাস্তা পাকাকরণের কাজ অন্য ঠিকাদার শেষ করেছেন।

এফএ/এএইচ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।