গলাচিপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
‘কষ্ট কইরা আছি, কোনসময় যেন বিল্ডিং ভাইঙ্গা পড়ে’
‘উপর দিয়া বিল্ডিংয়ের ছাদ ভাইঙ্গা ভাইঙ্গা (ভেঙে ভেঙে) পড়ে। হেরপর ফ্যান নাই, গরমে টিকতে পারি না। বাথরুমও পরিষ্কার না। এতো কষ্ট কইরা আছি। কোনসময় যেন বিল্ডিং ভাইঙ্গা পড়ে।’
আতঙ্কের সুরে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার মৌডুবি ইউনিয়নের বাসিন্ধা রানি বেগম। অসুস্থ হয়ে গত কয়েকদিন ধরে তিনি গলাচিপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি আছেন।
শুধু রানি বেগম নয়; কখন জানি ছাদ ভেঙে মাথায় পড়ে, এ আতঙ্কে থাকেন গলাচিপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা।
ঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও নানা প্রতিকূলতাকে মোকাবিলা করে চলতে হয় নদী ও সাগর বেষ্টিত দুই উপজেলা গলচিপা এবং রাঙ্গাবালীর মানুষকে। তবে রাঙ্গাবালীতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স না থাকায় চিকিৎসা নিতে আসতে হয় গলাচিপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। তবে ৫০ শয্যার এ হাসপাতালটি এখন একেবারে জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, রোগীদের মাথার ওপর ভেঙে পড়ছে ভবনের ছাদ ও বিমের পলেস্তারা। দরজা-জানালা খুলে পড়ছে। একটু বৃষ্টিতেই বিম, কলাম ও ছাদের ফাটল দিয়ে পানিতে একাকার হয়ে যায় হাসপাতালের বিভিন্ন কক্ষ। এরই মধ্যে পরিত্যক্ত হয়েছে হাসপাতালের শিশু বিভাগটি। ঝুঁকি বিবেচনায় বিদ্যুৎ সংযোগ ও বৈদ্যুতিক পাখা খুলে রাখা হয়েছে। ফলে প্রচণ্ড গরমে রোগী ও স্বজনদের ভরসা হাতপাখা।
গলাচিপা উপজেলার চরকাজল ইউনিয়ন থেকে চিকিৎসা নিতে এসেছেন রাশিদা বেগম। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘হাসপাতালে ফ্যান নাই। জাগো (যাদের) বাসা কাছাকাছি, তারা ছোট টেবিল ফ্যান নিয়ে আসছে। আমরা কী করমু? হারা (সারা) রাইত গরমের ঠেলায় ঘুমাইতে পারি না। হেরপর বিল্ডিংয়ের যে অবস্থা, কোনসময় জানি মাতার উপর ছাদ ভাইঙ্গা পড়ে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হলেও ধারণক্ষমতার অধিক রোগী নিয়মিত এখানে চিকিৎসা নিচ্ছেন। চিকিৎসকদের বেশিরভাগ পদই ফাঁকা। এর মধ্যে বেশ কয়েকজন চিকিৎসক আছেন যারা নানা অজুহাতে দীর্ঘদিন ধরে জেলা শহর এবং ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ডেপুটেশনে দায়িত্ব পালন করছেন।
এ বিষয়ে গলাচিপা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মেজবাহ উদ্দিন বলেন, আমাদের চিকিৎসকদের কিছু পদ খালি আছে। কয়েকজন চিকিৎসক ডেপুটেশনে অন্যত্র কর্মরত। তবে সবচেয়ে বড় সংকট হচ্ছে ভবনটি অনেক পুরোনো হওয়ায় ছাদ ও বিমের পলেস্তারা খসে খসে পড়েছে। বৃষ্টি হলে অনেক স্থান দিয়ে পানি ঢুকছে।
তিনি বলেন, নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আমরা রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়া চেষ্টা করছি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
আব্দুস সালাম আরিফ/এসআর/এমএস