হারু ঘোষের রসগোল্লার সুনাম মানুষের মুখে মুখে
স্বাদ ও মানে সুনাম কুড়িয়েছে শরীয়তপুরের হারু ঘোষ মিষ্টান্ন ভান্ডারের রসগোল্লা। মিষ্টির গুণগত মান ঠিক রেখে অন্তত ৭০ বছর ধরে সুনামের সঙ্গে ব্যবসা করে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। এ দোকানের রসগোল্লার খ্যাতি জেলাজুড়ে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী ও প্রতিষ্ঠান মালিকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শরীয়তপুরের পালং উত্তর বাজারে ১৯৫৩ সালের দিকে যাত্রা শুরু হয় হারু ঘোষ মিষ্টান্ন ভান্ডারের। তখন অবশ্য প্রতিষ্ঠানটির নামকরণ করা হয়নি। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন হারাধন ঘোষের বাবা শচীনাথ ঘোষ। তিনি পালং এলাকার বাসিন্দা। মাত্র তিনজন মিষ্টি তৈরির কারিগর নিয়ে টিনের এক চালার ছোট্ট একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন শচীনাথ ঘোষ। রসগোল্লার পাশাপাশি দোকানে তৈরি করা হতো আমিত্তি, জিলাপি, খেজুর, লালমোহন আর সন্দেশ। এরপর শচীনাথের ছেলে হারাধন ঘোষ দায়িত্ব নেন প্রতিষ্ঠানটির।
এসব মিষ্টির পাশাপাশি তৈরি করে বিক্রি করতে থাকেন ছানা সন্দেশ, রসমালাই আর দই। অল্প সময়ের মধ্যে হারাধনের মিষ্টির সুনাম ছড়িয়ে পড়ে জেলা জুড়ে। এরপর থেকেই দোকানের নাম হয়ে যায় ‘হারু ঘোষ মিষ্টান্ন ভান্ডার’।
আরও পড়ুন: স্বাদে সেরা নওগাঁর প্যারা সন্দেশ
বর্তমানে এ দোকানে প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজার টাকার মিষ্টি বেচাকেনা হয়। প্রতিকেজির দাম ২৬০ টাকা। হারাধন ঘোষের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করতে সাহায্য করছেন তারই ছেলে সুমন ঘোষ।
বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে ছয়জন কারিগর মিষ্টি তৈরির কাজ করছেন। এদের মধ্যে প্রধান কারিগর মিঠুন বালা। তিনি প্রায় ২৫ বছর ধরে এখানে মিষ্টি তৈরির কাজ করছেন।
মিঠুন বালা জাগো নিউজকে বলেন, আমরা প্রতিদিন গড়ে ২৫০-৩০০ কেজি দুধের বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি তৈরি করি। এরমধ্যে শুধু রসগোল্লাই তৈরি হয় ৭০-৮০ কেজি ছানার। আমরা ক্রেতাদের আস্থা ধরে রাখতে সবসময় মিষ্টির গুণাগুণ ঠিক রাখি।
আরও পড়ুন: শেরপুরের শত বছরের ঐতিহ্য ছানার পায়েস
হারাধন ঘোষের ছেলে সুমন ঘোষ জাগো নিউজকে বলেন, ‘হারু ঘোষের মিষ্টির দোকানের কথা বললে যে কেউ এক নামেই চিনে ফেলে। আমাদের এ দোকানের রসগোল্লা জেলার উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের মাধ্যমে কয়েকবার গণভবনে গিয়েছে। আর সেই রসগোল্লা খেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রশংসা করেছেন বলে জানতে পেরেছি।’
কথা হয় প্রতিষ্ঠানটির মালিক হারাধন ঘোষের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমি এ রসগোল্লা তৈরির কাজটি বাবার হাত ধরেই শিখেছি। তিনি খুব ভালো রসগোল্লা বানাতেন। এরপর আমিও বাবার মতোই সুনামের সঙ্গে ব্যবসাটি ধরে রেখেছি।’
এ দোকানের নিয়মিত ক্রেতা খালেক ফকির। তিনি বলেন, ‘আমার বয়স যখন পাঁচ বছর, তখন দাদার সঙ্গে এ দোকানের মিষ্টি খেতে আসতাম। এখন আমার বয়স ৪৫ বছর। এখনো রসগোল্লার স্বাদ একই রয়েছে। তবে দামটা একটু বেড়েছে।’
আরও পড়ুন: অতিথি আপ্যায়ন-উপহার সবকিছুতেই ক্ষীরপুরি
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র বলেন, ‘এ প্রতিষ্ঠানটির মিষ্টির সুনাম অনেক শুনেছি। শুনেছি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও নাকি এ দোকানের রসগোল্লা খেয়ে ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন। মিষ্টির গুণগত মান ভালো হওয়ায় দোকানটির সুনাম রয়েছে।’
এসআর/এমএস