বাসে মিলছে ভ্রাম্যমাণ কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, স্বপ্ন বুনছেন তরুণরা
কম্পিউটারের বেসিক ও নেটওয়ার্কিং নিয়ে বাসে ভ্রাম্যমাণ প্রশিক্ষণের ব্যতিক্রম উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। দেশের বেকার তরুণ এবং তরুণীদের দক্ষ, স্বাবলম্বী ও আত্মকর্মী গড়ে তুলতে সারাদেশে এ প্রশিক্ষণ দিচ্ছে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর। এর মাধ্যমে ফ্রিল্যানসার হওয়ার স্বপ্ন বুনছেন ভৈরবের ৪০ তরুণ-তরুণী।
যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরাধীন ‘টেকনোলজি এমপাওয়ারমেন্ট সেন্টার অন হুইলস ফর আন্ডারপ্রিভিলেজড রুরাল ইয়ং পিপল অব বাংলাদেশ (টেকাব)’ শীর্ষক কারিগরি সহায়তায় কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ভ্রাম্যমাণ বাসে ৪৪ দিনব্যাপী চারটি শিফটে ৪০ জন প্রশিক্ষণার্থীকে কম্পিউটার ও নেটওয়ার্কিং প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের আওতায় কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরবে উপজেলা প্রাঙ্গণে ভ্রাম্যমাণ বাসের ভেতর কম্পিউটার প্রশিক্ষণার্থীদের কলরব। প্রতি আসনের সামনে একটি করে আছে ল্যাপটপ। সেই আসনে বসেই তরুণ-তরুণীরা নিচ্ছেন প্রশিক্ষণ।
প্রশিক্ষণার্থী মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর টেকাব দ্বিতীয় পর্যায়ে শীর্ষ প্রকল্পের দুই মাসব্যাপী কম্পিউটার প্রশিক্ষণার্থী হিসেবে নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে করছি। এ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আমরা কম্পিউটার বেসিক ও নেটওয়ার্কিং শিক্ষা গ্রহণ করেছি। প্রশিক্ষণের আগে কম্পিউটার সম্পর্কে বেশি ধারণা ছিল না। বর্তমান যুগে প্রতিটা ক্ষেত্রেই কম্পিউটার জ্ঞান জানা অত্যন্ত জরুরি। এখন প্রশিক্ষণ থেকে প্রাপ্ত জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সহায়ক ভূমিকা হিসেবে কাজ করবে। আমি প্রশিক্ষণ শেষে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে একটি অ্যাকাউন্ট খুলেছি। যার মাধ্যমে অনলাইনে কাজ শুরু করেছি।
আরেক প্রশিক্ষণার্থী শাওন বেগম বলেন, যুব উন্নয়নের এমন উদ্যোগে বেশ খুশি আমরা। বিনা পয়সায় কম্পিউটারের প্রশিক্ষণ শেষে আমাদের সার্টিফিকেটসহ প্রতিদিনের যাতায়াত বাবদ দুই শত টাকা করে প্রতিজনকে দিচ্ছেন। আমি কম্পিউটার বেসিক ও নেটওয়ার্কিং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আমার বেকারত্ব দূরীকরণ হবে। প্রশিক্ষণের প্রাপ্ত জ্ঞানকে প্রযুক্তি খাতে কাজে লাগিয়ে নতুন কিছু করার আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে।
ভ্রাম্যমাণ কম্পিউটার প্রশিক্ষণের প্রশিক্ষক মো. আলমগীর হোসেন পাবেল জাগো নিউজকে বলেন, সরকার যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষিত বেকার তরুণ-তরুণীদের কম্পিউটার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। আমি এ প্রকল্পের একজন প্রশিক্ষক। দুই মাস প্রশিক্ষণার্থীদের ইন্টারনেট হাউসিং, অফিস এক্সেল, ডাটা এন্ট্রির ফর্ম তৈরির বিস্তারিত শেখাচ্ছি। এক্সেলে কীভাবে সিলারি সিট ও রেজাল্ট সিট তৈরি করবে তা শিখিয়েছি। আমরা শিক্ষার্থীদের গ্রাফিক্স ডিজাইনের মাধ্যমে বিজনেস কার্ড, লোগো ডিজাইন তৈরি করতে শিখিয়েছি। শুধু তাই নয় আমরা পাঁচটি অনলাইন মার্কেট সম্পর্কে তাদের বিস্তারিত ধারণা দিয়েছি। এতে তারা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হতে পারবেন। পাশাপাশি ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে।
ভৈরব উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা জলি বোদন তৈয়বা জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের ভৈরব উপজেলায় বাসে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের ভ্রাম্যমাণ কম্পিউটার বেসিক ও নেটওয়ার্কিং প্রশিক্ষণ হয়েছে। এ প্রশিক্ষণে ২০ জন যুবক এবং বিশ জন যুব মহিলা অংশগ্রহণ করেছে। আমরা যথাযথভাবে ৪০ জন প্রশিক্ষণার্থীকে ৪৪ দিনের জন্য নির্বাচন করেছি। এ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে তারা বাস্তব জীবনের কাজে লাগাতে পারবে। এছাড়া এই প্রশিক্ষণের অংশগ্রহণকারীদের মধ্য আমি আশা করছি যে অন্ততপক্ষে দশ জন প্রশিক্ষণার্থী ফ্রিল্যান্সার হিসেবে গড়ে উঠতে পারবে। তাছাড়া শুধু ফ্রিল্যান্সার নয় তারা এখান থেকে গ্রাফিক্স ডিজাইন, এমএস অফিস, ইন্টারনেট আউটসাইডসহ নানা ধরনের প্রোগ্রাম শিখেছেন। গ্রাফিক্স ডিজাইনের মাধ্যমে তারা নিজেদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারবে। এছাড়া প্রশিক্ষণার্থীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে যুব উন্নয়ন অফিস হলে সবসময় তাদের সঙ্গে আছে তাদের সহযোগিতা দিয়ে অবশ্যই এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে আমি এই চল্লিশ প্রশিক্ষণার্থীদের সুন্দর ভবিষ্যৎ জীবন কামনা করেন তিনি।
ভৈরব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাদিকুর রহমান সবুজ জাগো নিউজকে বলেন, বর্তমান যুগে কম্পিউটার জ্ঞান ছাড়া বাস্তবে জীবনধারণ খুব কঠিন। বর্তমান সরকার সব সেক্টরে এখন ডিজিটাল করেছেন সেই জন্য কম্পিউটার জ্ঞান অর্জন অত্যন্ত প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চান, এজন্যই সরকার দেশের যুব সমাজকে স্মার্ট ও দক্ষ আত্মনির্ভরশীল হিসেবে গড়ে তুলতে এ ধরনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আমরা আশাবাদী এ প্রশিক্ষণ নিয়ে ৪০ জন প্রশিক্ষণার্থী তাদের জীবনে নিজেকে আত্ম নির্ভরশীল হিসেবে গড়ে উঠবে।
কিশোরগঞ্জ জেলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক কামাল উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, একটি দেশের উন্নয়নে যুবরাই প্রাণ হিসেবে কাজ করেন। তাই সরকার দেশের উন্নয়নে প্রত্যন্ত অঞ্চলের তরুণ-তরুণীদের দক্ষ ও স্মার্ট করে গড়ে তুলতে ভ্রাম্যমাণ কম্পিউটার বেসিক ও নেটওয়ার্কিং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিয়েছে। তাদের স্বনির্ভরতা দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করছে। এছাড়া এই প্রশিক্ষণ গ্রহণ রে তারা কম্পিউটার ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে নিজেরাই কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে।
এসজে/এমএস