আরিচা-কাজীরহাট রুট
বছরজুড়ে ড্রেজিং, তবুও কাটে না নাব্য সংকট
মানিকগঞ্জের আরিচা ঘাট ও পাবনার কাজীরহাট নৌ-রুটে নাব্য সংকটের কারণে ব্যাহত হচ্ছে ফেরি চলাচল। মূল চ্যানেলে ডুবোচর জেগে ওঠায় প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকা ঘুরে চলতে হচ্ছে ফেরিগুলোকে। এতে পারাপারে সময় বেশি লাগছে। অথচ প্রায় বছরজুড়েই এই নৌ-রুটে চলে ড্রেজিং কার্যক্রম।
স্থানীয়দের অভিযোগ, খনন করা মাটি আবার নদীতেই ফেলার কারণে ড্রেজিংয়ের সুফল মিলছে না।
বেগম রোকেয়া ফেরির ইনল্যান্ড মাস্টার অফিসার আমির হোসেন ভূইঞা জানান, দুই সপ্তাহ ধরে আরিচা-কাজীরহাট নৌপথে নাব্য সংকট তৈরি হয়েছে। আরিচা প্রান্তে ব্যাসিনসহ আড়াই কিলোমিটার এলাকায় এই সমস্যা বেশি। প্রয়োজনীয় গভীরতা না থাকায় তারা চলতে পারছেন না। ২৬ আগস্ট থেকে তারা প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকা ঘুরে বিকল্প চ্যানেলে চলাচল করছেন। এতে আগের চেয়ে প্রায় দেড়গুন সময় বেশি লাগছে।
কুঞ্জলতা ফেরির ইনল্যান্ড মাস্টার রেজাউল করিম জানান, আরিচা ২ নম্বর ঘাট থেকে ৩ নম্বর ঘাট পর্যন্ত নাব্য সংকট বেশি। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে নদীর স্রোত। পলি জমে মূল চ্যানেল বন্ধ থাকায় তাদের বিকল্প পথে চলতে হচ্ছে।
বিআইডব্লিউটিসির আরিচা ঘাট ম্যানেজার মো. আব্দুল্লাহ জাগো নিউজকে জানান, ফেরি চলাচলে সময় বেশি লাগায় জ্বালানি খরচও বেড়েছে। দুই ঘাটে যানবাহনগুলোকেও আগের চেয়ে বেশি সময় অপেক্ষায় থাকতে হয়।
সারাবছর ড্রেজিং চলার পরও কেন নাব্য সংকট কাটছে না এমন প্রশ্নের সরাসরি কোনো উত্তর না দিয়ে তিনি বলেন, বিষয়টি বিআইডব্লিউটিএকে জিজ্ঞেস করলেই ভালো হয়।
আরও পড়ুন: আবারও মরতে বসেছে আরিচা-কাজীরহাট নৌরুট
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, আরিচায় দুটি ফেরি ঘাটের মধ্যে একটি চালু রয়েছে। ড্রেজিংয়ের কারণে তিন নম্বর ফেরি ঘাটটি বন্ধ। দুই ও তিন নম্বর ঘাটের মাঝে তিনটি ড্রেজার বসানো হয়েছে। মাঝ নদীতে আছে আরও তিনটি ড্রেজার। ৬টির মধ্যে একটি ড্রেজার খননকাজে নিয়োজিত। বাকিগুলো বন্ধ। ড্রেজার দিয়ে খনন করা মাটি মাঝ নদীতে ফেলা হচ্ছে। বাকি দুটি ড্রেজারের পাইপ বসানো হয়েছে উজানের দিকে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও বন্দরের ব্যবসায়ী আবুল হোসেন জানান, ঘাটে ৫ থেকে ৬টি ড্রেজার চলে। যদি এরা সঠিকমতো কাটতো তাহলে নদীতে ফেরি চলাচলে বিঘ্ন ঘটতো না। কিন্তু ড্রেজারগুলো বেশিরভাগ সময়ই বন্ধ থাকে।
রহিম উদ্দিন নামে একজন জানান, একই জায়গা থেকে বার বার মাটি কাটে। মাটি কেটে উজানেই ফেলা হচ্ছে। স্রোতের সঙ্গে সেই মাটি এসে আবারো আগের জায়গা ভরে যাচ্ছে। একইভাবে এরা সারাবছর মাটি খণন করছে। এ কারণে ড্রেজিং চললেও কোনো কাজে আসছে না। এছাড়া ড্রেজারের পাইপের কারণে ঘাট বন্ধ। নৌকা ভিড়তে পারে না। দোকানপাটে বেচাবিক্রি বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানান তিনি।
আরিচা-কাজীরহাট নৌ-রুটে ড্রেজিং কার্যক্রমের বিষয়ে কথা বলতে যোগাযোগ করা হলে বিআইডব্লিউটিএর ড্রেজিং বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. আক্কাছ আলী জানান, ড্রেজিং সঠিকভাবেই হচ্ছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য চাইলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন তিনি।
আরও পড়ুন: ২০ বছর পর ফেরি ভিড়ল আরিচা ঘাটে
তবে বিআইডব্লিউটিএর আরিচা ড্রেজার বেইজ অফিসে গেলে নিরাপত্তাকর্মী প্রধান গেট আটকে ভেতরে ঢুকতে দেননি। পরে নিরাপত্তাকর্মীর ফোন পেয়ে অফিস থেকে গেটের বাইরে বের হয়ে আসেন ড্রেজিং বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী (মেকানিক) মো. সাদ্দাম হোসেন।
অফিসের ভেতরে ঢুকতে নিষেধ কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। আবার আছেও।
এটা সংরক্ষিত এলাকা কিনা প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সংরক্ষিত না আবার সংরক্ষিত। যেমন আমি যদি আপনার বাড়িতে হুটহাট ঢুকতে যাই আপনি কি আমাকে ঢুকতে দিবেন?
পরে তিনি জানান, নির্বাহী প্রকৌশলীর নির্দেশনাতেই বাইরের কাউকে ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয় না।
এফএ/জিকেএস