অন্ধ মা-প্রতিবন্ধী ছেলের শিকলবন্দি জীবন
মা অন্ধ। ছেলে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী। প্রতিবন্ধী ছেলের চোখ দিয়েই মায়ের পথচলা। মানুষের কাছ থেকে সাহায্য নিয়েই তাদের পেটের খোরাকি চলে। মঙ্গলবারও (২৯ আগস্ট) মানুষের কাছে সাহায্য চাইতে শহরে এসেছিলেন মা-ছেলে। কিন্তু সন্ধ্যা হলে তারা আশ্রয় নেন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। রাত হওয়ায় হাসপাতালের মেঝেতে শিকলবন্দি অবস্থায় মা-ছেলে শুয়ে পড়েন।
মা-ছেলের হৃদয়বিদারক দৃশ্যটি হাসপাতালে আসা রোগী ও স্বজনদের নজর কাড়ে। অনেকে তাদের ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করেন। ফেসবুকে ওই মানবিক পোস্টটি দেখে রাত সাড়ে ১২টার দিকে হাসপাতালে ছুটে যান কালীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আশরাফুল আলম আশরাফ। তিনি তাৎক্ষণিকভাবে মা-ছেলের জন্য বেড ও কাপড়সহ চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।
আরও পড়ুন: সংসার চালাতে হেঁটে মাছ বিক্রি করেন আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই নারীর নাম রহিমা। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের দাদপুর গ্রামের অন্ধ রহিমা হতদরিদ্র ভ্যানচালক ছালাম হোসেনের স্ত্রী। ১০ বছর আগে ছালাম হোসেনের সঙ্গে রহিমার বিয়ে হয়। তাদের প্রথম সন্তান আব্দুর রহমান (৮)। ছেলে হওয়ার কিছুুদিন পর নিরুদ্দেশ হন ছালাম।
রহিমা আগে থেকেই চোখে কিছুটা কম দেখতেন। একদিন হঠাৎ তার ঘরে আগুন লেগে সব পুড়ে যায়। দগ্ধ হন রহিমা। ওই ঘটনায় দুই চোখেই দৃষ্টিশক্তি হারান তিনি। এরপর শুরু হয় দুর্বিষহ জীবন।
ছোট্ট ছেলে আব্দুর রহমানকে নিয়ে অন্ধ রহিমার ঠাঁই হয়েছিল একই গ্রামে বাবার বাড়িতে। অসুস্থতার কারণে সেখানেও জায়গা হইনি তাদের। দিন কাটে লোকের কাছে হাত পেতে। রাত কাটাতে হয় কোনো প্রতিষ্ঠানের সামনে। চোখে না দেখার কারণে ছেলের সাহায্যেই পথ চলতে হয় রহিমার। ছোট্ট ছেলেটি কোথাও যেন হারিয়ে না যায় সেজন্য কোমরে শিকল বেঁধে রাখেন। খুব বেশি আবদার করলে মাঝে মধ্যে খুলে দেন। খেলাধুলা করে এলে আবারও বেঁধে রাখেন শিকলে।
আরও পড়ুন: দুই কিডনিই নষ্ট, বাঁচতে চান শুভ
স্থানীয় হাবিব ওসমান জানান, পরিচিত এক সাংবাদিকের অসুস্থতার খবর শুনে তিনি মঙ্গলবার রাতে হাসপাতালে যান। দ্বিতীয় তলায় উঠেই দেখেন মেঝেতে শিকলবন্দি অবস্থায় মা ও ছেলে শুয়ে আছেন। এসময় রহিমা বেগম জানান, তিনি অন্ধ, চোখে দেখেন না। তার একমাত্র বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে শহরে ভিক্ষা করেন। তার বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী শিশুসন্তান হারিয়ে যেতে পারে সেই আশঙ্কায় কোমরের সঙ্গে শিকলবন্দি করে রাখেন। শহরে সাহায্য চাইতে এসে রাত হওয়ায় হাসপাতালের মেঝেতে আশ্রয় নিয়েছেন।
কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক কৌশিক আহম্মেদ জানান, তিনি রাতে ছিলেন না। খবর নিয়ে জেনেছেন, ওই রাতে একজন নারী তার ছেলেকে নিয়ে হাসপাতালের আশপাশে ঘোরাঘুরির পর রাতে থাকার জন্য মেঝেতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। সকালে তারা চলে গেছেন।
তাদের হাসপাতালে দেখতে যাওয়া পৌর মেয়র আশরাফুল আলম বলেন, মা ও ছেলের এক শিকলে বন্দি জীবনের দৃশ্যটি অত্যন্ত বেদনাদায়ক। আমি ফেসবুকে ছবি দেখার পর তাদের দেখতে হাসপাতালে গিয়েছিলাম। অন্ধ রহিমার সঙ্গে কথা বলেছি।
পরিবারটির বেঁচে থাকার জন্য ব্যক্তিগতভাবে সহায়তা করবেন বলেও জানান মেয়র।
আব্দুল্লাহ আল মাসুদ/এসআর/জেআইএম