একযুগের প্রতীক্ষার অবসান, চালু হলো রামসাগর এক্সপ্রেস
অবশেষে উত্তরাঞ্চলবাসীর দীর্ঘ প্রায় এক যুগ প্রতীক্ষার অবসান হয়েছে। গাইবান্ধার বোনারপাড়া-দিনাজপুর রুটে দীর্ঘ ১২ বছর বন্ধ থাকা ‘গরিবের অ্যাম্বুলেন্স’ খ্যাত রামসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনটির পুনরায় চালু হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) দুপুর দেড়টার দিকে গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার বোনারপাড়ায় ট্রেনযাত্রার উদ্বোধন করেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন।
তবে এবার বোনারপাড়া-দিনাজপুর নয়, মেইল ট্রেনটি বোনারপাড়া থেকে উত্তরের শেষ জেলা পঞ্চগড় পর্যন্ত চলবে। পরিবর্তন আনা হয়েছে সময়সূচিতেও।
বোনারপাড়া রেলস্টেশন সংশ্লিষ্টরা জানান, আগে রামসাগর এক্সপ্রেস বোনারপাড়া থেকে দিনাজপুর পর্যন্ত চললেও এবার ট্রেনটি চলবে বোনারপাড়া রেলস্টেশন থেকে পঞ্চগড় বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম রেলস্টেশন পর্যন্ত। বোনারপাড়া রেলস্টেশন থেকে ভোর সাড়ে ৫টায় ছেড়ে গিয়ে ট্রেনটি বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম স্টেশন পৌঁছাবে দুপুর ২টা ৫০ মিনিটে। ৯ ঘণ্টা ২০ মিনিটে ট্রেনটি ২৪টি রেলস্টেশন অতিক্রম করে পাড়ি দেবে ২৬৪ কিলোমিটার পথ। যার প্রত্যেকটি স্টেশনেই ওঠানামা করবেন যাত্রীরা। সর্বোচ্চ ৯০ টাকায় যাত্রীরা বোনারপাড়া থেকে পঞ্চগড় পর্যন্ত যেতে পারবেন। আর সর্বনিম্ন ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫ টাকা। দশটি কোচের এই ট্রেনটি যাত্রী বহন করতে পারবে ৬৭৮ জন।
বোনারপাড়া রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, নানা রঙের ফুল-বেলুনে সাজানো রামসাগর ট্রেন দাঁড়িয়ে আছে স্টেশনের এক নম্বর প্ল্যাটফর্মে। এসময় পুরো এলাকাজুড়ে মানুষজন উপস্থিত ছিলেন। ট্রেনের সঙ্গে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন বিভিন্ন বয়স ও শ্রেণি-পেশার নারী-পুরুষ।
রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালের ১২ নভেম্বর গাইবান্ধাসহ উত্তরের জেলাগুলোর লাখো মানুষের চলাচলে আশীর্বাদ হয়ে আসে রামসাগর এক্সপ্রেস। সাঘাটার বোনারপাড়া থেকে প্রতিদিন ভোর ৬টায় ছেড়ে ট্রেনটি গাইবান্ধা ও রংপুর হয়ে দিনাজপুরে পৌঁছাত। এ ট্রেনে রংপুরে চিকিৎসা, ব্যবসা-বাণিজ্য ও দাপ্তরিক কাজকর্ম এবং দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডে কাজ শেষে সন্ধ্যায় ফিরতেন যাত্রীরা। কিন্তু জনবল সংকটসহ নানা অজুহাতে ২০১২ সালের ২৪ আগস্ট বন্ধ করে দেওয়া হয় এই ট্রেনটি।
ট্রেনটি বন্ধ হওয়ার পর থেকেই যোগাযোগ সংকট উত্তরণে আন্দোলন করে আসছিলেন গাইবান্ধা-রংপুরের নাগরিক সমাজ থেকে শুরু করে সর্বস্তরের জনগণ। ট্রেনটি চালুর দাবিতে জোরালো আন্দোলনের অংশ হিসেবে ২০২০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বোনারপাড়া রেলস্টেশনে ঢাকাগামী লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেন ৩০ মিনিট অবরোধ করে রাখেন আন্দোলনকারী।
অন্যদিকে, গাইবান্ধা-৫ আসনের সংসদ সদস্য ও ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়ার মৃত্যুর পর শূন্য আসনের উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত এমপি প্রার্থী মাহামুদ হাসান রিপন প্রচারণায় বন্ধ থাকা রামসাগর ট্রেন চালুর প্রতিশ্রুতি দেন। ট্রেন চালুর দাবিতে রাজনৈতিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক, নাগরিক সমাজসহ সর্বস্তরের মানুষের আন্দোলন এবং মাহমুদ হাসানের প্রচেষ্টায় আজ পুনরায় চালু হলো রামসাগর ট্রেন।
বন্ধ এ ট্রেনটি চালু হওয়ায় বোনারপাড়া-পঞ্চগড়গামী যাত্রীদের কমবে ভোগান্তি ও অতিরিক্ত ব্যয়। প্রসার ঘটবে এ অঞ্চলের মানুষের ব্যবসা-বাণিজ্যের। বিশেষ করে সুবিধা ভোগ করবে শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি সহজ হবে কর্মজীবীদের যোগাযোগও।
স্কুল শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম জাগো নিউজকে বলেন, ট্রেনটি চালু হওয়ায় আমরা অনেক খুশি। কেননা, আমরা গাইবান্ধার মানুষ চিকিৎসার জন্য প্রতিনিয়ত রংপুর যাই। রংপুর যোগাযোগে আমাদের যাত্রা সহজ হলো।
গাইবান্ধা জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য মো. শামসুজ্জোহা বলেন, ট্রেনটি চালুর জন্য দীর্ঘদিন আন্দোলন করা হয়েছে। দীর্ঘ আন্দোলনের ফলে আজ রামসাগর এক্সপ্রেস ট্রেন চালু হয়েছে। ট্রেনের সময়সূচির পরিবর্তন করা দরকার।
গাইবান্ধা-৫ আসনের সংসদ সদস্য মাহমুদ হাসান রিপন বলেন, আমার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল রামসাগর ট্রেনটি চালু করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং রেলমন্ত্রীর আন্তরিকতার কারণে আজ এই ট্রেনটি চালু করা সম্ভব হয়েছে। নদীভাঙন কবলিত গাইবান্ধা অঞ্চলের মানুষের কাছে কম ভাড়া ও নির্দিষ্ট সময়ে চলাচলের জন্য ট্রেনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ট্রেনটি চালুর ফলে গাইবান্ধা থেকে পঞ্চগড় রুটে এ এলাকার যাত্রীরা সহজেই যোগাযোগ করতে পারবেন। গাইবান্ধাসহ কয়েকটি জেলার অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে।
এদিকে, ট্রেন উদ্বোধনের পর ওই ট্রেনেই জেলার সাদুল্লাপুর উপজেলার নলডাঙ্গা ইউনিয়নের নলডাঙ্গা রেলস্টেশনের আধুনিকায়ন কাজের উদ্বোধন করতে যান রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন।
এর আগে ট্রেন পুনরায় চালু উপলক্ষে সাঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় যোগ দেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। এসময় গাইবান্ধা সদর আসনের সংসদ সদস্য মাহাবুব আরা বেগম গিনিসহ অন্য নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
শামীম সরকার শাহীন/এমআরআর/এএসএম