মন্ত্রীর ছেলের ডাকে সাড়া না দেওয়ায় বিদ্যুৎ অফিস ভাঙচুর
সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরজ্জামান আহমেদের ছেলের সঙ্গে দেখা না করায় লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলা বিদ্যুৎ অফিসে (নেসকো) হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। মন্ত্রিপুত্র রাকিবুজ্জামান আহমেদ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।
মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) দুপুরে এ হামলার ঘটনা ঘটে। এরপর থেকে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন উপজেলা বিদ্যুৎ অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী রকি চন্দ্র দাস।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শরিফুল ইসলাম ও তুষভান্ডার ইউনিয়নের সাবেক সদস্য নূরুন্নবীর নেতৃত্বে আট থেকে ১০ জনের একটি দল দুপুরে কালীগঞ্জ বিদ্যুৎ অফিসে যান। তারা নির্বাহী প্রকৌশলী রকি চন্দ্র দাসের রুমে প্রবেশ করে জানতে চান, মন্ত্রিপুত্র ডাকার পরেও তিনি কেন তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাননি। এত সাহস তিনি কোথায় পেলেন। এসময় তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও জামাত-শিবিরের কর্মী বলে প্রাণনাশের হুমকি দেন তারা।
এরপর ২০ মিনিটের মধ্যে রাকিবুজ্জামান আহমেদের কাছে ক্ষমা চেয়ে আসতে বলেন তারা। একপর্যায়ে তারা অফিসের আলমারি, ডিজিটাল হাজিরা মেশিন ভাঙচুর করেন। এসময় উপ-সহকারী প্রকৌশলী ও কর্মচারীদের ওপর হামলা করা হয়।
ভুক্তভোগী নির্বাহী প্রকৌশলী রকি চন্দ্র দাস জানান, গত বৃহস্পতিবার দুপুরে তার অফিসের পিচরেট মিটার পাঠক শাহিনুর ইসলাম জানান, মন্ত্রিপুত্র রাকিবুজ্জামান আহমেদ সন্ধ্যার পর স্থানীয় ‘অন্বেষা’ ক্লাবে তাকে দেখা করতে বলেছেন। শ্বশুর-শাশুড়ি অসুস্থ হওয়ায় তিনি দেখা করতে যেতে পারেননি। এরপর সোমবার বিকেলে উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সজীব ফোন করে তাকে ওই ক্লাবে মন্ত্রিপুত্রের সঙ্গে দেখা করতে বলেন। অফিসিয়াল কাজে ব্যস্ততার কারণে তিনি দেখা করতে পারেননি।
রকি চন্দ্র দাস বলেন, এটা কোনো অফিসের ডেকোরামের মধ্যে পড়ে না যে, মন্ত্রীর ছেলে ডাকলে আমাকে যেতে হবে। অবৈধ সুপারিশ না মেনে মামলা দেওয়ায় একটি পক্ষ আমার প্রতি ক্ষুব্ধ হয়েছেন।
থানায় অভিযোগ দিয়েছেন কি না এমন প্রশ্নে রকি চন্দ্র দাস জানান, ভয়ে তিনি থানায় যাননি। অভিযোগ করার পর সুস্থ শরীরে ঘরে ফেরা নিয়ে তিনি শঙ্কায় আছেন। তবে বিষয়টি উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন।
রংপুর নেসকো অফিসের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম মণ্ডল বলেন, বিদ্যুৎ অফিসে হামলার ঘটনা শুনেছি। খোঁজ-খবর নিয়ে পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অভিযুক্ত উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি শরিফুল ইসলাম বলেন, এসব ষড়যন্ত্র। তারা নিজেরাই ভাঙচুর করেছে। আমরা কেউ সেখানে যাইনি। আমি এক বিয়ের অনুষ্ঠানে আছি। সব মিথ্যা ও বানোয়াট। রাকিবুজ্জামান ভাই ও আমাদের ভাবমূর্তি নষ্ট করতেই এসব ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।
অভিযোগের বিষয়ে রাকিবুজ্জামান আহমেদ বলেন, সব ভিত্তিহীন ও কাল্পনিক। এসবের সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। আমার বা আমার বাবার কোনো শত্রুর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে প্রকৌশলী এমন অভিযোগ করছেন।
অন্বেষা ক্লাবে ডেকে পাঠানো প্রসঙ্গে রাকিবুজ্জামান বলেন, আমি কেন তাকে লোক মারফত ডেকে পাঠাবো। তার তো ফোন নম্বর আমার কাছে আছে। দরকার হলে আমি তাকে নিজেই ফোন করে ডাকবো।
জিতু কবীর/এমআরআর/এএসএম