৫০ টাকার ডাব যেভাবে ২০০ টাকা

কাজল কায়েস কাজল কায়েস , জেলা প্রতিনিধি, লক্ষ্মীপুর লক্ষ্মীপুর
প্রকাশিত: ০৪:৫৬ পিএম, ২৯ আগস্ট ২০২৩

অডিও শুনুন

ডেঙ্গু ও মৌসুমি জ্বরের কারণে লক্ষ্মীপুরসহ সারাদেশে ডাবের চাহিদা বেড়েছে। মেঘনা উপকূলীয় এ জনপদে নারিকেলের ব্যাপক ফলন হয়। জেলায় বছরে সাড়ে ৫০০ কোটি টাকার নারিকেল বেচাকেনা হয়। এ জেলায় ডাবের শতাধিক পাইকারি ব্যবসায়ী রয়েছেন। তারা প্রতিদিনই ঢাকা, সিলেট ও কুমিল্লাসহ বিভিন্ন স্থানে ডাব সরবরাহ করেন। ডাব কেনাবেচা ঘিরে এখানে গ্রামীণ অর্থনীতিও চাঙ্গা হয়েছে।

আকারভেদে গাছে প্রতিটি ডাব বিক্রি হয় ৩০-৫০ টাকায়। বাগান মালিকরা বাড়িতে যাওয়া পাইকারদের কাছে তা বিক্রি করেন। গ্রামের পাইকার থেকে ৯ হাত বদল হয়ে ঢাকায় গিয়ে সেই ডাব দাঁড়ায় ২০০ টাকায়। শহরের আড়তদারদের অতিরিক্ত মুনাফা লোভের কারণে ক্রেতা পর্যায়ে দাম বেশি গুনতে হয়। যদিও জেলা শহর, রায়পুর, রামগঞ্জ শহরে খুচরা ডাব ১০০-১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সোমবার জেলা কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, জেলায় ২ হাজার ৫৮০ হেক্টর জমিতে নারিকেল গাছ রয়েছে। তবে অধিকাংশ বাগানই অপরিকল্পিতভাবে করা। ২-৩ মাসের মধ্যে গাছের ফলন ডাবে পরিপক্ব হয়। নারিকেলে পরিপক্ব হতে তা দ্বিগুণ সময় লাগে। জেলার প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই নারিকেল গাছ রয়েছে। নারিকেলের জন্য এ জেলার সুনাম থাকলেও এখন ডাবের জন্যও সারাদেশে পরিচিতি পাচ্ছে।

jagonews24

সম্প্রতি বাসাবাড়ি, দালালবাজার, পানপাড়া ও ভবানীগঞ্জ গ্রামের ১২ জন ডাব ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, গ্রাম থেকে শহরের ক্রেতার হাত পর্যন্ত একটি ডাব পৌঁছাতে ৯-১০টি ধাপ রয়েছে। প্রতিটি হাত বদলে গুনতে হয় বাড়তি টাকা। এরমধ্যে ঢাকা শহরের মধ্যস্বত্বভোগী আড়তদার প্রতিটি ডাবে ৩০-৫০ টাকা লাভ করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লক্ষ্মীপুর সদর, রায়পুর, রামগঞ্জ, কমলনগর ও রামগতি উপজেলায় শতাধিক ডাব ব্যবসায়ী রয়েছেন। তারা স্থানীয় বাজার ও বাগান থেকে কিনে শহরে নিয়ে আড়তে পাইকারি বিক্রি করেন। প্রতিদিন অন্তত ৫-১০টি পিকআপ ভ্যান ও ট্রাকযোগ লক্ষ্মীপুর থেকে ঢাকায় ডাব নেওয়া হয়। বাগান থেকে ৯টি ধাপ পেরিয়ে ক্রেতার হাতে পৌঁছায় সেসব ডাব।

বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মালিক থেকে বাগানের গাছের ডাব কিনতে হয় আকারভেদে ৩০-৫০ টাকায়। গাছ থেকে প্রতিটি ডাব নামাতে পাড়িয়াদের (যারা গাছ থেকে ডাব পাড়েন) দিতে হয় ৩-৪ টাকা, গাছের গোড়ায় রশি ধরে কিংবা ঝরা ডাব একস্থানে জড়ো করতে ৫০ পয়সা, স্থানীয় ভ্যানচালক-ছোট পিকআপভ্যানযোগে স্থানীয় আড়তে জড়ো করতে ২ টাকা, ট্রাকযোগে ঢাকার আড়তে পৌঁছাতে খরচ ৪-৫ টাকা, সেখানে নামানোর শ্রমিকদের ৪০-৫০ পয়সা, এরপর নিজের খরচ-বিনিয়োগ-পারিশ্রমিক হিসেবে জেলা পর্যায়ের ব্যবসায়ীর ৫ টাকা লাভ, আড়তদার ব্যবসায়ীর ২০-৩০ টাকা ও বাকিটা খুচরা ব্যবসায়ীর লাভ। এভাবেই একটি ডাব বাগান থেকে ঢাকায় ক্রেতা পর্যন্ত ১৫০-২০০ টাকা হারে বিক্রি হয়।

jagonews24

কমলনগর উপজেলার তোরাবগঞ্জ এলাকার তোরাব আলী মিয়ার খামার বাড়িতে প্রায় ১ হাজার ৫০০ নারিকেল গাছ রয়েছে। আগে তারা শুকনো নারিকেল বিক্রি করলেও দুই বছর ধরে ২-৩ মাস পরপর ডাব বিক্রি করেন। প্রতিবার ২-৩ হাজার ডাব বিক্রি করা হয়।

খামার বাড়ির মালিক নুরুল আমিন মিয়া জানান, ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে গ্রাহক পর্যায়ে ১০০-২০০ টাকায় ডাব বিক্রি হয়। কিন্তু আমি কখনো ৩৫ টাকার বেশি মূল্য পাইনি।

jagonews24

ভবানীগঞ্জের রবিউল আলম দেড়যুগ ধরে ডাবের ব্যবসা করেন। তিনি বলেন, আমি বাগান মালিক, ছোট ব্যবসায়ীদের থেকে ডাব কিনে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লার বড় পাইকারি আড়তে বিক্রি করি। গড়ে প্রতিটি ডাবে ১০ টাকা লাভ থাকে। শহরের ক্রেতাদের হাতে পৌঁছাতে অনেক হাত বদল হয়। ঘাটে ঘাটে টাকা গুনতে গিয়ে দাম বেশি পড়ে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. জাকির হোসেন বলেন, নারিকেল-ডাব আমাদের অর্থকরী ফসল। বছরে সাড়ে ৫০০ কোটি টাকার লেনদেন হয় এখানে। এনিয়ে কর্মসংস্থান হয়েছে। পরিকল্পিতভাবে পটাশ, কম্পোস্ট সার ব্যবহার করে পরিচর্যা করলে নারিকেলের ফলন আরও বাড়বে।

এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।