ধর্ষণ চেষ্টার মামলা
জামিন পেয়ে গলায় মালা ও বাদ্য বাজিয়ে আসামির উল্লাস
টাঙ্গাইলের গোপালপুরে চতুর্থ শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে গ্রেফতার বৃদ্ধ জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। মুক্তি পেয়েই আলেপ শেখ (৬০) নামের ওই অভিযুক্ত বৃদ্ধ গলায় মালা পরে ব্যান্ডপার্টি সঙ্গে নিয়ে বাজনা বাজিয়ে পুরো গ্রামে উল্লাস করেছেন।
এখানেই শেষ নয়। ওই শিশুর মা এবং মামলার বাদীর বাড়ির আঙিনায় গিয়ে আসামি ও তার লোকজন নেচে গেয়ে তোলপাড় করেন। এমন ঘটনায় সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে চলছে সমালোচনা। অভিযুক্তদের কঠিন শাস্তি দাবি করেছেন এলাকাবাসী।
রোববার (২৭ আগস্ট) গোপালপুর থানা সূত্র জানায়, চতুর্থ শ্রেণির ওই ছাত্রীকে গত ২৪ জুলাই দুপুরে কাঁঠাল খাওয়ার লোভ দেখিয়ে নির্জন বাড়িতে নিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা চালান মুদি দোকানি আলেপ শেখ। এসময় শিশুটির কান্নার শব্দে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে আলেপ শেখ পালিয়ে যান। ওইদিন বিকেলে থানায় মামলা হলে পুলিশ আলেপ শেখকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠায়।
মামলার বাদী এবং ভিকটিমের মা শনিবার থানায় দায়ের করা অভিযোগে জানান, গত বৃহস্পতিবার আদালত থেকে জামিন নিয়ে রাত নয়টায় আলেপ শেখ গলায় মালা পরে ব্যান্ডপার্টি নিয়ে গ্রামে প্রবেশ করেন। ব্যান্ডপার্টির সঙ্গে তার আত্মীয়সহ বেশ কয়েকজন উৎসুক মানুষ যোগ দেন। তারা নেচে গেয়ে পুরো গ্রামে উল্লাস করেন। এক পর্যায়ে আলেপ শেখ দলবল নিয়ে বাদীর বাড়ির আঙিনায় প্রবেশ করে নাচানাচি শুরু করেন। পাশাপশি গালিগালাজ ও মারপিটের হুমকি দেন। এ অবস্থায় দিনমজুর বাবা-মা অসহায় শিশুটিকে নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। পুলিশের সহযোগিতা চাইছেন তারা।
হেমনগর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আলীম হোসেন বলেন, বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে ব্যান্ডপার্টি এবং কিছু মানুষের কোলাহলে শব্দে ঘুম ভেঙে যায়। শিশুটির পরিবার খুবই নিরীহ। তারা এখন আতংকে আছে।
একই গ্রামের বাসিন্দা সাহার আলী, ইব্রাহীম খলিল ও মকবুল হোসেন বলেন, শিশু নির্যাতনের মামলায় আদালত থেকে জামিন পেয়ে গলায় মালা পরে ব্যান্ডপার্টির বাদ্যের তালে নেচে গেয়ে এমনভাবে আনন্দ করাটা কোনো সভ্যতার পর্যায়ে পড়ে না। প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ তার অপকর্মের প্রতিবাদ করার সাহস পায় না।
উড়িয়াবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক আছিয়া বেগম বলেন, ভুক্তভোগী শিশুটি খেলাধুলা এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বেশ ভাল। এমন ঘটনায় শিশুটি চুপসে গেছে। কয়েকদিন সে স্কুলে আসেনি। ব্যান্ডপার্টির ঘটনায় ওই শিশু আর তার অসহায় পরিবার নিরপত্তাহীনতায় ভুগছে। আমরা এর কঠিন বিচার চাই। যাতে ভবিষ্যতে এমন অপরাধ করার সাহস কেউ না পায়।
ব্যান্ডপার্টির প্রধান কালিহাতী উপজেলার নারান্দিয়া গ্রামের বাসিন্দা অনিক মিয়া বলেন, উড়িয়াবাড়ী গ্রামের আলেপ শেখ গত বৃহস্পতিবার ধর্ষণ চেষ্টা মামলায় আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পান। আইনজীবী অ্যাডভোকেট রবিউল হাসান রতন আমাদের ব্যান্ডপার্টিকে তিন হাজার চারশ টাকা ভাড়ায় এনে দিয়েছেন। রাত নয়টায় আমরা ওই গ্রামে যাই। রাত ১২টা পর্যন্ত সারা গ্রাম ঘুরে বাদ্যবাজনা বাজিয়ে সবাইকে আনন্দ দেই। তবে জেলখানা থেকে আসামি বের হলে যে বাজনা বাজায় এটা প্রথম করলাম।
হেমনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান তালুকদার বলেন, ধর্ষণ চেষ্টা মামলায় জামিন পেয়ে কোনো আসামি এভাবে বাদ্য বাজনা বাজিয়ে আনন্দ উৎসব করে বলে আমার জানা নেই। এতে ভুক্তভোগী শিশুটি আরও নিরাপত্তাহীনতা এবং সম্মানহানির অবস্থায় আছে। আমরা অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
শিশুটির মামা বলেন, আমার বোন অসহায়। আসামিরা অত্যন্ত প্রভাবশালী। জামিনে বের হয়ে যে কাণ্ড করেছেন এটা কেউ করে না। আমরা যথাযথ বিচার চাই।
অভিযোগের বিষয়ে মামলার প্রধান আসামি আলেপ শেখের ছেলে জীবন বলেন, আমাদের সঙ্গে তাদের বাপ-দাদার আমল থেকে বিরোধ। মামলাটি মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও হেমনগর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এসআই বশির আহমেদ বলেন, জামিন পাওয়ার পর বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে গ্রামে আনন্দ উৎসব করার অভিযোগ সত্য। ধর্ষণ চেষ্টার দায়ে হওয়া মামলার সত্যতা মিলেছে। শিগগির আদালতে চার্জশিট দেওয়া হবে।
এ বিষয়ে গোপালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশারফ হোসেন জানান, বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে আসামি দলবল নিয়ে বাদী ও ভুক্তভোগীর বাড়ি গিয়ে গালিগালাজ ও হুমকির অভিযোগ থানায় জিডি হয়েছে। পুলিশ তদন্ত করবে।
আরিফ উর রহমান টগর/কেএসআর