পেঁয়াজের বাড়তি ঝাঁজেও মুখে হাসি নেই চাষির

এন কে বি নয়ন এন কে বি নয়ন ফরিদপুর
প্রকাশিত: ০৯:৩৯ পিএম, ২৭ আগস্ট ২০২৩

সম্প্রতি ভারতসহ কয়েকটি দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপের পর থেকে ফরিদপুরের বিভিন্ন বাজারগুলোতে বাড়তে শুরু করেছে পেঁয়াজের দাম। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিমণ পেঁয়াজে ৫০০-৬০০ টাকা দাম বেড়েছে। তবে প্রান্তিক চাষিদের অভিযোগ, সংরক্ষণের অভাবে মৌসুমের শুরুতে পেঁয়াজ বিক্রি করে দেওয়ায় তারা বাড়তি লাভের মুখ দেখতে পারছেন না।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, পেঁয়াজ উৎপাদনের দিক দিয়ে সারা দেশের মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ফরিদপুর। চলতি বছরে জেলায় পাঁচ লাখ ২৯ হাজার ৯৩৮ মেট্রিক টন পেয়াজ উৎপাদিত হয়েছে। পেঁয়াজ পচনশীল মসলাজাতীয় পণ্য। এজন্য সারা বছর সংরক্ষণ পর্যায়ে ২৫-৩০ শতাংশ পেঁয়াজ পচে নষ্ট হয়ে যায়।

jagonews24

সরেজমিনে বিভিন্ন হাটে-বাজারে দেখা যায়, হাট-বাজারগুলোতে আগের মতো পেঁয়াজ বিক্রি করকে আসা কৃষকদের আনাগোনা নেই। গত কয়েক মাসের তুলনায় হাট-বাজারে পেঁয়াজের আমদানি কম। তবে গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিমণে ৫০০-৬০০ টাকা দাম বেড়েছে। যে পেঁয়াজ গত সপ্তাহে ২৪০০-২৫০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়, সে পেঁয়াজ বর্তমানে ২৮০০-৩০০০ টাকা মণ বিক্রি হচ্ছে। ভারতসহ কয়েকটি দেশের পেঁয়াজ আমদানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপের পরে খুচরা বাজারগুলোতে বাড়তে শুরু করেছে পেঁয়াজের দাম।

আরও পড়ুন: কেজি থেকে পোয়ায় নেমেছে পেঁয়াজ বেচাকেনা

কৃষি বিভাগ ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চলতি বছর সংরক্ষণের অভাবে মৌসুমের শুরুতে পেঁয়াজ বিক্রি করে দেওয়ায় চাষিদের ঘরে বা হাতে তেমন পরিমাণ পেঁয়াজ নেই। বর্তমানে এখন কৃষকদের ঘরে মাত্র ২০ শতাংশের মতো পেঁয়াজ মজুত রয়েছে। বাকি পেঁয়াজ আড়তদার, ব্যবসায়ী ও সিন্ডিকেটের কব্জায় বলে জানা গেছে।

jagonews24

সালথা উপজেলা সদর হাটে পেঁয়াজ বিক্রি করতে আসা কৃষক নিত্য সাহা জাগো নিউজকে বলেন, ‘এখন কৃষকের হাতে তেমন কোনো পেঁয়াজ নেই। কয়েকমাস আগে যা ছিল তা বিক্রি করে দিয়ে পাট চাষ ও পাট কাটার শ্রমিকদের মজুরি দিয়েছি। তখন এতো দাম পাইনি। ঘরে সাড়ে তিন মণের মতো পেঁয়াজ ছিল, সেগুলোই হাটে বিক্রি করতে এসেছি।’

বোয়ালমারীর সহস্রাইল বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি করতে আসা কালি কুমার মন্ডল জাগো নিউজকে বলেন, ‘এবার এ হাটই আমার পেঁয়াজ বিক্রি করার শেষ হাট। এবার কয়েকশ মণ পেঁয়াজ পেয়েছিলাম। শুরু ও মাঝামাঝিতে বেশিরভাগই বিক্রি করতে হয়েছে। ১০ মণের মতো ছিল। সেগুলো তিন হাজার টাকা মণ দরে আজ বিক্রি করে দিলাম।’

jagonews24

আরও পড়ুন: যেকোনো দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি: কৃষিমন্ত্রী

মধুখালী পেঁয়াজের বাজারে আড়তদার আলম ফকির জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা পদ্মা সেতু হয়ে ট্রাকযোগে ঢাকায় পেঁয়াজ পাঠিয়ে মণপ্রতি খরচ বাদে দেড়শ থেকে দুইশ টাকা লাভ করি। তবে এখন হাট-বাজারে পেঁয়াজের আমদানি কম। কৃষকদের ঘরেও তেমন পেঁয়াজ নেই।’

কথা হয় সালথা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুদর্শন শিকদারের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, জেলার ৯টি উপজেলার মধ্যে নগরকান্দা ও সালথা উপজেলায় সর্বাধিক পেয়াজ উৎপাদন হয়। তবে সম্প্রতি ভারতসহ কয়েকটি দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপের কারণে স্থানীয় বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে।

jagonews24

নগরকান্দা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তিলক কুমার ঘোষ জানান, চলতি বছর মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টি না হওয়ায় উৎপাদন কম হয়েছে। এছাড়া মাঠ থেকে পেঁয়াজ তোলার সময় অতিবৃষ্টি, শিলাবৃষ্টির কারণে অনেক পেঁয়াজ নষ্ট হয়েছে। এ কারণে গতবছরের তুলনায় এবার উৎপাদন কিছুটা কম হয়েছে।

আরও পড়ুন: পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্কারোপ ভারতের

তবে দাম বাড়া-কমা বা নির্ধারণ করার বিষয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কোনো হাত নেই বলে জানান ফরিদপুর কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. সোহেল শেখ। তবে নিয়মানুযায়ী তদারকি ও অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) কৃষিবিদ রকিবুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, আধুনিক পদ্ধতিতে পেঁয়াজ সংরক্ষণের জন্য ৬৫টি মডেল ঘর নির্মাণকাজ শুরু করেছে সরকার। তবে সঠিক সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় মডেল ঘরে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করতে পারেননি অনেক কৃষক। নির্মাণাধীন ঘরগুলো প্রস্তুত হলে আগামী বছর থেকে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা যাবে।

এন কে বি নয়ন/এসআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।