ফুলবাড়ী ট্র্যাজেডির ১৭ বছর

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি দিনাজপুর
প্রকাশিত: ১০:১০ এএম, ২৬ আগস্ট ২০২৩

দেশের সম্পদ রক্ষায় এককাট্টা ফুলবাড়ীর মানুষ। নিজের জীবন দিয়ে হলেও বিদেশি কোম্পানির গ্রাস থেকে রক্ষা করতে হবে তেল-গ্যাস। উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন করা যাবে না। এসব দাবি নিয়ে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে তৎকালীন বিডিআর ও পুলিশের গুলিতে নিহত হন আমিন, সালেকীন ও তরিকুল। আহত হন দু’শোর বেশি নারী-পুরুষ। সেই ঘটনার ১৭ বছর আজ।

২০০৬ সালের ২৬ আগস্টের সেই ভয়াবহ স্মৃতি এখনও বয়ে বেড়াচ্ছেন ভুক্তভোগীরা। সামান্য ক্ষতিপূরণ পেলেও পাননি সুবিচার। তাদের ৬ দফা দাবিও বাস্তবায়ন হয়নি। খোঁজ রাখেন না সেই সময়ের আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিরাও।

সেদিন আন্দোলন করতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ দক্ষিণ সাহাবাজপুরের প্রদীপ রায় ৩ বছর আগে মারা গেছেন। গুলিবিদ্ধ সুজাপুরের বাবলু রায়ও এখন শয্যাশায়ী।

আরও পড়ুন> উন্নয়নের নামে বিদেশি কোম্পানির পকেট ভারি হচ্ছে: আনু মুহাম্মদ

আন্দোলনে নিহত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তরিকুল ইসলামের বাবা সাবেক কাউন্সিলর মো. মোকলেছার রহমান বলেন, নেতাদের কথায় তখন মামলা করিনি। এখন মনে হচ্ছে মামলা করা উচিত ছিল। তাহলে হয়তো ছেলে হত্যার বিচার পেতাম। এখন বিচারের আশা ছেড়ে দিয়েছি।

নিহত আমিনের বাবা-মা আক্ষেপ করে বলেন, প্রতিবছর আপনারা আগস্ট মাসে আমাদেরকে কষ্ট দিতে আসেন। ১৭ বছরেও আমরা ছেলে হত্যার বিচার পেলাম না। সে সময় নেতারা আমাদেরকে বলেছিল মামলা করতে হবে না। সরকার মামলা করবে। কিন্তু সরকার মামলা করেনি। আমরা ভুল করেছি।

নিহত সালেকিনের মা শেফালী বেগম বলেন, আমি কিছু চাই না, আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই।

এদিকে, সেই কয়লা খনি আন্দোলনের পর সংগঠনের দুজন নেতা সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির অন্যতম নেতা আমিনুল ইসলাম বাবলু ২০০৮ সালে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন এবং সম্মিলিত পেশাজীবী সংগঠনের আহ্বায়ক মুরতুজা সরকার মানিক ২০১১ সাল থেকে পরপর দুইবার পৌর মেয়র নির্বাচিত হন। এরপর থেকে আন্দোলনকারী নেতাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। ফলে ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর খোঁজ রাখেন না কেউই।

সে সময় পাঁচ দিন ধরে উত্তাল বিক্ষোভ থামাতে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে বাধ্য হয়। ৩০ আগস্ট সন্ধ্যায় পার্বতীপুর উপজেলা পরিষদ অডিটরিয়ামে ৬ দফা সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সমঝোতা চুক্তিতে সরকারের পক্ষ স্বাক্ষর করেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের তৎকালীন মেয়র মিজানুর রহমান মিনু এবং আন্দোলনকারীদের পক্ষে স্বাক্ষর করেন তেল গ্যাস জাতীয় কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহম্মদ।

আরও পড়ুন>বামপন্থীদের জায়গা দখল করছে বিএনপি-জামায়াত

৬ দফা চুক্তির মধ্যে রয়েছে, এশিয়া এনার্জিকে ফুলবাড়ী ও দেশ থেকে বহিষ্কার, উন্মুক্ত পদ্ধতির কয়লাখনি ফুলবাড়ীসহ দেশের কোথাও না করা, পুলিশ-বিডিআরের গুলিতে নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া, আহতদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা, গুলিতে হতাহতের প্রকৃত কারণ উদঘাটনে তদন্ত কমিটি গঠন, শহীদদের স্মরণে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ। এশিয়া এনার্জির দালালদের গ্রেফতার ও শাস্তি প্রদান, আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মামলা প্রত্যাহার এবং নতুন করে মামলা না করা।

যদিও সেই ঘটনায় ২ মামলার আসামি হয়েছেন আন্দোলনকারীরা। যার মধ্যে ২০১৪ সালের ১০ অক্টোবর একশো কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ মামলা অপরটি ফৌজদারি মামলা। এসব মামলার বাদি এশিয়া এনার্জির মাঠ কর্মকর্তা সাইদুর রহমান। আন্দোলনকারী ১৯ জন নেতাকে আসামি করে মামলা করেন তিনি, যা আদালতে বিচারাধীন।

প্রতিবছর ২৬ আগস্ট দিনটিকে তেল গ্যাস জাতীয় কমিটি ‘সম্পদ রক্ষা দিবস’ এবং সম্মিলিত পেশাজীবী সংগঠন ‘ফুলবাড়ী শোক দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে। ভুক্তভোগীরা বলছেন, শুধু দিবস পালন করলে হবে না, ৬ দফা দাবি বাস্তবায়নে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে সংশ্লিষ্টদের।

এএমএইচএম/এসএনআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।