ফেসবুকে উপজেলা চেয়ারম্যান-পৌর মেয়রের ভিডিও যুদ্ধে থমথমে বিশ্বনাথ

ছামির মাহমুদ
ছামির মাহমুদ ছামির মাহমুদ সিলেট
প্রকাশিত: ০৭:০২ পিএম, ২৫ আগস্ট ২০২৩

অডিও শুনুন

প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেটের বিশ্বনাথে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে একে অপরের বিরুদ্ধে ‘বিক্রি ও চুরি’র অভিযোগে মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছেন উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা এসএম নুনু মিয়া এবং পৌরসভার মেয়র মুহিবুর রহমান। এসব বিষয় নিয়ে ফেসবুক ও ইউটিউবে লাইভে এসে উপজেলার এই দুই যুক্তরাজ্যপ্রবাসী শীর্ষ জনপ্রতিনিধি একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে বিষোদগারও করছেন।

তাদের এমন কাণ্ডে বিশ্বনাথের সর্বত্র এখন তোলপাড়। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সব জায়গায় বইছে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের আলোচিত এই দুই নেতার অনুসারীদের মধ্যে বিরাজ করছে চরম উত্তেজনা। যেকোনো সময় ওই দুই শীর্ষ জনপ্রতিনিধির কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সচেতন মহল।

জানা গেছে, বিশ্বনাথ উপজেলার দুই বারের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও পৌরসভার বর্তমান মেয়র মুহিবুর রহমান ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম নুনু মিয়ার মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার দাপট দেখানো নিয়ে রেষারেষি চলে আসছে। উপজেলার বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে কোনো অনিয়ম হলে সেখানে ছুটে গিয়ে মুহিবুর রহমান ভিডিও করে নানা বক্তব্যসহ নিজ ফেসবুক আইডি ও পেইজে আপ দিচ্ছেন।

এ নিয়ে প্রায় নীরবই ছিলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নুনু মিয়া। তবে গত মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) সিনিয়র চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তৃতীয় আদালতে মুহিবুর রহমানের অনুসারী উপজেলার খাজাঞ্চী ইউনিয়ন যুবলীগের সহসভাপতি জামাল আহমদ বাদী হয়ে এসএম নুনু মিয়া, তার ব্যক্তিগত সহকারী বিশ্বনাথ পৌরসভা আওয়ামী লীগের সদস্য দবির মিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা করেন।

সরকারি বরাদ্দের বাথরুমসহ ডিপ টিউবওয়েল (ওয়াশ ব্লক) ও কালভার্ট প্রদানের প্রলোভন দেখিয়ে ৪ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে এ মামলা দায়ের করা হয়। মামলাটি আদালত আমলে নিয়ে ঘটনাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য পুলিশের এএসপিকে (বিশ্বনাথ সার্কেল) নির্দেশ দেন।

এই মামলায় ক্ষেপে যান উপজেলা চেয়ারম্যান নুনু মিয়া। এতে পৌরসভার মেয়র মুহিবুর রহমানকে সতর্ক করে গতাকল বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) একটি ভিডিও ফেসবুকে পোস্ট করেন এসএম নুনু মিয়া।

jagonews24

ভাইরাল হওয়া সেই ভিডিওতে নুনু মিয়াকে আঙুল উঁচিয়ে বলতে শোনা যায়, ‘আমি আমার মায়ের কসম দিয়ে বলছি, মুহিবুর রহমান সাবধান, এতোদিন আমি শুধু অবজার্ভ করেছি ও ধৈর্য্য ধরেছি। তোমার নাড়িভুড়ি আমার হাতে। আমি যদি শুরু করি, বৈরাগী থেকে বিশ্বনাথ, বিশ্বনাথ থেকে উপশহর, উপশহর থেকে ঢাকা কোন জায়গায় তুমি কী করেছো সবগুলো আমি জানি। আর যদি আমার বিশ্বনাথের সাধারণ কোনো মানুষকে খারাপ ভাষায় কথা বলো, তাহলে আমি তাদের পাশে থাকবো। সাবধান করে দিলাম মুখ সামলিয়ে কথা বলবে। গম চুরির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত তুমি (মুহিবুর রহমান) আর আমাকে চোর বলবা একথা আমি মেনে নেবো না। তোমাকে সতর্ক করে দিতে চাই, সহ্য অনেক করেছি। তুমি মুহিবুর রহমান কী আমি জানি না? অসুস্থ সারাদিন থাকো আমি জানি না, রাতেওতো থাকো, অসুস্থ সারাদিন থাকো। এখনো সময় আছে, তুমি যা চিন্তা ভাবনা করতেছ বিশ্বনাথকে নিয়ে আমি আবার সুস্পষ্ট করে বলতে চাই, যা করেছো তা করেছো আর বেশি বাড়াবাড়ি করবে না। আমি আমার আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনকে সঙ্গে নিয়ে তোমার বিরুদ্ধে পৌর মেয়রের সকল অন্যায়ের মোকাবিলা করবো। আজ আমার বক্তব্যের পরে তুমি যদি তোমার সকল বক্তব্য প্রত্যাহার না করো, তাহলে কত ধানে কতো চাল তা তোমাকে (মেয়র) বুঝিয়ে দেবো।’

এর আগে গত বুধবার (২৩ আগস্ট) চেয়ারম্যান নুনু মিয়াকে ‘চোর’ আখ্যায়িত করে ‘নুনু চুরার (চেয়ারম্যান) টিউবওয়েল বাণিজ্য। পিস্তল উঁচিয়ে হত্যার হুমকি, সিলেট জুডিসিয়াল কোর্টে মামলা (পর্ব ১)’ শিরোনামে ভুক্তভোগি ও মামলার বাদীকে সঙ্গে নিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যানের অনিয়মের বিষয়ে ফেসবুকে ভিডিও পোস্ট করেন মেয়র মুহিবুর রহমান।

ভিডিওতে মেয়র মুহিবুর রহমান বলেন, ‘প্রবাসীরা দেশে এসে নির্বাচন করেন, তাদেরকেও মানুষ সহজে গ্রহণ করে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেন। প্রবাস থেকে যারা এসে জনপ্রতিনিধি হন তাদের একটা গুণাবলি থাকে যে, প্রবাসীরা ঘুষ-দুর্নীতির ঊর্ধ্বে থাকে। কিন্তু এর ব্যতিক্রম শুধু বিশ্বনাথের নুনু মিয়া। উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে এতো দুর্নীতির কথা উঠলেও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নুনুর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।’

মেয়র মুহিব বলেন, ‘এতোসব অন্যায় ও দুর্নীতির প্রমাণ আমার কাছে আছে, আর আমি তা উপর মহলে পাঠিয়েছি। কিন্তু মেয়র হিসেবে জনগণকে সচেতন করা ছাড়া আমার কিছু করার নাই। তাই আমি এইসব অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে জনসাধারণকে অবহিত করেই যাচ্ছি। আর সেটা নির্ভয়ে করে যেতে চাই। কারণ আর যাতে বিশ্বনাথের জনগণ প্রতারিত না হন।’

এছাড়া সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে পৌর মেয়র মুহিবুর রহমান নিজের বক্তব্যে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নুনু মিয়াকে ‘চোর’ আখ্যায়িত করে তাকে রুখে দেওয়ার হুমকি দেন এবং এলাকার মানুষকে তার সঙ্গে থাকার আহ্বান জানান।

এসব বিষয়ে বিশ্বনাথ উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম নুনু মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, বিশ্বনাথ একটি প্রবাসী অধ্যুষিত উপজেলা। বিগত তিন-চার বছরে আমি অনেক প্রবাসীকে দেশে বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত করেছি। হঠাৎ একজন মাতাল জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েই বিশ্বনাথকে অশান্ত করছেন। উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের গালমন্দ করছেন। সবকিছু আমি আইনিভাবে মোকাবিলা করবো ইনশাআল্লাহ।

২০২২ সালের নভেম্বরে সিলেটের বিশ্বানাথে পৌরসভা নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দিতা করে প্রথম পৌর মেয়র নির্বাচিত হন সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা ও দুইবারের উপজেলা চেয়ারম্যান মুহিবুর রহমান। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী ফারুক আহমদ।

এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।